কাজিরবাজার ডেস্ক :
বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোতে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন পুলিশের সদস্যরা। বিগত কয়েক বছর ধরেই দূতাবাসগুলোতে প্রেষণে পুলিশ সদস্যদের নিয়োগ দেওয়ার দাবি তোলা হচ্ছিল। এবারের পুলিশ সপ্তাহের প্রথমদিন সোমবার (৪ ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রীর কাছে পুলিশের পক্ষ থেকে এই দাবি পুনরায় তোলা হয়। মঙ্গলবার (ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে সম্মতি দেন। কীভাবে এই নিয়োগ দেওয়া হবে, তা নির্ধারণে এখন জোর তৎপরতা চালাবে পুলিশ সদর দফতর।
পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (সংস্থাপন) হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এটা খুবই ভালো একটি বিষয়। প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। এখন বিষয়টি পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করা হবে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের ৬০টির বেশি দূতাবাস ও মিশন রয়েছে। কোনও কোনও দেশে দূতাবাসের কার্যক্রম রয়েছে একাধিক শহরে। এসব দূতাবাস ও মিশনে অ্যাম্বাসেডর বা হাইকমিশনারের অধীনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি অ্যাডমিন বা ইকোনোমিক ক্যাডারসহ বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদের প্রেষণে নিয়োগ দেওয়া হয়। পুলিশ সদস্যদের পক্ষ থেকেও প্রতিটি দূতাবাস বা মিশনে একজন করে সদস্য নিয়োগ দেওয়ার দাবি তোলা হচ্ছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতেই প্রধানমন্ত্রী বিষয়টিতে এবার সম্মতি দিয়েছেন।
জানা গেছে, পুলিশ সপ্তাহ-২০১৯ উপলক্ষে সোমবার প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব কর্মকর্তাদের বিশেষ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বাংলাদেশে অবস্থিত বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে পুলিশ কর্মকর্তা থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেন উপমহাপরিদর্শক (হাইওয়ে) আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি নাগরিকরা বসবাস করছেন। তাদের পাঠানো রেমিটেন্স দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। তবে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিভিন্ন সময় নানা ধরনের আইনগত সমস্যায় পড়েন। এর বাইরে বিদেশে বসে কিছু বাংলাদেশি নাগরিক দেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। অপরাধের বহুমাত্রিকতার কারণে বিদেশে বসে সাইবার ক্রাইম সংগঠিত করছে অনেক অপরাধী। একের পর এক মানি লন্ডারিংয়ের ঘটনায় দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আবার প্রবাসীরা পুলিশ ক্লিয়ারেন্স এবং পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের জন্য প্রায়ই নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এক্ষেত্রে দূতাবাস ও হাইকমিশনগুলোতে পুলিশ সদস্যদের ডেপুটেশনে রাখা হলে প্রবাসীরা উপকৃত হবেন, রাষ্ট্রও উপকৃত হবে।’
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মঙ্গলবার দুপুরে ঊর্ধ্বতন পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘বিদেশি দূতাবাসগুলোতে আমি একজন করে অফিসার দেওয়ার কথা বলেছিলাম। আমার ধারণা ছিল যে অফিসারটা আমাদের এসবি থেকে যাবে, অর্থাৎ পুলিশ থেকেই যাবে। কিন্তু পাঠানোর সময় পাঠানো হলো সব প্রশাসন থেকে। এটা কেন করা হলো, আমি জানি না। এখানে আমাদের সচিবসহ সবাই আছেন। আমি যেটা মনে করে বলেছিলাম, একটা লোক বিদেশে থাকে তার পাসপোর্টটা দিতে হবে সেখানে। তার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ আছে কিনা বা এই তথ্যগুলি কে দিতে পারবে এটা পুলিশ বা এসবির লোক দিতে পারবে।’
পুলিশের একজন ডিআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তা বলেন, ‘দূতাবাস বা মিশনগুলোতে সহকারী পুলিশ সুপার থেকে পুলিশ সুপার পদমর্যাদা পর্যন্ত কর্মকর্তাদের প্রেষণে পাঠানো হতে পারে। কারণ, দূতাবাসে যে ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে তাতে পুলিশ সুপারের উপরের পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়াটা সমীচীন হবে না।’
তবে একই পদমর্যাদার আরেক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘দূতাবাসের কার্যক্রম বিবেচনা করে সেখানে যুগ্ম সচিব বা সহকারী সচিব পদমর্যাদার লোক প্রয়োজন, সেখানে সেই পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হবে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দূতাবাসগুলোতে অ্যাম্বাসেডর বা হাইকমিশনারের নিচে মিনিস্টার, কনস্যুলার প্রথম সেক্রেটারি, দ্বিতীয় সেক্রেটারি ও তৃতীয় সেক্রেটারি পদমর্যাদার লোকজন থাকে। এছাড়া কনস্যুলার সার্ভিস, ইনফরমেশন বা লেবার কাউন্সিলর পদেও লোকজন নিয়োগ দেওয়া হয়। দূতাবাস বা মিশনে অ্যাম্বাসেডরের নিচেই সাধারণত পররাষ্ট্র ক্যাডারের লোকজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর বাইরে অন্যান্য পদের কোনও একটিতে পুলিশ সদস্যদের নিয়োগ দেওয়া হতে পারে।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, বিদেশি দূতাবাসে পুলিশ সদস্যরা নিয়োগ পেলে পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনসহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে থাকা বাংলাদেশিদের নানা রকম আইনি জটিলতার সমাধান, কেউ হতাহত হলে সেসব সমস্যার আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করাসহ পলাতক সন্ত্রাসী বা বিদেশে থেকে অপরাধের সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীদের শনাক্ত করতে পুলিশ সদর দফতরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ সহজ হবে।