সরকার এবার চলতি বোরো মৌসুমে ৬ লাখ ৫০ হাজার টন ধান, আতপ ও সিদ্ধ মিলিয়ে ১১ লাখ ৫০ হাজার টন চাল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে ৪০ টাকা কেজি দরে ১০ লাখ টন সিদ্ধ চাল, ৩৯ টাকা কেজি দরে ১ লাখ ৫০ হাজার টন আতপ চাল এবং ২৭ টাকা কেজি দরে ৬ লাখ ৫০ হাজার টন ধান কেনা হবে। ২৮ এপ্রিল থেকে ধান কেনা শুরু হয়েছে এবং চাল কেনা হবে ৭ মে থেকে। শেষ হবে ৩১ আগস্ট। সরকার গত বোরো মৌসুমে ৬ লাখ টন ধান এবং ১১ লাখ টন চাল সংগ্রহ করেছিল। উল্লেখ্য, এবার ধান চালের দাম বাড়ানো হয়েছে, যাতে কৃষক উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম পায়। অন্যদিকে ৩০ এপ্রিলের পর বেসরকারী উদ্যোগে চাল আমদানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর ফলেও কৃষকের ধান চালের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত হতে পারে। তবে যাই করা হোক না কেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা যেন সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান চাল কেনেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। এ নিয়ে যাতে কোন দুর্নীতি-অনিয়ম কিংবা নয়ছয় না হয়, তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের।
করোনাকালীন দুঃসময়েও মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উদয়াস্ত পরিশ্রম করে বোরোর বাম্পার ফলনের কৃতিত্বের অধিকারী হয়েছেন তারা। সরকার অবশ্য সবরকম ভর্তুকি ও প্রণোদনা নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। দলীয় নেতাকর্মী ও হারভেস্টার দিয়ে প্রকৃতির ভ্রƒকুটিকে উপেক্ষা করে যথাসময়ে ধান কেটে গোলাজাত করতে সাহায্য করেছে। ধান-চালের সংগ্রহমূল্য বাড়িয়ে দিয়ে সহায়তা করেছে কৃষককে, যাতে তারা লাভবান হতে পারেন। ধানচাল বেচাকেনার মাঠ পর্যায়ের খবর হলো কৃষক এবার খুশি। গত জাতীয় বাজেটে কৃষিখাতে যথেষ্ট ভর্তুকি, প্রণোদনা ও সহায়ক কর্মসূচী রাখা হয়েছে, যাতে কৃষকসহ গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি খামারি, ফুলফল-সবজি উৎপাদক- প্রায় সবাই উপকৃত হয় কমবেশি।
ইতোপূর্বে করোনাভাইরাসজনিত মহামারীর কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দায় বিশ্ব ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ ও বিশ্ব খাদ্য সংস্থা। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচীর (ডব্লিউএফপি) বলছে, অন্তত ৩৬টি দেশ, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও লাতিন আমেরিকার দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা, যদি সময়োচিত যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা না যায়। তবে আশার কথা এই যে, বাংলাদেশ এদিক থেকে রয়েছে সন্তোষজনক অবস্থানে। দেশ বর্তমানে খাদ্য বিশেষ করে ধান-চাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। খাদ্য মজুদও সন্তোষজনক। তদুপরি বোরোর বাম্পার ফলন। খাদ্য মজুদের লক্ষ্যে সরকার এবার ১৮ লাখ টন খাদ্য সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনে। গত বছর কেনা হয়েছিল ১৭ লাখ টন। ফলে খাদ্য সঙ্কটের সম্ভাবনা নেই দেশে। করোনা সঙ্কট মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী সর্বাগ্রে জোর দিয়েছেন খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর।