চাকরির আবেদনে প্রার্থীদের পকেট কাটা বন্ধ হোক

10

 

সবকিছুতেই দুঃখজনক দায়িত্বহীনতা, সমন্বয়হীনতা এবং স্বেচ্ছাচারিতা। একজন শিক্ষিত তরুণকে একটা সরকারি চাকরির আবেদন করতেই গুনতে হচ্ছে অযৌক্তিক অঙ্কের টাকা। বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত, আধাসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বিভাগ এবং বেসরকারি সংস্থায় এই অঙ্ক নিষ্ঠুরতার পর্যায়ে পৌঁছানো লাগামছাড়া। বিসিএস পরীক্ষার আবেদন ফি ৭০০ টাকা। মেট্রোরেলে এইচএসসি পাস যোগ্যতার ১৬তম গ্রেডের একটা চাকরিতে আবেদনের জন্য হাজার টাকার ব্যাংক ড্রাফট চাওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৫ সালে ব্যাংকে চাকরির আবেদনে কোনো ফি না নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে ২০১৯ সালে আবার ২০০ টাকা ফি নির্ধারণ করে দেয়। যেসব তরুণের এখনো আয়ের পথই খোলেনি, তাদের পকেট কাটার এসব রাস্তা তৈরি করে রাখা হয়েছে। সরকারের এতটা দেউলিয়াত্ব মেনে নেওয়া যায় না। প্রকাশিত খবরের তথ্যে দেশে বেকারের সংখ্যা প্রায় ২৬ লাখ। এর মধ্যে তরুণ ২১ লাখ; উচ্চশিক্ষিত ৮ লাখ। সর্বশেষ ৪৬তম বিসিএস পরীক্ষায় ১ হাজার ১৪০টি পদের জন্য আবেদন জমা পড়ে ৩ লাখ ৩৮ হাজার। আবেদন-ফি হিসেবে সরকারের আয় হয় প্রায় ২৪ কোটি টাকা। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের প্রতিটি পরীক্ষায় আবেদন-ফি থেকেই আয় হয় ৪০ থেকে ৪৫ কোটি টাকা। এভাবে সরকার নাকি বছরে কয়েক শ কোটি টাকা আয় করে। অথচ আবেদন-ফি অনেক তরুণের কাছে রীতিমতো গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়। চাকরির আবেদন করতেই কারোবা মাসে দুই-তিন হাজার টাকা পর্যন্ত গুনতে হয়। এ টাকা তারা কোথায় পাবে? অনেকেই টিউশন থেকে, কেউ কেউ দিনে একবেলা উপোস করে এ টাকা জোগাড় করে। অন্যদিকে সরকারি চাকরিতে ঢোকার বয়স বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আসছে তরুণ সমাজ। জুলাই বিপ্লবের পর নতুন বাংলাদেশে যখন রাষ্ট্র সংস্কারের সাজ সাজ রব চারদিকে, উল্লিখিত বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা দরকার। নিয়োগ প্রক্রিয়াও দাবি করে সংস্কার। অন্তর্র্বর্তী সরকার চাকরির আবেদন ফি মওকুফ অথবা ন্যূনতম যৌক্তিক অঙ্কে নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেবে আশা করি। এক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতার দায়িত্বহীনতা দূর করার ব্যবস্থাও নেওয়া হোক।