বর্তমান সরকারের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষ্যে রোববার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি ভাষণ দেবেন, এ ঘোষণা শোনার পর সমগ্র জাতি অধীর অপেক্ষায় সময় গুনছিল। বর্তমান সরকার এ যাবৎ কী করেছে, আগামীর পরিকল্পনা কী, নির্বাচনই বা কবে হবে-এসব প্রশ্নের উত্তর চাচ্ছিল জাতি। প্রধান উপদেষ্টা তার আধঘণ্টার ভাষণে বিস্তারিতভাবেই এসব অনুসন্ধিৎসার মীমাংসা করেছেন। তিনি গত ১০০ দিনে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের প্রসঙ্গ টেনে তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা বাংলাদেশের প্রতি যে আস্থা দেখিয়েছে এবং সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে, সেসব কথাও বলেছেন তিনি। তবে ভাষণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি ছিল সংস্কার সম্পর্কিত। বলেছেন, সংস্কার হয়ে গেলে খুব দ্রæতই নির্বাচনের রোডম্যাপ দেওয়া হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যেই সংস্কার কমিশনগুলো তাদের সুপারিশমালা সরকারের কাছে পেশ করতে পারবে। তাদের সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ক্রমাগতভাবে আলোচনায় বসা হবে। নির্বাচন কমিশনের সংস্কার খুব জরুরি বলেছেন তিনি। এই কমিশনের কোন কোন অংশ সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, তার ভিত্তিতে নির্বাচনি আইন সংশোধন করা হবে। প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় সম্পর্কে কিছু বলেননি সত্য; কিন্তু সংস্কার হয়ে গেলেই যে নির্বাচন হবে, তা স্পষ্ট করেছেন। এখন দেখার বিষয়, সংস্কার কার্যক্রম কবে নাগাদ শেষ হয়। প্রধান উপদেষ্টা এমন অঙ্গীকারও করেছেন, সংঘটিত সব হত্যার বিচার নিশ্চিত করা হবে। ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফেরত চাওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পর দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি কেমন হতে পারে তার একটি আভাস পাওয়া গেছে। আশান্বিত হওয়ার অনেক কিছুই আছে তার ভাষণে। তবে এটা ঠিক, নির্বাচন ঠিক কবে হবে, এ নিয়ে জাতি কোনো সুস্পষ্ট ধারণা পায়নি। বলার অপেক্ষা রাখে না, অন্তর্র্বর্তী সরকার কোনো স্থায়ী সরকার নয়। দলীয় সরকারও পাঁচ বছরের বেশি স্থায়ী হয় না, যদি না দলটি পরবর্তী নির্বাচনেও বিজয়ী হয়। বর্তমান সরকার যেহেতু একটি রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এসেছে এবং এসেছে সংস্কারের অঙ্গীকার নিয়ে, তাই আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, দ্রæত সংস্কারগুলো সম্পন্ন করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে বিজয়ী দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। দেশের সাধারণ মানুষ পরপর তিনটি নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি। তারা পছন্দের দলকে ভোট দেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে। রাজনৈতিক দলগুলোও চাচ্ছে যৌক্তিক সময়ের মধ্যেই নির্বাচনে অংশ নিতে।
বর্তমান সরকারকে আমরা সবাই সহযোগিতা করে যাচ্ছি। আমাদের এই সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। তবে সাধারণ মানুষ যেসব সমস্যায় ভুগছে, সেগুলোর প্রতি সরকারকে মনোযোগী হতে হবে। দ্রব্যমূল্য, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, জনস্বাস্থ্য ইত্যাদি ক্ষেত্র খুব নাজুক অবস্থার মধ্যে রয়েছে। সরকারের উচিত হবে, এসব ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করে দেশবাসীকে সরকারের প্রতি আরও আস্থাশীল করে তোলা।