অস্ত্রোপচার ব্যবস্থায় সংকট

15

দেশের বিভিন্ন উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে চিকিৎসার ঘাটতির বিষয়টি সুবিদিত। করোনার দুর্বিপাকে স্বাস্থ্য নিরাময় কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসকের অনুপস্থিতিসহ অনিয়ম, দুর্নীতি, হঠকারিতা, অর্থ আত্মসাত থেকে শুরু করে বিধিনিষেধ তোয়াক্কা না করার যে দুঃসহ চিত্র উঠে এসেছে তা সত্যিই হতাশাব্যঞ্জক। শেষ অবধি এর দায়িত্ব গিয়ে বর্তায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের বৃহৎ ও সম্প্রসারিত কর্মযোগের মূল কার্যক্রমের ওপর। যথেষ্ট নিয়মশৃঙ্খলা কিংবা কঠোর নজরদারির অভাবেই জীবন সুরক্ষার এই বলয়টি হরেক রকম দুর্বিপাকের শিকার হচ্ছে। সম্প্রতি এক তথ্যে জানা যায়, দেশের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৫৬২টি অপারেশন থিয়েটার একেবারে বন্ধ। ফলে অস্ত্রোপচারের রোগীদের যে কি মাত্রায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তা সহজেই অনুমেয়। এমন অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক এবং আবেদনবিদদের মধ্যে সুষ্ঠু সমন্বয়ের ধারাবাহিক অব্যবস্থায়। বিশেষ করে দু’জন সার্জন এবং এ্যানেসথেসিওলজিস্ট বা আবেদনবিদ সমন্বয়ে গঠিত টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে বিপন্ন রোগীর জটিল অস্ত্রোপচার কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। সেখানেই রয়েছে চরম ও দৃষ্টিকটু গাফিলতি। সার্জন থাকেন তো আবেদনবিদের অনুপস্থিতিতে পুরো কার্যক্রম বানচাল করে দিতে যথেষ্ট। আর এটাই ঘটছে স্বাস্থ্য নিরাময় কেন্দ্রগুলোতে।
দেশের ৪৪৩টি উপজেলায় বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রত্যেকটিতে ২ কিংবা ৩টা করে ‘ওটি’ থাকে। সব মিলিয়ে এর সংখ্যা প্রায় হাজারের কাছাকাছি। এর মধ্যে ৫৮% অপারেশন থিয়েটারই অকার্যকর অবস্থায় পড়ে আছে। কোন কোন অপারেশন থিয়েটার ৫ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত অচলায়তনের আবর্তে পড়ে আছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অভিমত- নিয়োগ পদ্ধতিতে অনিয়ম এবং দুর্বলতা এমনভাবে জড়িয়ে থাকে যে সেই জটিলতা থেকে বের হয়ে আসাও অসম্ভব। তার ওপর পদায়নের ব্যাপারে রয়েছে পক্ষপাতিত্ব এবং চরম বিশৃঙ্খলা। দুর্নীতির প্রকোপ এমনভাবে বিস্তৃত যে, সুষ্ঠু ও সমন্বিত চিকিৎসা পদ্ধতি আশা করা বাতুলতা মাত্র। প্রতিটি কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরীণ চাহিদা ছাড়াও চিকিৎসা পদ্ধতির প্রাসঙ্গিক লোকবল এবং সরঞ্জামের ঘাটতিও রয়েছে। তার ওপর বদলি এবং হরেক রকম অন্যায় অজুহাতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকাও বাড়িয়ে তোলে সঙ্কট।
সরকার সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো উন্নয়ন থেকে শুরু করে আধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করতে সব ধরনের উদ্যোগ নিলেও লোকবলের অপ্রতুলতায় চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় বিদ্যমান অচলাবস্থা আসলেই এক বড় সমস্যা। তার ওপর চেপে বসে আছে সুশাসনের ব্যাপক ঘাটতি। অনেক সার্জন ও আবেদনবিদ নিয়োগ পাবার পরেই বদলি নিয়ে বিভাগীয় শহরগুলোতে চলে যাওয়াও এক মহাসঙ্কট। সব মিলিয়ে সারা দেশের উপজেলা স্বাস্থ্য নিরাময় কেন্দ্রগুলো এক বিপন্ন সময় পার করছে। বিশেষ করে অস্ত্রোপচারের অব্যবস্থাপনায় সঙ্কট আরও ঘনীভূত হচ্ছে। এসব অন্যায়, বিশৃঙ্খলার ব্যাপারে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও কঠোর নজরদারি একান্ত আবশ্যক। তা না হলে জীবনের সুরক্ষায় নিরাময় কেন্দ্রগুলো প্রাণসংহারের আবর্তে পড়তে খুব বেশি সময় নেবে না। সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সচেতন দায়বদ্ধতায় উপস্থিত সঙ্কট নিরসন পরিস্থিতির অনিবার্য দাবি।