রমজানে স্থিতিশীল বাজার হোক

79

দেশের ভোক্তাসাধারণের মধ্যে রমজানের যে ছবিটি স্থায়ী হয়ে আছে, তা খুব একটা সুখকর নয়। চিত্রটি এ রকম যে প্রতিবছর রোজার আগে থেকেই দেশের বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকে। কখনো কখনো বাজারদর সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত দুর্বল। আর এর সুযোগ নিয়ে একটি অসাধু ব্যবসায়ীচক্র প্রতিবছর বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেয় অনেকটা প্রতিযোগিতামূলকভাবে। অনেক সময় এমনও দেখা গেছে, বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে জিনিপত্রের দাম বাড়ানো হয়েছে। পুরনো আশঙ্কা নতুন করে দেখা দিয়েছে। রোজার মাস সামনে রেখে এখন থেকেই রমজানের ভোগ্যপণ্য বাজারে আসতে শুরু করেছে। চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে সাতটি জাহাজে ছোলা, মটরডাল, ভুট্টা, চিনি ও ভোজ্য তেলসহ পাঁচ লাখ টন রমজানের ভোগ্যপণ্য রয়েছে। পবিত্র রমজান মাস আসতে এখনো প্রায় মাস দুয়েক বাকি। এত আগেই রমজানের ভোগ্যপণ্য নিয়ে আসার কারণও জানিয়েছেন আমদানিকারকরা। ধারণা করা হচ্ছে, ব্যবসায়ীরা ধাপে ধাপে পণ্য আনতে শুরু করেছেন। অবশ্য আগেভাগে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের যুক্তি হচ্ছে, বন্দরে জাহাজজটের ঝুঁকি এড়ানো এবং আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির আগেই তাঁরা পণ্য আনতে শুরু করেছেন। এতে রোজার সময় বাজারে কোনো অস্থিরতা থাকবে না। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বন্দরে জাহাজজট, লাইটার জাহাজ সংকট কাটিয়ে কর্ণফুলী নদীর বিভিন্ন ঘাটে অরাজকতা বন্ধ করা, ডলারের লাগাম টানা এবং ব্যাংকঋণের সুদহার ঠিক রাখা—এই চারটি বিষয়ে নজরদারি করা গেলে রোজায় বাজার অস্থির হবে না।
সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও রমজানের বাজার নিয়ে ভাবতে হবে। পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রতিবছরের মতো খোলাবাজারে ন্যায্য মূল্যে পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা আগে থেকেই নিতে হবে। টিসিবিকে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সক্রিয় করা গেলে তৃণমূলের ভোক্তাসাধারণ উপকৃত হবে। ব্যবসায়ীদের সমান্তরালে একটি বাজার ব্যবস্থা গড়ে তোলা গেলে কোনো সিন্ডিকেট বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টির কোনো সুযোগ পাবে না। এসব দিকে দৃষ্টি দিয়ে বাজার ব্যবস্থাপনায় জোর দেওয়া ও কড়া নজরদারির ব্যবস্থা করলে বাজারে কোনো কৃত্রিম সংকট দেখা দেবে না। আমরা আশা করব, সব ধরনের সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে রমজানে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাজার স্থিতিশীল থাকলে জনজীবনে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।