ব্যাংকিং খাতে সুস্থ নীতিমালা জরুরী

28

সুস্থ ও সবল ব্যাংকিং খাতের ওপর দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতির অগ্রগতি বহুলাংশে নির্ভরশীল। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত সবচেয়ে দুর্বল খাতগুলোর একটি। এতে দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি স্বচ্ছন্দে এগোতে পারছে না, বরং অনেক ক্ষেত্রে প্রবল প্রতিকূলতার মুখোমুখি হচ্ছে। ব্যাংকিং খাতে অরাজকতা, ঋণের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট, অনিয়মের কারণে মুখ থুবড়ে পড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি প্রদান, ভালো গ্রাহকদের কাঁধে অস্বাভাবিক উচ্চ সুদের বোঝা চাপিয়ে দেওয়াসহ বিনিয়োগবিরোধী পদক্ষেপই বেশি দেখা যায়। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, এসব অনিয়মের ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীনদের হাতই সবচেয়ে বেশি কার্যকর ছিল। বর্তমানেও এমন কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, যাকে অর্থনীতিবিদরা অতীতের ধারাবাহিকতা বলেই মনে করছেন। তারই একটি হলো বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক সময়ের একটি ঘোষণা। ভালো গ্রাহক, যারা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করে, তাদের সুদ দিতে হয় ১৪ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত। অথচ দীর্ঘদিন ধরে ঋণ পরিশোধ করছে না—এমন খেলাপি গ্রাহকদের ঋণ পরিশোধের জন্য সুদ নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র ৯ শতাংশ, অর্থাৎ ভালো গ্রাহকদের অর্ধেক। তা-ও আবার সরল সুদ। অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকিং বিশেষজ্ঞরা এমন পদক্ষেপে হতবাক। তাঁদের প্রশ্ন, দেশে কি ঋণ খেলাপের সংস্কৃতিকে উৎসাহিত করা হচ্ছে?
গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিলের যে ঘোষণা দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে, খেলাপিরা এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১০ বছর মেয়াদে ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ৯ শতাংশ সরল সুদে ঋণ পরিশোধ করার সুযোগ পাবে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকেরই হালনাগাদ প্রতিবেদনে জানা যায়, এপ্রিলে ক্ষুদ্রশিল্পের মেয়াদি ঋণে দুটি বেসরকারি ব্যাংকের ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ছিল ২০ থেকে সাড়ে ২০ শতাংশ। একই খাতে বেশির ভাগ ব্যাংকের ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ১৫ থেকে ১৮ শতাংশের মধ্যে ছিল। বড় ও মাঝারি শিল্পের মেয়াদি ঋণে বেশির ভাগ ব্যাংকের ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ১৪ থেকে ১৭ শতাংশের মধ্যে ছিল। প্রধানমন্ত্রী বারবার ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার জন্য ব্যাংকগুলোর প্রতি তাগাদা দিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক এ ক্ষেত্রে কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। অনেকবার আশ্বাস দেওয়ার পরও তা এক অঙ্কে নেমে আসেনি। অথচ এবার সেই সুদহার এক অঙ্কে নেমেছে খেলাপি গ্রাহকদের জন্য। তাহলে ভালো গ্রাহকরা কেন এই সুবিধা পাবে না? এই সুবিধা পাওয়ার জন্য তাদেরও কি খেলাপি হতে হবে? ভালো গ্রাহকদের জন্য সুদের ওপর ১০ শতাংশ রিবেট প্রদানসহ বেশ কিছু প্রণোদনার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। ১০ শতাংশ রিবেট পেলে কার্যত ঋণের সুদ কমে ১ শতাংশের মতো। অথচ তারা এখনো সেই রিবেট বা প্রণোদনা পাচ্ছে না।
আমরা মনে করি, বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করতে এবং আর্থিক খাতে সুস্থতা ফিরিয়ে আনতে ব্যাংকিং খাতে সুস্থ নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে। ভালোকে উৎসাহিত করতে হবে, মন্দকে কোনোক্রমেই নয়।