সংগ্রাম ও সাফল্যের সংগঠন আওয়ামী লীগের ৭১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ ॥ পালিত হবে সীমিত ও অনলাইন ভিত্তিক কর্মসূচি

35

কাজিরবাজার ডেস্ক :
‘রোজগার্ডেন থেকে গণভবন’- ৭১ বছরের সুদীর্ঘ ইতিহাস। ভাষা আন্দোলন, গণআন্দোলন, স্বাধীকার আন্দোলন, স্বাধীনতা যুদ্ধ- স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় এবং পরবর্তী দেশের সব অর্জন ও সমৃদ্ধির ইতিহাসের পাতার পরতে পরতে একটিই নাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ‘বঙ্গবন্ধু-আওয়ামী লীগ-বাংলাদেশ’ ইতিহাসে এই তিনটি নাম অমলিন, অবিনশ্বর। ইতিহাসে এই তিনটি নাম একই সূত্রে গাঁথা। আওয়ামী লীগ মানেই দেশের স্বাধীনতা, স্বাধীন মানচিত্র, স্বাধীন পাতাকা। তেমনি ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাফল্য ও অর্জনের নামও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। দেশের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী গণমানুষের প্রিয় দল আওয়ামী লীগের আজ জন্মদিন।
আওয়ামী লীগ মানেই বাঙালি জাতীয়বাদের মূল ধারা। আওয়ামী লীগ মানেই সংগ্রামী মানুষের প্রতিচ্ছবি। বাংলাদেশের কাদামাটি গায়ে মাখা খেঁটে খাওয়া মানুষের কাফেলা। অতীতের মতো বাংলাদেশের ভবিষ্যত ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত। বাঙালি জাতির মুক্তির মূলমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে গণতান্ত্রিকভাবে জন্ম নেয়া উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বৃহৎ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আজ ৭১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
দেখতে দেখতে আওয়ামী লীগ ৭২ বছরে পদার্পণ করল। বাংলাদেশের গড় আয়ু ৭২ বছর। আর ৬৬ বছর হলে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে বার্ধক্য। বাংলাদেশের সংবিধান ও আইন অনুযায়ী কেউ ৬০ বছর পেরুলেই তিনি ‘সিনিয়র সিটিজেন’-এর মর্যাদা পান। সেই হিসেবে আওয়ামী লীগ এ দেশের সিনিয়র রাজনৈতিক দল। শুধু এটি বললে কম হবে, বাঙালি জাতির মুক্তির মূলমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে গণতান্ত্রিকভাবে জন্ম নেয়া উপমহাদেশে আওয়ামী প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলও হচ্ছে আওয়ামী লীগ। স্বাধীকার থেকে স্বাধীনতা, সর্বশেষ সামরিক স্বৈরশাসন থেকে গণতন্ত্রে উত্তোরণ- এর প্রতিটি অর্জনের সংগ্রাম-লড়াইয়ে নেতৃত্বদানকারী একটিই রাজনৈতিক দল, তা হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বাঙালি জাতির প্রতিটি অর্জনেরও দাবিদার প্রাচীন ও সুবিশাল এই রাজনৈতিক দলটির।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতিবছর দলটির পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচী গ্রহণ করা হলেও করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এ বছর সীমিত আকারে ও অনলাইনভিত্তিক ডিজিটাল পদ্ধতিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দলের জন্মদিন পালন করবে আওয়ামী লীগ। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে পালন করা হবে বিভিন্ন কর্মসূচী। দলের জন্মদিনে প্রদত্ত এক বাণীতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাঙালি জাতির প্রতিটি মহৎ, শুভ ও কল্যাণকর অর্জনে আওয়ামী লীগের ভূমিকা রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে আমরা আজ আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছি।
পুরান ঢাকার রোজ গার্ডেনে যে দলটির প্রতিষ্ঠা, সেই দল পেয়েছে সুরম্য ১০তলা নিজস্ব কেন্দ্রীয় কার্যালয়। আওয়ামী লীগই একমাত্র দল, যাদের বাংলাদেশের ইতিহাসে টানা তিন মেয়াদসহ চতুর্থ দফায় সরকার পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে। দলটির সভাপতি ও বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার সুযোগ্য, প্রাজ্ঞ, কৌশলী সাহসী নেতৃত্বের কারণে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দল আওয়ামী লীগ তৃতীয়বারের মতো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। আওয়ামী লীগের অপ্রতিরোধ্য জনসমর্থন আর জনপ্রিয়তায় প্রতিপক্ষ ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক অস্তিত্বই এখন সঙ্কটের মুখে। বিরোধী পক্ষ আওয়ামী লীগের বিপক্ষে মাথা তুলে দাঁড়াবোর মতো শক্তি ও সমর্থন হারিয়ে ফেলেছে। তাই বর্তমানে রাজনৈতিক মাঠে আওয়ামী লীগ প্রকৃতপক্ষে অপ্রতিদ্বন্দ্বী, অপ্রতিরোধ্য।
তবে ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, দলটির জন্ম যে মোটেই সুখকর ছিল না। ১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন স্বামীবাগের রোজ গার্ডেনে নতুন দল গঠন করা হচ্ছে। বিষয়টি জানাজানি হলে তৎকালীন সরকার ভীত হয়ে পড়ে। ওই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে মওলানা ভাসানীকে গ্রেফতার করার সম্ভাবনা দেখা দেয়। তখন নতুন সংগঠন গড়ে তোলার কারিগররা মওলানা ভাসানীকে আত্মগোপনে রাখার ব্যবস্থা করেন এবং সম্মেলনের অন্তত দু’দিন আগে তাকে রোর্ড গার্ডেনে নিয়ে আসা হয়। মওলানা ভাসানীকে বোরখা পরিয়ে (মতান্তরে কম্বল জরিয়ে) ঘোড়ার গাড়িতে করে রোজ গার্ডেনে নিয়ে যান সংগঠনটি দাঁড় করানোর অনুঘটক শওকত আলী।
এরপর আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সর্বসম্মতিক্রমে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে সভাপতি, শামসুল হককে সাধারণ সম্পাদক এবং কারাবন্দী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যুগ্ম সম্পাদক করে নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করে। সম্মেলনে দলের নাম দেয়া হয় আওয়ামী লীগ মুসলিম লীগ। পরদিন ২৪ জুন ঢাকার আরমানিটোলা ময়দানে প্রকাশ্য জনসভার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের যে আন্দোলনের কর্মসূচী শুরু হয়, দীর্ঘ ৭১ বছরে তার বিরাম নেই। বহু ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে কখনও বিরোধী দলে, কখনও সরকারে থেকে দেশ গঠনে অনন্য অবদান রেখে চলেছে মাটি ও মানুষের রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
আজ কোথায় দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ? ৭১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই দিনে এ প্রশ্ন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সব বাঙালির। দলটির জন্মদিন এবার এসেছে এক বিভীষিকাময় বিশ্ব পরিস্থিতিতে। প্রাণঘাতী করোনার কারণে শুধু বাংলাদেশই নয়, সারাবিশ্ব আজ স্থবির। প্রতিদিনই অদৃশ্য এই শক্তিটি কেড়ে নিচ্ছে অসংখ্য মানুষের প্রাণ। করোনা সংক্রমণ বর্তমানে ভয়াবহ ও উদ্বেগজনক অবস্থায় পৌঁছেছে।
দেশের এই সঙ্কটময় মুহূর্তে অসহায় হয়ে পড়া লাখ লাখ মানুষ অকপটেই স্বীকার করছেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মতোই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কেন্দ্র থেকে প্রান্ত পর্যন্ত জীবনের ঝুঁকি নিয়েই অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, বিতরণ করে যাচ্ছে খাদ্যসহ প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী। দলটির প্রধান কান্ডারী দিনের পর দিন নির্ঘুম রাত কাটিয়ে চরম বিপদে পড়া দেশের কোটি কোটি মানুষকে রক্ষায় আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
শুধু সরকারই নয়, দেশের এই বিপদে দলের বিশাল সাংগঠনিক শক্তিকেও অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে করোনা থেকে দেশের মানুষকে সুরক্ষায় কার্যকরভাবে কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছেন। তবে প্রাণঘাতী এই করোনা একে একে কেড়ে নিচ্ছে দলটির সন্মুখসারীর অনেক ত্যাগী যোদ্ধাকে। দলের জন্মদিনের আগেই না ফেরার দেশে চলে গেছেন জাতীয় নেতা মোহাম্মদ নাসিম, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আলহাজ্ব মকবুল হোসেন, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহসহ অনেক ত্যাগী নেতা। তাই সম্পূর্ণ এক ভিন্ন প্রেক্ষাপট ও পরিস্থিতিতে আজ কোটি নেতাকর্মী, সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ী আওয়ামী লীগের ৭১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করছে। গণমানুষের ভাব-ভাবনার ধারক আ’লীগ
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার স্বামীবাগস্থ বিখ্যাত রোজ গার্ডেনে জন্ম হয়েছিল এই প্রাচীন রাজনৈতিক দলটির। এই দলের জন্মলাভের মধ্য দিয়েই রোপিত হয়েছিল বাঙালির হাজারও বছরের লালিত স্বপ্ন স্বাধীনতা সংগ্রামের বীজ। জন্মলগ্ন থেকেই দেশের মাটি ও মানুষের প্রতি দলটির নেতাকর্মীদের অঙ্গীকার ও ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে শুরু হয় পাকিস্তানী ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বাঙালি জাতির গৌরবোজ্জ্বল সংগ্রামের ইতিহাস। জনগণের অকুণ্ঠ ভালবাসা ও সমর্থন নিয়েই এই দলটি বিকশিত হয়।
যার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির ভূ-খন্ডের সীমানা পেরিয়ে এই উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ এবং জনসমর্থনপুষ্ট অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক, মানব কল্যাণকামী রাজনৈতিক দল হিসাবে নিজেদের পরিচিতি অর্জনে সক্ষম হয়েছে। বাঙালির ঐহিত্য, সংস্কৃতি, ভাষা, বাঙালির আত্মনিয়ন্ত্রণ, স্বায়ত্তশাসন সর্বশেষ স্বাধীনতার মূলমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে গড়ে ওঠা আওয়ামী লীগ তার আদর্শ এবং উদ্দেশ্যে অটল থেকেও সময়ের বিবর্তনে বৈজ্ঞানিক কর্মসূচীর মাধ্যমে একটি আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আজ প্রতিষ্ঠিত।
রোজ গার্ডেনে দলটি প্রতিষ্ঠালাভ করেছিল ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ নামে। ১৯৫৬ সালে ময়মনসিংহে অনুষ্ঠিত দলীয় কাউন্সিলে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ নামকরণের মাধ্যমে দলটি অসাম্প্রদায়িক বৈশিষ্ট্যমন্ডিত হয়। এক কথায় বলতে গেলে, বাঙালি জাতির সব মহতী অর্জনের নেতৃত্বে ছিল জনগণের প্রাণপ্রিয় সংগঠন আওয়ামী লীগ, যার মহানায়ক ছিলেন রাজনীতির মহামানব সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি ও স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
দীর্ঘ রাজনৈতিক পথ পরিক্রমায় অনেক ঘাত-প্রতিঘাত, চড়াই-উতড়াই ও প্রাসাদসম ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে দলটি আজ এ দেশের গণমানুষের ভাব-ভাবনার ধারক-বাহকে পরিণত হয়েছে। অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক ভাব-ধারার আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়েছে দলটি। জন্মের পর থেকে অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ঐতিহ্যবাহী দলটি বেঁচে আছে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে। জন্মলাভের পর ইতিহাসের রেকর্ড ভঙ্গ করে টানা তৃতীয়বারের মতো তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি আসনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ এখনও রাষ্ট্রক্ষমতায়।
আওয়ামী লীগের জন্মলাভের পর মহান ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ’৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, ’৬৬ সালের ঐতিহাসিক ছয় দফা, ’৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান এবং ’৭০ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে এই দলের নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ক্রমশ এগিয়ে যায় স্বাধীনতার দিকে। এই দলের নেতৃত্বেই ১৯৭১ সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশ নিজেদের স্থান দখল করে। আর এসব আন্দোলনের পুরোধা ও একচ্ছত্র নায়ক ছিলেন ইতিহাসের মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
আওয়ামী লীগ বাঙালি জাতীয়বাদের মূল ধারা। এটা বাঙালি জাতির গৌরবের যে দ্বিজাতিতত্ত্বেও চোরাবালি থেকে বাঙালি জাতিকে পুনরুদ্ধার করেছিলেন বঙ্গবন্ধুর মতো একজন শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি যিনি হাজার বছরের বাঙালি জাতির সাধনা, ধ্যান, জ্ঞান তার বিপুল সংস্কৃতির ভান্ডারের অন্তর্গত সত্যকে নিজের জীবনে ধারণ করে তা রূপ দিয়েছিলেন দীর্ঘ দু’শ বছরের ধর্ম ও রাজনীতির সংমিশ্রণে জাতীয়তাবাদের বিকৃতি থেকে আমাদের মুক্ত করে। আগামী দু’এক শতাব্দীর মধ্যেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মতো একজন মহামানব, যুগ সৃষ্টিকারী কোন ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটবে, তা কল্পনাও করা যায় না। তাই বাঙালি জাতি আওয়ামী লীগের শুভ জন্মদিনে বিন¤্র শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করবে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমানকেও।
একনজরে আওয়ামী লীগের ৭১ বছর : আওয়ামী লীগের পথচলা শুরু ১৯৪৯ সালে। ওই বছর ২৩-২৪ জুন পুরান ঢাকার কে এম দাস লেনে বশির সাহেবের রোড গার্ডেনের বাসভবনে প্রগতিবাদী ও তরুণ মুসলীম লীগ নেতাদের উদ্যোগে রাজনৈতিক কর্মী সম্মেলনের ভেতর দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় পাকিস্তানের প্রথম প্রধানবিরোধী দল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। প্রথম কাউন্সিলে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলে শামসুল হক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন প্রথম কমিটির যুগ্ম সম্পাদক। দলের দ্বিতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫৩ সালে ময়মনসিংহে। এতে সভাপতি হন মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান।
১৯৫৫ সালের ২১-২৩ অক্টোবর ঢাকার সদরঘাটের রূপমহল সিনেমা হলে দলের তৃতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িক সংগঠনে পরিণত হয়। দলের নতুন নামকরণ হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলীম লীগের সভাপতি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এ প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন। পরে কাউন্সিল অধিবেশনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে মাওলানা ভাসানী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বহাল থাকেন।
’৫৭ সালে কাগমারী সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক নির্ণয়ে সোহরাওয়ার্দী-ভাসানীর মতপার্থক্যের কারণে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগ ভেঙ্গে যায়। ভাসানীর নেতৃত্বে গঠিত হয় ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)। আর মূল দল আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান অপরিবর্তিত থাকেন। ’৫৮ সালে পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি হলে আওয়ামী লীগের কর্মকান্ড স্থগিত করা হয়। দীর্ঘ ছয় বছর ‘আন্ডারগ্রাউন্ড’ রাজনীতি করার পর ’৬৪ সালে দলটির কর্মকান্ড পুনরুজ্জীবিত করা হয়। এতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে তর্কবাগীশ-মুজিব অপরিবর্তিত থাকেন।
১৯৬৬ সালের কাউন্সিলে দলের সভাপতি পদে নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তাজউদ্দীন আহমেদ। এর পরে ’৬৮ ও ’৭০ সালের কাউন্সিলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অপরিবর্তিত থাকেন। এই কমিটির মাধ্যমেই পরিচালিত হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রথম কাউন্সিলে সভাপতি হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান। ’৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু সভাপতির পদ ছেড়ে দিলে সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয় এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে। সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল থাকেন জিল্লুর রহমান।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আসে আওয়ামী লীগের ওপর মারণাঘাত। বঙ্গবন্ধু সপরিবারে হত্যার পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলে আওয়ামী লীগের রাজনীতি আবারও স্থগিত করা হয়। ’৭৬ সালে ঘরোয়া রাজনীতি চালু হলে তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা মিজান চৌধুরী ও মোল্লা জালালউদ্দিনকে নিয়ে নেতৃত্বের কোন্দল শুরু হয়। ওই সময় আওয়ামী লীগের ঐক্যরক্ষা ও পুনরুজ্জীবিত করতে সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনকে আহ্বায়ক করে একটি আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। ’৭৮ সালের কাউন্সিলে দলের সভাপতি করা হয় আবদুল মালেক উকিলকে এবং সাধারণ সম্পাদক হন প্রয়াত জননেতা আবদুর রাজ্জাক।
এরপরেই শুরু হয় আওয়ামী লীগের উত্থানপর্ব, উপমহাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে গড়ে তোলার মূল প্রক্রিয়া। সঠিক নেতৃত্বের অভাবে দলের মধ্যে সমস্যা দেখা দিলে নির্বাসনে থাকা বঙ্গবন্ধুর কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। দেশে ফেরার আগেই ’৮১ সালের কাউন্সিলে শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল থাকেন আবদুর রাজ্জাক। আবারও আঘাত আসে দলটির ওপর। ’৮৩ সালে আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে দলের একটি অংশ পদত্যাগ করে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে বাকশাল গঠন করে। এ সময় সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। ’৮৭ সালের কাউন্সিলে শেখ হাসিনা সভাপতি ও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক হন।
’৯২ ও ৯৭ সালের সম্মেলনে শেখ হাসিনা এবং প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০০ সালের বিশেষ কাউন্সিলে একই কমিটি বহাল থাকে। ২০০২ সালের ২৬ ডিসেম্বর জাতীয় কাউন্সিলে শেখ হাসিনা এবং প্রয়াত আবদুল জলিল দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালের ২৪ জুলাই, ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের দুটি কাউন্সিলে শেখ হাসিনা সভাপতি পদে বহাল থাকেন এবং সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ২০১৬ সালের ২৭ ও ২৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে সভাপতি পদে শেখ হাসিনা বহাল থাকলেও নতুন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন বর্তমান সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সর্বশেষ গত বছরের ২০ ডিসেম্বর কাউন্সিলে একই কমিটি বহাল থাকে।
কর্মসূচি : দিবসটি উপলক্ষে প্রতিবছর দলটির পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচী গ্রহণ করা হলেও করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এ বছর সীমিত আকারে ও অনলাইনভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এসব কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে- আজ সূর্যোদয়ের সময় কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সীমিত পরিসরে ঢাকায় ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে দলের শীর্ষ নেতাদের শ্রদ্ধা নিবেদন। এছাড়া, স্বাস্থ্যবিধি মেনে দলের স্বল্পসংখ্যক সদস্যের প্রতিনিধি দল টুঙ্গীপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করবেন ।
বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সব সদস্যদের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা এবং করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত সকলের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া আজ রাত সাড়ে আটটায় ‘গণমানুষের দল আওয়ামী লীগ’ শীর্ষক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হবে। দলের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে সরাসরি ওয়েবনারটি দেখা যাবে। সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, মুহাম্মদ ফারুক খানসহ সিনিয়র নেতারা ওয়েবনারে অংশগ্রহণ করবেন।