প্রবাসীদের নিরাপত্তা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি

19

 

আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার অন্যতম উৎস প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ। এ রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখছে। পরিতাপের বিষয়, প্রবাসী শ্রমিকরা নানা কষ্ট সহ্য করে উপার্জিত অর্থ দেশে পাঠালেও সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতায় যথাযথ পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়। এ সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে মানব পাচারকারীরা। জানা যায়, বিদেশে পাড়ি জমিয়ে অনেকে ভয়ংকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হচ্ছেন। কেউ বাধ্য হচ্ছেন পতিতাবৃত্তিতে, কেউ কাজ না পেয়ে ঘুরছেন রাস্তায়, কেউ বিনা অনুমতিতে প্রবাসে অবস্থান করতে গিয়ে কারাগারে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কাউকে আবার জিম্মি করে নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে নেওয়া হচ্ছে মুক্তিপণ। অনেকে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে বিদেশে গিয়ে পাচ্ছেন না প্রতিশ্রæত কাজ। অভিযোগ রয়েছে, এসব ঘটনায় মানব পাচার প্রতিরোধ আইনে মামলা হলেও ৯৫ শতাংশ আসামিই খালাস পেয়ে ফের জড়ান পুরোনো অপরাধে। ফলে মানব পাচারের অপরাধ বেড়েই চলছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তদন্তে ত্রæটি-গাফিলতি, ধীরগতি ও বিচারে দীর্ঘসূত্রতাই আসামি খালাসের মূল কারণ। তাছাড়া আদালতের বাইরে দুপক্ষের আপস-মীমাংসার কারণে অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। কারণ দীর্ঘদিন প্রবাসে থেকে দেশে ফিরে মামলা পরিচালনার মতো মানসিক অবস্থা এবং আর্থিক সংগতি অধিকাংশ বাদীর থাকে না।
আমরা মনে করি, এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থায় অধিক মনোযোগী হতে হবে। পাশাপাশি সমাজের সব পর্যায়ে এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। ভুক্তভোগীদের দায়েরকৃত মামলা তদন্তের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত পাচারে জড়িত ব্যক্তির প্রকৃত পরিচয়ের পাশাপাশি পাচারের রুটসহ বিভিন্ন বিষয়ে অনুসন্ধান করা, বিচারে দীর্ঘসূত্রতা পরিহার করা। আদালতে দেশের বাইরে সংঘটিত অপরাধ প্রমাণের ক্ষেত্রে দূতাবাসগুলোকে সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে হবে। সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপনের স্বার্থে প্রবাসীদের প্রয়োজনীয় সব তথ্য ডিজিটালাইজড করাও জরুরি। মনে রাখতে হবে, মানব পাচারের ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় নারী, শিশু ও কিশোরীরা। এ ধরনের অপরাধের শিকার হলে অনেক সময় তারা ভালনারেবল হয়ে পড়েন। কারণ মামলাগুলোর সঙ্গে অনেক স্পর্শকাতর প্রমাণ থাকে। সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় তারা অনেক সময় এগুলো আদালতে উপস্থাপন করতে চান না। ফলে মামলাও দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই সাক্ষী ও প্রমাণাদির গোপনীয়তা রক্ষার প্রত্যাশিত পরিবেশ তৈরি করাও জরুরি। এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে প্রবাসীদের নিরাপত্তা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।