সিলেট টেস্টের প্রথম দিনে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৯ উইকেটে ৩১০

19

স্পোর্টস ডেস্ক
ওয়ানডে মেজাজে ব্যাটিংয়ে শুরুর ভীত গড়ে দিয়েছিলেন নাজমুল হাসান শান্ত ও মাহমুদুল হাসান জয়। টাইগার অধিনায়ক ব্যক্তিগত ৩৭ রানে ফিরে গেলেও ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে ছিলেন জয়। অবশ্য ৮৬ রানের মাথায় ফিরে গেছেন তিনিও। এরপর মুশফিক-সোহানদের ব্যর্থতায় প্রথম দিনের খেলা শেষের আগেই গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় ছিল বাংলাদেশ। যদিও দশম উইকেট জুটিতে দেয়াল হয়ে দাঁড়ালেন শরিফুল-তাইজুল। তাদের ১৯ বলে ২০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে কোনোরকমে দিন পার করেছে স্বাগতিকরা।
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপ চক্রের দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথমটিতে মঙ্গলবার সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৯ উইকেট হারিয়ে ৩১০ রানে দিন শেষ করেছে বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ চার উইকেট নিয়েছেন গেøন ফিলিপস। এ ছাড়া দুটি করে উইকেট দখলে গেছে কাইল জেমিসন ও এজাজ প্যাটেলের।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা খারাপ করেনি নাজমুল হোসেন শান্তর দল। যদিও ইনিংসের শুরু থেকেই নড়বড়ে ছিলেন ওপেনার জাকির। শেষমেশ টাইগার ওপেনারকে মুক্তি দেন এজাজ প্যাটেল। ইনিংসের ১৩তম ওভারে প্যাটেলের অফ স্ট্যাম্পে পিচ করা ডেলিভারি পেছনের পায়ে ভর করে খেলতে চেয়েছিলেন জাকির। কিন্তু টার্ন করা বলটি সরাসরি আঘাত হানে অফ স্টাম্পে। সমাপ্তি ঘটে জাকির হাসানের অস্বস্তিকর ইনিংসের। ১ চারে ৪১ বলে ১২ রান করেন বাঁহাতি ওপেনার।
এরপর আরেক ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়কে নিয়ে লড়তে থাকেন শান্ত। দুজনের ওয়ানডে মেজাজের ব্যাটিংয়ে রানটাও বাড়ছিল বাংলাদেশের। তবে লাঞ্চ বিরতিতে যাওয়ার আগমুহ‚র্তে বাজে শট খেলতে গিয়ে ফেরেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। গেøন ফিলিপসের ফুল টস ডেলিভারি ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে মারতে চেয়েছিলেন শান্ত। কিন্তু ঠিকঠাক খেলতে পারেননি। মিড-অনে ক্যাচ তালুবন্দী করেন কেন উইলিয়ামসন। ফেরার আগে ২ চার ও ৩ ছক্কায় ৩৫ বলে ৩৭ রান করেন শান্ত।
অধিনায়কের বিদায়ের পর রানের গতি কিছুটা কমলেও মুমিনুলকে নিয়ে ধীরে ধীরে এগোচ্ছিলেন জয়। তাদের মধ্যে ভালো একটি জুটি গড়ে ওঠে। মুমিনুলের আউটে ভাঙে তাদের ১৭১ বলে ৮৮ রানের জুটি। প্রিয় কাট শট খেলতে গিয়ে মুমিনুলের ব্যাটের কানায় লেগে বল আশ্রয় নেয় কিপারের গøাভসে। শান্তর মতো মুমিুনলও থামলেন ব্যক্তিগত ৩৭ রানে। মুমিনুলের আউটের রেশ কাটতে না কাটতেই বিদায় নেন মাহমুদুল হাসান জয়।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আগের সর্বোচ্চ ইনিংসটি ছিল ৭৮ রানের। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের দারুণ সেই ইনিংসটি আজ সিলেটের মাটিতে ছাড়িয়ে গেলেন জয়। সাবধানী ব্যাটিংয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরির পথে। তবে ইশ সোধির বলে কটবিহাইন্ড হয়ে ফিরতে হয় ব্যক্তিগত ৮৬ রানের মাথায়। ১৬৬ বল খেলে ১১ চারের মারে এই রান করেন তিনি।
দুই ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে কিছুটা নড়বড়ে অবস্থানে থেকেই চা বিরতির পর শুরু করেছিল স্বাগতিকরা। মুশফিকুর রহিম ও অভিষিক্ত শাহাদাত হোসেন দীপুর ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় দলীয় দুইশ পূর্ণ হয় বাংলাদেশের। তবে এরপরই আবারও ধাক্কা। এবার আঘাত হানলেন এজাজ প্যাটেল। তার অফ স্টাম্পের বাইরের বল ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে মারতে গিয়েছিলেন মুশফিক। ধরা পড়ে যান মিড অফে দাঁড়ানো উইলিয়ামসনের হাতে। ২২ বলে ১২ রান করেন মুশফিক।
মুশফিকের পর অভিষিক্ত দিপুকে নিয়ে ইনিংস মেরামতের চেষ্টায় ছিলেন মিরাজ। শেষ পর্যন্ত কাইল জেমিসনের শর্ট বলের এক ডেলিভারিতে আর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারলেন না টাইগার এই অলরাউন্ডার। ব্যাটের কানায় লেগে বল চলে যায় সিøপে। ৩০ বলে ২০ রান করেন মিরাজ।
পরে অভিষিক্ত শাহাদাত হোসেনকেও ফেরালেন গেøন ফিলিপস। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে অন সাইডে খেলার চেষ্টা করেন শাহাদাত। কিন্তু ঠিকভাবে খেলতে পারেননি। শর্ট মিড-উইকেটে সহজ ক্যাচ নেন হেনরি নিকোলস। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সামনে যেন যমদূত হয়ে উঠলেন গেøন ফিলিপস। নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক, শাহাদাত হোসেনের পর নুরুল হাসান সোহানকেও ফেরালেন কিউই অফ স্পিনার। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচে প্রথমবার বল হাতে নিয়েই ৪ উইকেট পেলেন ফিলিপস। তার লেগ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারিতে খোঁচা মেরে উইকেটরক্ষক গøাভসে ক্যাচ দিলেন ৫ চারে ২৮ বলে ২৯ রান করা সোহান।
সোহানের আউটের পরই মাঠে আসে নতুন বল। দ্বিতীয় নতুন বল নিতেই সাফল্য পেলেন কাইল জেমিসন। তার অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বল তাড়া করে সিøপে ক্যাচ দিলেন নাঈম হাসান। ফেরার আগে ৩ চারে তার সংগ্রহ ২৭ বলে ১৬ রান।
পরে তাইজুল ইসলাম, শরিফুল ইসলামের শেষ জুটিতে ৮৪তম ওভারে তিনশ স্পর্শ করল বাংলাদেশ। কাইল জেমিসনের বলে শরিফুলের ব্যাটের ভেতরের কানায় লেগে পাওয়া বাউন্ডারিতে পূর্ণ হয় ৩০০ রান। পরের বলে দারুণ কভার ড্রাইভে চার মারেন শরিফুল। ওভারের শেষ বলে ফ্লিক শটে মারেন ওভারের তৃতীয় বাউন্ডারি।
আর দিনের শেষভাগটা পার করে দিলেন তাইজুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম। দুজনের ১৬ বলে ২০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ৯ উইকেটে ৩১০ রানে দিন শেষ করল বাংলাদেশ। দিনের ৯০ ওভারের পুরোটা খেলা সম্ভব হয়নি। নির্ধারিত ৬ ঘণ্টার পর আরও ১৫ মিনিট খেলা হলেও বাকি থেকে যায় ৫ ওভার।