জনপ্রত্যাশা পূরণের বাজেট হউক

7

আগামী বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব করবেন অর্থমন্ত্রী। গত অর্থবছরের চেয়ে এবার বাজেটের আকার বড় হচ্ছে বলে জানা গেছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন। যে বাজেট তিনি উপস্থাপন করবেন তার আকার পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। এটি চলতি অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে ৪৪ হাজার ৮১০ কোটি টাকা বেশি। এবার এমন এক সময়ে নতুন অর্থবছরের বাজেট পেশ করা হচ্ছে, যখন পেছনে রয়েছে অর্থনীতির বিপুল ক্ষতি। সামনে গভীর অনিশ্চয়তা। নিশ্চিতভাবেই মানুষের জীবন বাঁচানোর পাশাপাশি জীবিকা নিশ্চিতের কঠিন সমীকরণ মেলাতে হবে এবারের বাজেটে।
বাজেট হচ্ছে সরকারের এক বছরের আয়-ব্যয়ের আগাম হিসাব। সেবা থেকে শুরু করে বিভিন্ন খাতে রাষ্ট্রের নাগরিকরা যে সেবা ও উন্নয়ন পেতে চায় বা রাষ্ট্র যে সেবা নিশ্চিত করতে চায়, তা এই বাজেটের মধ্য দিয়ে নির্ধারিত হয়। বাজেটে যে বরাদ্দ দেওয়া হয় তার ওপর নির্ভর করে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। শুধু অবকাঠামোগত নয়, সব ধরনের উন্নয়নই বাজেটের ওপর নির্ভরশীল। দেশের শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সব খাতেই বরাদ্দ থাকে বাজেটে। স্বাভাবিকভাবেই এবারের বাজেট কেমন হবে বা হতে পারে, তা নিয়েই আলোচনা চলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন অর্থনীতি সচল করার পথে যাত্রা শুরু করা বাংলাদেশের সম্ভাব্য সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়ার ওপরই জোর দিতে হবে। প্রবৃদ্ধি বিবেচনায় শীর্ষ দেশগুলোর তালিকায় থাকা উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া বাংলাদেশ করোনাভাইরাস মহামারির কারণে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার সুনির্দিষ্ট কোনো অঙ্ক এখনো পাওয়া যায়নি। পরিকল্পনামন্ত্রী সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, মার্চ থেকে মে পর্যন্ত তিন মাসে যে ক্ষতি হয়েছে, তাতে ৮.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে দেশ। প্রবৃদ্ধির হার ২.৫ শতাংশে নেমে আসতে পারে, এমন পূর্বাভাস দিয়েছে সিপিডি। করোনাভাইরাস সংকটের ধাক্কায় চলতি বছর বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে প্রবৃদ্ধির হার ৩.৮ শতাংশে নেমে আসতে পারে বলে মনে করছে আইএমএফ। যদিও উৎপাদন, আমদানি-রপ্তানিসহ অর্থনীতির সব খাত ঠিক হতে কতটা সময় লাগবে, তা কেউ বলতে পারছে না।
আমাদের এই ছোট দেশে একটি বড় অংশ কর্মক্ষম বেকার যুবসমাজ। অবকাঠামো, জ্বালানি, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার অভাবে দেশে বিনিয়োগ কাঙ্ক্ষিত গতি পাচ্ছে না, পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানও তৈরি হচ্ছে না। প্রান্তিক পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। জাতীয় সংসদে যে বাজেট প্রস্তাব করা হবে, তাতে জনপ্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটবে বলে আমরা আশা করি। সব দিক দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই রাষ্ট্রের কাজ। বাজেটে নাগরিকদের সার্বিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়টি প্রাধান্য পাবে, স্থবির অর্থনীতিতে গতির সঞ্চার হবে এটিই আমাদের প্রত্যাশা।