অন্তর্র্বর্তী সরকারের ১০০ দিন জনপ্রত্যাশা পূরণ হোক

1

বাংলাদেশের রাজনীতি এক চরম দুঃসময় পার করে এসেছে। এর বড় কারণ হচ্ছে রাজনীতিতে অর্থ আর পেশিশক্তির ক্রমবর্ধমান প্রভাব। রাজনীতিতে আদর্শ, জনকল্যাণ, আত্মত্যাগ ও নৈতিকতা ক্রমেই দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়েছে। দেড় দশক ধরে রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন স্তরে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের এক চরম অবক্ষয় পরিলক্ষিত হয়েছে।
দেড় দশকের ধারাবাহিক অপশাসনের পরিপ্রেক্ষিতে জনমনে ক্ষোভ পুঞ্জীভ‚ত হতে থাকে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ও দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্র্বর্তী সরকার। সরকারের ১০০ দিন পূর্তি হয়েছে।
অন্তর্র্বর্তী সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক। ব্রাসেলসভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রæপ ‘বাংলাদেশে নতুন যুগ? সংস্কারের প্রথম ১০০ দিন’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বিশ্বব্যাপী আগাম সতর্কতামূলক পরামর্শ দেওয়া প্রতিষ্ঠানটি কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশ পরিস্থিতিতে নিবিড় দৃষ্টি রাখছে। ক্রাইসিস গ্রæপের মায়ানমার ও বাংলাদেশ বিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরামর্শক থমাস কিয়ান বলেছেন, “বাংলাদেশের নতুন অন্তর্র্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব দিতে মুহাম্মদ ইউনূস শপথ নেওয়ার ১০০ দিন পর দেশটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁকে এসে দাঁড়িয়েছে।
অন্তর্র্বর্তী সরকারের শাসনব্যবস্থার উন্নতি করার এবং আরেকটি স্বৈরাচারী সরকারের উত্থান ঠেকানোর এমন সুযোগ ‘এক প্রজন্মে একবারই’ আসে। কিন্তু কাজের পরিমাণ বিশাল, বিশেষ করে অন্তর্র্বর্তী সরকারকে সামরিক বাহিনী এবং সুধীসমাজসহ মূল রাজনৈতিক পক্ষগুলোর সঙ্গে এক ধরনের রাজনৈতিক ঐকমত্য বজায় রাখতে হবে। ক্রাইসিস গ্রæপ মনে করে, শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের পর শাসনব্যবস্থার উন্নতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করার এক প্রজন্মে একবার আসে এমন সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ, যা আরেকটি স্বৈরাচারী সরকারের উত্থানের পথ বন্ধ করতে পারে। যদি এই অন্তর্র্বর্তী সরকার হোঁচট খায়, তবে দেশটি আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারে অথবা এমনকি সামরিক শাসনের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরো উচ্চাকাক্সক্ষী সংস্কারের জন্য জনসমর্থন ধরে রাখতে দ্রæত ফল দৃশ্যমান করা অন্তর্র্বর্তী সরকারের লক্ষ্য হওয়া উচিত।
এই সরকারের অনেক বেশি সময় ক্ষমতায় থাকাটা এড়ানো উচিত এবং নতুন পদক্ষেপের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য গড়ে তুলতে হবে। ক্রাইসিস গ্রæপের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, এখন পর্যন্ত ইউনূস ও তাঁর সহকর্মীদের প্রতি ব্যাপক সমর্থন রয়েছে। কিন্তু জনপ্রত্যাশার ভালো-খারাপ দুই ধরনের পরিণতিই রয়েছে। যদি সংস্কার আনতে অন্তর্র্বর্তী সরকার হোঁচট খায়, সম্ভবত এর পরিণতি দাঁড়াতে পারে সামান্য অগ্রগতিসহ একটি আগাম নির্বাচন; সবচেয়ে খারাপ দৃশ্যপটে, সামরিক বাহিনী ক্ষমতা গ্রহণ করতে পারে। ক্রাইসিস গ্রæপের গবেষণা প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ‘অনিশ্চয়তায় অর্থনীতি আরো ধাক্কা খেয়েছে।’ ক্রাইসিস গ্রæপ মনে করে, ‘আকাশচুম্বী জনপ্রত্যাশা সামলানোই বড় চ্যালেঞ্জিং।’ চ্যালেঞ্জ আরো আছে। অন্তর্র্বর্তী সরকার যত বেশি সময় ক্ষমতায় থাকতে চাইবে, আগাম নির্বাচনের দাবি তত জোরদার হবে এবং সরকারের বৈধতা নিয়ে আরো বেশি সন্দেহ দেখা দেবে।
সরকারের সামনে এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে। দূর করতে হবে অস্থিরতা। দুর্নীতি দূর করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এর পরও ক্রাইসিস গ্রæপ আশাবাদী। কারণ যদিও চ্যালেঞ্জ প্রচুর, তবু হাসিনা সরকারের বিদায়ে গঠিত অন্তর্র্বর্তী সরকার বাংলাদেশের সামনে অভ‚তপূর্ব এক সুযোগ নিয়ে এসেছে। সবার আন্তরিক চেষ্টায় একটি কল্যাণমুখী বাংলাদেশ রাষ্ট্র বিশ্বে নতুন করে পরিচিত হবে, এটিই আমাদের প্রত্যাশা।