শিশুদের নিরাপদ জীবন নিশ্চিত হোক

65

অবক্ষয়ের চূড়ান্ত প্রকাশ দেখা যাচ্ছে সমাজের নানা ক্ষেত্রেই। এর মধ্যে সবচেয়ে পীড়াদায়ক হচ্ছে শিশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতা। সামান্য চুরির অপবাদ দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। দুই বছরের শিশুও বাদ যাচ্ছে না যৌন নির্যাতন থেকে। ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা কিংবা ক্ষোভে-দুঃখে আত্মহত্যার ঘটনাও বেড়ে চলেছে। বাড়ছে শিশু অপহরণ ও পাচারের ঘটনা। নানা রকম দুর্ঘটনায় শিশুমৃত্যুর হারও ক্রমেই বাড়ছে। শিশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতার এমন ঊর্ধ্বগতি কেন?
এমন কোনো দিন নেই, যেদিন গণমাধ্যমে শিশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতার এক বা একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয় না। আর তা শুধু সচেতন নাগরিকদের হৃদয় যন্ত্রণারই কারণ হয়। শিশুর প্রতি নিষ্ঠুরতা কতটা ভয়াবহ হয়ে উঠছে তার একটি চিত্র পাওয়া যায় বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের প্রতিবেদনে। গত বুধবার প্রকাশিত ‘স্টেট অব চাইল্ড রাইটস ইন বাংলাদেশ ২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে শিশুদের প্রতি সহিংসতার মাত্রা বেড়েছে ১৮.৭৫ শতাংশ হারে। এতে দেখা যায়, দলবদ্ধভাবে শিশু ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে ৩৪.২৯ শতাংশ, ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা বেড়েছে ১৭২.৭৩ শতাংশ এবং শিশু অপহরণের ঘটনা বেড়েছে ১৫.২৫ শতাংশ। তা ছাড়া আছে কর্মস্থলে শিশু নির্যাতনের ঘটনা, বিশেষ করে গৃহস্থালি কাজে নিয়োজিত শিশুদের ওপর নির্যাতন। মানুষ স্বাভাবিকভাবেই আশা করে, রাষ্ট্রীয় বিধিব্যবস্থার প্রয়োগে এ পরিস্থিতির ক্রমেই উন্নতি হবে। সেখানে পরিস্থিতির আরো অধঃপতন কোনোভাবেই কাম্য নয়। আইন ও শিশু অধিকার বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শিশুদের প্রতি অপরাধের ঘটনাগুলো দ্রুত ও যথাযথভাবে মোকাবেলা না করার কারণেই পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগও প্রবল। সেই সঙ্গে অভিভাবক, জনপ্রতিনিধি ও সমাজের নেতৃস্থানীয়দের সচেতনতার অভাবকেও দায়ী করা হয়। এসব কারণে শিশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ নেই বললেই চলে।
রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে নাগরিকদের নিরাপত্তা দেওয়া। আর রাষ্ট্রের পক্ষে সেই কাজটি করে থাকে দেশের পুলিশ বাহিনী। পুলিশকে এ ব্যাপারে আরো তৎপর হতে হবে। অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার, সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে বিচার সম্পন্ন এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। মামলা পরিচালনায় দরিদ্র অভিভাবকদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সহায়তা দিতে হবে। আমরা চাই, শিশুদের জন্য নিরাপদ পরিবেশে বেড়ে ওঠার সুযোগ নিশ্চিত করা হোক।