কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নিন

15

কিশোর গ্যাংয়ের ভয়াবহতা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। তারা নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। খোদ রাজধানী ঢাকাতেই প্রায় ৮০টি গ্যাং রয়েছে। এরা নানা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার তাজমহল রোড, জেনেভা ক্যাম্প, বসিলাসহ আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনাল টিম। গ্রেপ্তারকৃতরা ভাগ হয়ে মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ করত। এর আগে কিশোর গ্যাংয়ের ৩৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার প্রত্যেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে রাজার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা ও মৃদুলের বিরুদ্ধে চারটি মামলা রয়েছে। রাজধানীর উত্তরা ও মোহাম্মদপুরে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা বেশ সক্রিয়। এসব গ্রæপের সদস্য চুরি-ছিনতাই ও ইভটিজিংসহ নানা অপরাধে জড়িত। তাদের কারণে স্থানীয় বাসিন্দারা অতিষ্ঠ। গোয়েন্দা পুলিশের কাছে অনেকেই অভিযোগ করছেন। এসব কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য দিনে-দুপুরে গাড়ি থেকে মোবাইল টান দিয়ে নিয়ে যায়। তারা উঠতি বয়সি মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে। এই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা পৃথক দলে ভাগ হয়ে ছিনতাই করত। দীর্ঘদিন ধরে কিছু বড় ভাইয়ের নেতৃত্বে তারা এই কাজ করত। বিশেষ করে রাতের বেলা চাপাতি দিয়ে ভয় দেখিয়ে ছিনতাই করে। তারা ছিনতাইয়ের জন্য লেগুনা ব্যবহার করে। লেগুনা চালক ও হেলপারও তাদের সঙ্গে জড়িত। ডিবিপ্রধান বলেন, কিশোরগ্যাং ও ইভটিজারদের বিরুদ্ধে রাজধানীর প্রতিটি এলাকায় ডিবির অভিযান চলবে। ছিনতাইকারী ও বড় ভাইদের সম্পর্কে কোনো তথ্য থাকলে গোয়েন্দা পুলিশকে জানানোর অনুরোধ করা হয়েছে। দিনের বেলা বড় ভাইদের সঙ্গে ঘুরবে আর রাতের বেলা ছিনতাই করবে, এটা চলবে না।
এর আগেও বিভিন্ন সময়- কিশোর গ্যাং কতটা ভয়াবহ এ সংক্রান্ত উদ্বেগ উঠে এসেছে। ফলে এবারের ঘটনা আমলে নিয়ে সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার- কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে পরিকল্পিত ও বিশ্লেষণপূর্বক উদ্যোগ গ্রহণ করা। এ ছাড়া মনে রাখা দরকার, শিশু-কিশোররা যদি বিপথে চলে যায়, নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে, তবে তা পুরো দেশ ও জাতির জন্য উদ্বেগের হয়ে দেখা দেবে- সঙ্গত কারণেই এ বিষয়গুলো সহজভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। কিশোর গ্যাংয়ের আধিপত্য শুরুর দিকে কেবল ঢাকাকেন্দ্রিক থাকলেও এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ায় রীতিমতো চ্যালেঞ্জে পড়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। ‘গ্যাং কালচার’-এর নিয়ন্ত্রণ আনতে রীতিমতো হাঁপিয়ে উঠছেন কর্তৃপক্ষ। অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় নানাভাবে এর সুযোগ নিচ্ছে কিশোর অপরাধীরা। এ ছাড়া কোমলমতি কিশোরকে ব্যবহার করে ফসল ঘরে তুলছে ‘গ্যাং’য়ের পৃষ্ঠপোষকরা- যা ভয়ানক বিষয় বলেই প্রতীয়মান হয়।
কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে পারিবারিক ও সামাজিক উদ্যোগ দরকার। রাজনৈতিক নেতৃত্বকেও এগিয়ে আসতে হবে।
কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে প্রতিরোধমূলক কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।