খুলনা টাইটান্সকে হারিয়ে ঢাকা ডায়নামাইটসের বিশাল জয়

40

স্পোর্টস ডেস্ক :
বিপিএলে আফগানিস্তানের ওপেনার হযরতুল্লাহ জাজাই ধামাকা চলছেই। আফগানিস্তান জাতীয় দলের হয়ে কিংবা সর্বশেষ টি২০ লীগে জাজাই জৌলুস ছড়িয়েছেন। এবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগেও (বিপিএল টি২০) দেখাচ্ছেন ব্যাটিং ঝলক। ঢাকা ডায়নামাইটসের এ ওপেনার শুরুতেই যে ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিং শুরু করেন তাতেই প্রতিপক্ষের ভিত নড়ে যায়। মঙ্গলবার যেমন তার ৩৬ বলে ৩ চার ও ৫ ছক্কায় করা ৫৭ রানে উড়তে থাকে ঢাকা। খুলনা টাইটান্সকেও উড়িয়ে দেয়। ১০৫ রানে জিতে এবার লীগের ষষ্ঠ আসরে টানা দ্বিতীয় জয়ও তুলে নেয় ঢাকা। ম্যাচসেরা জাজাই ধামাকাতেই তা সম্ভব হচ্ছে।
যে কোন দলের জন্যই শুরুটা ভাল হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। অন্য দলগুলো এ জায়গাতে নড়বড়ে দেখা গেলেও ঢাকার বেলায় হচ্ছে উল্টো। প্রতিপক্ষ টস জিতে আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ঢাকা আগে ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়ে তা কাজে লাগাচ্ছে। জাজাই যে শুরু থেকেই ধুন্ধুমার ব্যাটিং করছেন, তাতে পরের ব্যাটসম্যানরাও অনুপ্রাণিত হচ্ছেন। ঢাকার স্কোরও আকাশচুম্বীই হচ্ছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, অন্য দলগুলো যেখানে দিনের ম্যাচে স্কোরবোর্ডে রানই জমা করতে পারছে না। সেখানে ঢাকা কিনা মজবুত স্কোর করার ধারাবাহিকতা বজায়ই রেখেছে। কৃত্রিম আলোতেও ঢাকার ব্যাটিং তা-ব মিলেছে, দিনের আলোতেও একই অবস্থা দেখা গেছে। রাজশাহী কিংসের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে কৃত্রিম আলোয় খেলেছে ঢাকা। সেই ম্যাচটিতে জাজাইয়ের (৭৮) ব্যাটিং তা-বে ৮৩ রানের বড় ব্যবধানে জিতেছে সাকিব আল হাসানের দল। দিনের আলোয় মঙ্গলবারের আগে যে দুটি খেলা হয়েছে, লো-স্কোরিং ম্যাচ হয়েছে। যেন রান তোলা কত কষ্টসাধ্য। অথচ ঢাকার ব্যাটসম্যানরা কিনা বুঝিয়ে দিলেন, খেলতে পারলে সবখানে, সব সময়ই খেলা যায়। জাজাই সেই শুরুটা করেন। এরপর রনি তালুকদার (২৮), কাইরন পোলার্ড (২৭) ও আন্দ্রে রাসেলের (২৫) ব্যাটিং নৈপুণ্যে ৬ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৯২ রান করে ঢাকা। এই রান অতিক্রম করা কি এত সহজ! খুলনাতো আরও দ্রুতই শেষ হয়ে গেল। ৩ উইকেট নেয়া সাকিব আল হাসান ও ২ উইকেট নেয়া সুনীল নারাইনের ঘূর্ণিতেই কাত হয়ে যায় খুলনা। ১৩ ওভারেই অলআউট হয়ে যায়। ৮৭ রানের বেশি করতেও পারেনি। কি দুর্দশা হয় খুলনার। টানা দুই ম্যাচেই হারে খুলনা। খুলনার ওপেনার জুনায়েদ সিদ্দিকী অবশ্য শুরুটা অসাধারণ করেছিলেন। সাকিবের করা প্রথম ওভারের শেষ দুই বলে ছক্কা-চার হাঁকান। নারাইনের প্রথম ওভারের প্রথম তিন বলের দুটিতেই ছক্কা হাঁকান জুনায়েদ। তখন মনে হয় ম্যাচটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা মিলতে পারে। ৪ ওভারে ৩৫ রান হয়। যেখানে দল এই সময়ে ৩৫ রান করে আর জুনায়েদই ১৬ বলে ১ চার ও ৩ ছক্কায় ৩১ রান করে ফেলেন, সেখানে মাথা গরম করে খেলার কোন মানে হয় না। কিন্তু জুনায়েদ তাই করলেন। সাকিব দ্বিতীয় ওভারে বল করতে এসে প্রথম বলেই জুনায়েদকে আউট করে দেন। সাকিবের ঘূর্ণি বলটি সুইপ করেন জুনায়েদ। বলটি স্কয়ার লেগে মিজানুর রহমানের হাতে গিয়ে জমা হয়। খুলনার আশা-ভরসাও যেন শেষ হয়ে যায়। এরপর থেকে টপাটপ উইকেট পড়তে থাকে। শেষ পাঁচটি উইকেটতো মাত্র ৫ রানে হারায় খুলনা। আরিফুল হক (১৯*) শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন। খুলনা ব্যাটসম্যানদের কি করুণ দশা হয়। জাজাইয়ের দিকে আসলে নজরটি সবার পড়েছে সর্বশেষ টি১০ লীগে। এর আগে ২০১৬ সালে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়িয়ে নিজেকে মেলে ধরতে না পারায় একটি টি২০ খেলেই দলের বাইরে চলে যান। দুই বছর পর গত বছর আগস্টে আবার আফগানিস্তানের দলে ফিরেন। ফিরেই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচ খেলে দুটিতেই ব্যাটিং তা-ব দেখান। আয়ারল্যান্ড সফরের প্রথম টি২০তে ৩৩ বলে ৮ চার ও ৬ ছক্কায় ৭৪ রান করে আফগানিস্তানকে জেতান। এরপর দ্বিতীয় টি২০তেও ৫৪ বলে ৬ চার ও ৭ ছক্কায় ৮২ রান করে আফগানিস্তানকে জয়ের আনন্দ এনে দেন। সেই থেকেই জাজাইকে নিয়ে উন্মাদনা শুরু হয়। ঢাকাও আনকোরা এ ব্যাটসম্যানকে দলে ভেড়াতে ভুল করেনি। তবে এবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের আয়োজনে শারজায় গত বছর নবেম্বর-ডিসেম্বরে হওয়া টি১০ লীগে বিশ্বের সব তারকা ক্রিকেটারদের ভিড়ে নিজেকে আলাদাভাবেই উপস্থাপন করেন জাজাই। সেরা পাঁচ ব্যাটসম্যানের একজন হয়ে বুঝিয়ে দেন স্বল্প ওভারের খেলায় মাঠ কাঁপাতে প্রস্তুত তিনি। তা বিপিএলেও বুঝিয়ে দিচ্ছেন।
খুলনার বোলার আলী খান, শরিফুল ইসলাম, ডেভিড উইজ, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে ছাড় দেননি। সুযোগ পেয়েছেন আর চার-ছক্কা হাঁকিয়েছেন। শরিফুলের একটি ওভারেতো (পঞ্চম ওভার) ২৭ রান আসে। জাজাই একাই তিন ছক্কা ও দুই চারে ২৬ রান নেন। কি ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিং করেন, তাতেই বোঝা হয়ে যায়। ২৫ বলেই হাফ সেঞ্চুরি করে ফেলেন। মাহমুদুল্লাহর করা নবম ওভারের পঞ্চম বলে লং অন দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন। তখন দলের রানও হয় ১০০। আর ১৩ রান স্কোরবোর্ডে যোগ হতেই উইজের বলে আউট হয়ে যান জাজাই। তার আগে নারাইনের সঙ্গে ওপেনিংয়ে ৬৭ রানের, রনির সঙ্গে ৪৩ রানের বড় জুটিই গড়েন। এ দুই জুটিই ম্যাচে ঢাকাকে নিয়ন্ত্রণ এনে দেয়। পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারেই ৭২ রান তুলে ফেলে ঢাকা। ১০ ওভারে গিয়ে ১০৬ রান করে। জাজাই আউটের পর রানের গতি কিছুটা কমে। শেষ ১০ ওভারে আরও ৮৬ রান যোগ করা যায়। সাকিব আবারও ব্যাট হাতে ব্যর্থ হন। তবে পঞ্চম জুটিতে গিয়ে দুই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটার পোলার্ড ও রাসেল মিলে ৫৫ রানের জুটি গড়ে রানের চাকা সচল রাখেন। ১৭১ রানের মধ্যে পোলার্ড ও রাসেলও সাজঘরে ফেরেন। এরপর আর কোন উইকেট হারায়নি ঢাকা। শুভাগত হোম (১১*) ও নুরুল হাসান সোহান (৯*) মিলে ২০ ওভার শেষ করে আসেন। দুই শ’ রানের কাছে চলে যায় ঢাকা। এতবড় স্কোর সামনে থাকলেইতো হারের ভয় থাকে। শেষ পর্যন্ত খুলনা বড় ব্যবধানেই হারে। রাজশাহীর পর জাজাইয়ের কাছে খুলনাও হার মানল। জাজাই ধামাকায় ঢাকাও টানা দ্বিতীয় জয় পেয়ে গেল।
স্কোর : ঢাকা ডায়নামাইটস ইনিংস- ১৯২/৬; ২০ ওভার (জাজাই ৫৭, নারাইন ১৯, রনি ২৮, সাকিব ০, পোলার্ড ২৭, রাসেল ২৫, শুভাগত ১১*, সোহান ৯*; স্টারলিং ২/২)।
খুলনা টাইটান্স ইনিংস- ৮৭/১০; ১৩ ওভার (জুনায়েদ ৩১, আরিফুল ১৯*, শান্ত ১৩; সাকিব ৩/১৮, নারাইন ২/২০)।
ফল : ঢাকা ডায়নামাইটস ১০৫ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা : হযরতুল্লাহ জাজাই (ঢাকা ডায়নামাইটস)।