বজ্রপাত প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিন

4

 

দেশে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত বেশি বজ্রপাত হয়। টানা তাপপ্রবাহে গত বৃহস্পতিবার বজ্রাঘাতে দেশের বিভিন্ন জেলায় ১০ জনের প্রাণহানি ঘটে। প্রাণহানি বিবেচনায় ২০১৬ সালে বজ্রাঘাতকে দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করে সরকার। এরপর সাত বছর পার হলেও এখনো এই দুর্যোগ প্রতিরোধের টেকসই কোনো প্রকল্প হাতে নিতে পারেনি মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্টরা। বজ্রাঘাত প্রতিরোধে ত্রাণ ও দুর্যোগব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের নেওয়া তাল গাছ প্রকল্প অধিদপ্তরের লাইটনিং ডিটেকশন সেন্সর প্রকল্প থেকে প্রত্যাশিত সাফল্য পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ বজ্রনিরোধক দÐ, বজ্রনিরোধক যন্ত্র ও ছাউনি স্থাপনের মাধ্যমে চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে কোনো কিছুর মাধ্যমেই বজ্রাঘাতে প্রাণহানি ঠেকানো যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সব কৌশলই ব্যর্থ হয়েছে। তাই গবেষণার মাধ্যমে সব অংশীজন ও বিশেষজ্ঞকে নিয়ে প্রকল্প নেওয়া হলে উপযুক্ত সমাধান আসতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
দুর্যোগব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ২০১১ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ২ হাজার ১৬৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছে এই বজ্রাঘাতে। এ ছাড়া ২০২১ সালে ৩৬৩ জন এবং ২০২২ সালে মারা গেছেন ২৭৪ জন। সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরামের (এসএসটিএফ) হিসাব অনুযায়ী, ২০২২-এর এপ্রিল থেকে ২০২৩ সালের মে মাস পর্যন্ত বজ্রাঘাতে ৩৪০ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
তথ্য মতে, ২০১৭ সালে দুর্যোগব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর দুই প্রকল্পের (কাবিখা ও টিয়ার) মাধ্যমের সারা দেশে ৪০ লাখ তাল গাছের চারা রোপণ শুরু করে। কিন্তু সেটিতে প্রত্যাশিত সাফল্য না আসায় ২০২২ সালে সেটি বাতিল ঘোষণা করা হয়। ২০১৮ সালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের নেওয়া লাইটনিং ডিটেকশন সেন্সর প্রকল্পও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কার্যক্ষমতা হারিয়েছে। অন্যদিকে ২০২১ থেকে ২০২২ অর্থবছরের আওতায় দুর্যোগব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর বজ্রপাতপ্রবণ ১৫ জেলায় একই প্রকল্পের (কাবিখা ও টিয়ার) মাধ্যমে ৩৩৫টি বজ্রনিরোধক দÐ-যন্ত্র বসায়। সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোয় তথ্য নিয়ে জানা যায়, এর বেশির ভাগই সচল নেই। আবার কোনোটির কাভারেজ বা রেডিয়াস খুবই কম। এই ধরনের আরও ৬ হাজার ৭৯৩ দÐ বসানোর জন্য ৩২১ কোটি টাকার প্রকল্প সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে মন্ত্রণালয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রকল্প খুব বেশি কার্যকরী হবে না। কারণ এসব যন্ত্রের কাভারেজ খুবই কম। যদি কাভারেজ কয়েক কিলোমিটার বা কয়েক শ মিটারও হয় তাহলে এটি বজ্রাঘাত থেকে রক্ষায় কার্যকর হবে। আর তা না হলে এটি থেকে সুফল আসবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজের অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাসরিন বলেন, বজ্রাঘাতে মৃত্যু বাড়ছে। এটি যেহেতু দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, আমাদের নির্দেশনা মানতে হবে। একই সঙ্গে এটি প্রতিরোধে গবেষণার মাধ্যমে সম্ভাব্য সব উপায় বের করতে হবে।
বজ্রপাত প্রতিরোধে জনসাধারণের করণীয় সম্পর্কে মন্ত্রণালয় থেকে যে নির্দেশনা দেওয়া আছে তা সবাইকে মানতে হবে। আগের দিনে বাসাবাড়িতে আর্থিং থাকত। সেটি স্থাপন এখন কমে গেছে। প্রতিটি বাড়িতে আর্থিং ব্যবস্থা যাতে আবার ব্যাপকভাবে করা হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত সময়টা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বজ্রপাতের জন্য, সে কারণে এই সময়টাতে জনসাধারণকে বেশি সচেতন হতে হবে। এর স্থায়িত্ব এক ঘণ্টার বেশি থাকে না। তাই এই সময়টাতে বাড়িতে বা নিরাপদ স্থানে থাকতে হবে। তাহলে বজ্রপাতের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রেহাই পাওয়া অনেকাংশ সম্ভব হবে। মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা নির্দেশনা বেশি বেশি প্রচার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করতে পারে।