প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার ফলাফলে থাকছে না জিপিএ-৫

56

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের সমাপনী পরীক্ষার ফল প্রকাশেও আসছে বড় ধরনের পরিবর্তন। সর্বোচ্চ গ্রেড জিপিএ-৫ এর পরিবর্তে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমপানীতেও সর্বোচ্চ গ্রেড হবে জিপিএ-৪। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের পাবলিক পরীক্ষায় গ্রেডিং পরিবর্তনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রাথমিকেও আনা হচ্ছে পরিবর্তন। তবে সব কিছুই নির্ভর করছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের গ্রেডিং পরিবর্তনের চূড়ান্ত ঘোষণার ওপর।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম-আল-হোসেন প্রাথমিকের ফল প্রকাশের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার কথা উল্লেখ করে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় যদি তাদের সব পাবলিক পরীক্ষা থেকে জিপিএ-৫ তুলে দেয় তাহলে তাদের সঙ্গে মিল রেখে আমরাও জিপিএ-৫ এর পরিবর্তে সিজিপিএ-৪ করে ফেলব। আমরাও সিজিপিএ চালু করব। তারা যদি এ বছর থেকেই জিপিএ-৫ বাতিল করে, আমাদেরও তা করতে সময় লাগবে না। আমরা খুব দ্রুত একটি কমিটি করে দেব। এরপর কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী তা বাস্তবায়ন করা হবে। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর আগামী পরীক্ষা থেকেই এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
এর আগে মূলত গত ১২ জুন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ‘আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি’র এক সভায় জেএসসি/জেডিসি, এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ এর পরিবর্তে সিজিপিএ-৪ চালুর প্রাথমিক সিদ্ধান্তের পর থেকেই আমলে আসে বিষয়টি। আগামী জেএসসি পরীক্ষা থেকেই সর্বোচ্চ গ্রেড জিপিএ-৪ করে ফল প্রকাশের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই সভায় জিপিএ পুনঃবিন্যাস করে একমাসের মধ্যে একটি খসড়া উপস্থাপনের নির্দেশও দেন শিক্ষামন্ত্রী। সেই অনুযায়ী এখন একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীভুক্ত শিক্ষা বোর্ডগুলো অষ্টম শ্রেণীর জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি), সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) এবং হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে। দেশের সব পাবলিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ এর মধ্যে ফল প্রকাশ করা হয়। কিন্তু দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সিজিপিএ-৪ এর মধ্যে ফল প্রকাশ করা হয়। এছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশে সব ধরনের ফলই প্রকাশ করা হয় সিজিপিএ-৪ এর মধ্যে। এর ফলে এসএসসি এবং এইচএসসির ফলের সঙ্গে উচ্চতর শিক্ষার ফলের সমন্বয় করতে গিয়ে দেশের চাকরিদাতারাই মহাসমস্যায় পড়েন। এজন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাবলিক পরীক্ষার ফলের সঙ্গে সমন্বয় করার জন্যই জিপিএ-৫ এর পরিবর্তে সিজিপিএ-৪ করার উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সর্বোচ্চ গ্রেড জিপিএ-৫ এর পরিবর্তে সর্বোচ্চ গ্রেড জিপিএ-৪ নির্ধারণের পক্ষে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, আগে যেখানে একটি বিষয়ে ৮০ থেকে ১০০ নম্বরের মধ্যে পেলে হতো সর্বোচ্চ গ্রেড-৫ সেখানে এখন দুটি বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে।
যার একটি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ এবং অপরটি হচ্ছে ৯৫ থেকে ১০০। কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন যে দুুটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তার যে কোন একটি হলেও আগের মতো লাখ লাখ সর্বোচ্চ স্কোর আর হবে না। কমে আসবে সর্বোচ্চ গ্রেড পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা।
আগামী ২৬ জুন শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন পেশ করার কথা। দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান এ বিষয়ে কাজ করছেন। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির প্রধান ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক রবিবার সন্ধ্যায় জনকণ্ঠকে বলেছেন, বিষয়টি অনেক বড় একটি কাজ। অনেকের সঙ্গে কথা বলতে হচ্ছে, মতামত নেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন দেশের ফলাফল প্রকাশের পদ্ধতি দেখছি আমরা। একটুতো সময় লাগবেই। আমরা চেষ্টা করছি আগামী ২৬ জুনই প্রতিবেদন পেশ করতে। যদি তার আগে শেষ করতে পারি তাহলে ২৬ তারিখেই আমরা প্রতিবেদন জমা দেব। সেভাবেই আমরা কাজ করছি।
চেয়াম্যান জানান, কত নম্বর থেকে কত নম্বর পেলে জিপিএ-৪ হবে এবং সেটা কিভাবে প্রয়োগ হবে তা আলোচনা করে ঠিক করা হবে। সবার সম্মতি থাকলে চলতি বছরের জেএসসি থেকেই আমরা সিজিপিএ ৪-এর মধ্যে ফল প্রকাশ করতে চাই। কারণ আমাদের সর্বোচ্চ গ্রেড জিপিএ-৫ অথচ আন্তর্জাতিক পর্যায় ও দেশের বিশ^বিদ্যালয়েও এ গ্রেড হচ্ছে সিজিপিএ-৪। এতে সমস্যায় পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের।
বাংলাদেশে ২০০১ সাল থেকে পাবলিক পরীক্ষায় গ্রেড পদ্ধতি চালু হয়। এ পদ্ধতিতে ৮০ থেকে ১০০ নম্বর প্রাপ্তদের গ্রেড পয়েন্ট-৫, লেটার গ্রেড এ প্লাস। এটাই সর্বোচ্চ গ্রেড। এরপর ৭০ থেকে ৭৯ নম্বর প্রাপ্তদের গ্রেড পয়েন্ট-৪, লেটার গ্রেড এ। ৬০ থেকে ৬৯ নম্বর প্রাপ্তদের গ্রেড পয়েন্ট-৩.৫০, লেটার গ্রেড এ মাইনাস। ৫০ থেকে ৫৯ নম্বর প্রাপ্তদের গ্রেড পয়েন্ট-৩, লেটার গ্রেড বি।
৪০ থেকে ৪৯ নম্বর প্রাপ্তদের গ্রেড পয়েন্ট-২, লেটার গ্রেড সি। ৩৩ থেকে ৩৯ নম্বর প্রাপ্তদের গ্রেড পয়েন্ট এক, লেটার গ্রেড ডি। আর শূন্য থেকে ৩২ পাওয়া শিক্ষার্থীদের গ্রেড পয়েন্ট জিরো অর্থাৎ লেটার গ্রেড এফ ধরা হয়। জিপিএ-১ অর্জন করলেই একজন শিক্ষার্থীকে উত্তীর্ণ হিসেবে ধরা হয়। কোন বিষয়ে এফ গ্রেড না পেলে চতুর্থ বিষয় বাদে সব বিষয়ের প্রাপ্ত গ্রেড পয়েন্টকে গড় করেই একজন শিক্ষার্থীর লেটার গ্রেড নির্ণয় করা হয়।
২০২১ সাল থেকে সব স্কুলে কারিগরি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হবে : শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি বলেছেন, ২০২১ সাল থেকে দেশের সকল স্কুলে কারিগরি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হবে। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত কারিগরি শিক্ষার একটা বিষয় বাধ্যতামূলক করা হবে। প্রতিটি স্কুলে কমপক্ষে দুইটি ট্রেড থাকবে যে প্রতিটি শিক্ষার্থী দুইটির যে কোন একটি ট্রেড পারদর্শী হবে। যদি কোন শিক্ষার্থী উচ্চতর শিক্ষা না নিতে পারে তাহলে সে যেন বেকার না থাকে এ জন্য কারিগরি শিক্ষা চালুর পরিকল্পনা করছে সরকার।
ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের আয়োজনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটে ‘স্থানীয় পর্যায়ে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) বাস্তবায়ন বিষয়ক এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।