বছরের শুরুতেই পাঠ্য বই হাতে পাওয়া একসময় অকল্পনীয় বিষয় ছিল। তখনো সরকার বই ছাপাত। কিন্তু সেই বই পেতে পেতে মার্চ-এপ্রিল পেরিয়ে যেত। তাও সব বই সব স্কুলে পৌঁছাত কি না সন্দেহ। বিনা মূল্যের প্রচুর বই খোলাবাজারে পাওয়া যেত। বেশি দাম দিয়ে সেগুলো কিনতে হতো। তত দিনে অনেকেই ওপরের ক্লাসের ছাত্রদের কাছ থেকে পুরনো বই কিনে বা জোগাড় করে নিত। এখন বছরের প্রথম দিনেই সরকারি বই পাওয়া যায়। শিক্ষার্থীদের জন্য এর চেয়ে আনন্দের বিষয় আর কী হতে পারে! শিক্ষা খাতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের সবচেয়ে বড় সাফল্য এটি।
এবার সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থীর হাতে বিনা মূল্যে প্রায় ৩৫ কোটি বই তুলে দেওয়া হয়েছে। এসবের মধ্যে ১১ কোটি প্রাথমিকের এবং ২৪ কোটি মাধ্যমিকের বই। সরকারের এ সাফল্যের অন্যতম রূপায়ণকারী বিভিন্ন প্রকাশনা ও মুদ্রণ সংস্থা। প্রাথমিকের বইয়ের একটি অংশ বিদেশি মুদ্রণ সংস্থা ছেপে থাকে। বাস্তবতা ও সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে অর্থায়নকারী সংস্থার (বিশ্বব্যাংক) শর্তের কারণে বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে ছাপার কাজে সংশ্লিষ্ট করা হয়েছিল। ছাপার মোট খরচের ৯ শতাংশ দিত বিশ্বব্যাংক। ২০১৮ সালে তাদের অর্থায়ন বন্ধ হয়েছে। ২০১৯ সালের বই আগের আয়োজনেই ছাপা হয়েছে। ২০২০ সালের বই পুরো সরকারি উদ্যোগে ছাপা হবে। কথা ছিল, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ হওয়ার পর ছাপার কাজ স্থানীয় দরপত্রে বণ্টন করার; কিন্তু আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান এখনো বন্ধ হয়নি। ফলে ২০২০ শিক্ষাবর্ষের বই ছাপতে প্রায় শতকোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হবে।
সংশ্লিষ্ট দেশি সংস্থাগুলো বলছে, তাদের শতভাগ সামর্থ্য রয়েছে উন্নতমান নিশ্চিত করে প্রাথমিকের বই প্রকাশ করার। কিন্তু সরকার ও এনসিটিবি আগের অবস্থানেই রয়ে গেছে। বাংলাদেশে এখন মানসম্পন্ন কাগজ উৎপাদিত হয়। ওই সব কাগজ বিদেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে। তাহলে সম্পূর্ণ স্থানীয় দরপত্রে বই ছাপার ব্যবস্থা করতে বাধা কোথায়? তাদের এ কথায় যুক্তি আছে। আবার এটাও মনে রাখা দরকার, বিদেশি মুদ্রক-প্রকাশকদের ছাপার কাজে যুক্ত করার পেছনে যুক্তি ছিল। কিছু দেশি মুদ্রণ সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তারা যথাসময়ে মানসম্পন্ন কাগজে বই সরবরাহ করে না। তখন তাদের সামর্থ্যরেও অভাব ছিল। সে অবস্থা এখন নেই।
দেশি মুদ্রক-প্রকাশকদের দাবি আমলযোগ্য। তবে তাদের নীতিনিষ্ঠ হতে হবে। দেশি কাগজ ও মুদ্রণশিল্প আগের চেয়ে উন্নত; তাদের সামর্থ্যও বেড়েছে। মুদ্রণ-সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতা নিশ্চিত করে পুরো দেশি আয়োজনেই প্রাথমিকের পাঠ্যপুস্তক ছাপানোর ব্যবস্থা করা উচিত বলে আমরা মনে করি।