এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইপর্ব ॥ ফিলিপিন্সের জালে বাংলাদেশের গোলবন্যা

51

স্পোর্টস ডেস্ক :
১০-০ গোলের বিশাল জয়। স্বপ্ন নয়, সত্যি। শঙ্কা নয়, স্বস্তি। প্রতিপক্ষ অচেনা বলেই বুধবার দুপুরে ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে এমন অনুভূতিতেই আক্রান্ত হয়েছিলেন বাংলাদেশের কোটি কোটি ফুটবলপ্রেমী। কিন্তু তাদের এই শঙ্কা যে অমূলক ছিল সেটা প্রমাণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৬ জাতীয় নারী ফুটবলাররা। প্রতিপক্ষের জালে মুহুর্মুহু বল পাঠিয়ে মেতে উঠেছে উল্লাসে। ফিলিপিন্সকে তারা হারিয়েছে ১০-০ গোলে। বিশাল এ জয়ে একাই হ্যাটট্রিকসহ চার গোল করেছে স্ট্রাইকার তহুরা খাতুন। জোড়া গোল করেছে আনুচিং মগিনি। এছাড়া ১টি করে গোল করেছে শামসুন্নাহার সিনিয়র, শামসুন্নাহার জুনিয়র এবং মারিয়া মান্দা। আরেকটি গোল হয়েছে আত্মঘাতী।
খেলার প্রথমার্ধেই বাংলাদেশ এগিয়ে ছিল ৬-০ গোলে। এর ফলে মিয়ানমারে অনুষ্ঠিত এএফসি অনুর্ধ-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইপর্বে (রাউন্ড-২) শুভসূচনা করলো বাংলার বাঘিনীরা। ম্যাচশেষে দলের কোচ গোলাম রাব্বানী ছোটন বলেন, ‘যেভাবে খেলে আমার দলের মেয়েরা জিতেছে তাতে আমি খুবই খুশি। দলের খেলোয়াড়রা পুরো ম্যাচেই ইতিবাচক মানসিকতা এবং কঠোর পরিশ্রম করে খেলেছে। খেলার শুরুতেই আমরা গোল পেয়ে যাই এবং বেশিরভাগ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বড় ব্যবধানে জয় কুড়িয়ে নিই। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে এই আসরের মূলপর্বে উন্নীত হওয়া। আমাদের পরের ম্যাচটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ প্রতিপক্ষ হচ্ছে স্বাগতিক মিয়ানমার।’
ফিলিপিন্সের কোচ মানিয়েলা রেনিতি বলেন, ‘বাংলাদেশ খুব ভাল ও গতিশীল দল। তাদের খেলোয়াড় মনিকা, অধিনায়ক মারিয়া এবং গোলরক্ষক রূপনা খুবই প্রতিভাবান খেলোয়াড়। এই তিনজনই মূলত পুরো ম্যাচে দলকে গাইড ও নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং দলও অনেক আধিপত্য বিস্তার করে খেলেছে। বাংলাদেশ দলের রক্ষণভাগের প্রশংসা না করলেই নয়। আমাদের দলটি মাত্র দুই সপ্তাহের অনুশীলন করে এই আসরে খেলছে। আর এটাই দু’দলের পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। তবে যোগ্য দল হিসেবেই জেতা বাংলাদেশ এই আসরের মূলপর্বে যাওয়ার দাবিদার।
ইন্টারনেটে ম্যাচের ফল জেনে এক রসিক বাংলাদেশী ফুটবলপ্রেমী তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন এই লিখে, ‘আরেকটি গোল বেশি করলেই তো বিপক্ষ দলের একাদশ প্রত্যেকেরই ভাগে একটা গোল পেত।’ অথচ খেলা শুরুর আগেও কেউ ধারণা করেননি এত ভাল খেলবে বাংলাদেশ, আর এত গোল দেবে। ধারণা করার প্রশ্নই ওঠে না, কেননা প্রতিপক্ষ যে অচেনা। তাই হেরে যাবার বা পয়েন্ট হারানোর একটা শঙ্কা ছিলই। কিন্তু মাঠের খেলায় সেসব তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিল গোলাম রাব্বানী ছোটনের শিষ্যারা।
বুধবার মান্দালয়ের মান্দালার থিরি স্টেডিয়ামে দুপুর আড়াইটায় যখন বাংলাদেশ দল মাঠে নামছে তখনও বোঝা যায়নি একটু পরে কি হতে যাচ্ছে। পরে যতই সময় গড়িয়েছে ততই যেন বারুদ ঠিকরে ঠিকরে বেরিয়েছে বঙ্গকন্যাদের বুট থেকে। এভাবেও বলা যায়Ñ বঙ্গকন্যারা যেন ফুটবল খেলা শেখালো ফিলিপিনো কন্যাদের। প্রথম ম্যাচেই দুর্দান্ত জয়ে প্রতিপক্ষকে খড়কুটোর মতো উড়িয়ে দিয়ে এই আসরের চূড়ান্তপর্বে ওঠার পথে এক পা বাড়িয়ে রাখলো লাল-সবুজ জার্সিধারীরা।
এইপর্বে দুই গ্রুপ থেকে সেরা ও রানার্সআপ দল খেলবে চূড়ান্তপর্বে। সেখানে আগে থেকেই অপেক্ষায় আছে স্বাগতিক থাইল্যান্ড, গত আসরের চ্যাম্পিয়ন উত্তর কোরিয়া, রানার্সআপ দক্ষিণ কোরিয়া ও তৃতীয় স্থান অধিকারী জাপান। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে মূলপর্ব।
বাছাইয়ের দ্বিতীয়পর্বে বাংলাদেশ খেলছে ‘বি’ গ্রুপে। অন্য দুই প্রতিপক্ষ চীন ও স্বাগতিক মিয়ানমার। বাংলাদেশের পরের ম্যাচ আগামী ১ মার্চ। প্রতিপক্ষ স্বাগতিক মিয়ানমার। গত সেপ্টেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাছাইয়ের প্রথমপর্বে বাহরাইন, লেবানন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ভিয়েতনামকে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দ্বিতীয়পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিল বাংলাদেশের মেয়েরা।
এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইপর্বে (রাউন্ড-২) খেলতে এখন মিয়ানমার অবস্থান করছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৬ জাতীয় নারী ফুটবল দল। তবে দায়িত্বজ্ঞানহীন কা- ঘটিয়ে রহস্যজনকভাবে দলের সঙ্গে সেখানে যাননি ম্যানেজার আমিরুল ইসলাম বাবু। জানা গেছে তিনি দেশেই আছেন। ব্যস্ত নিজের ব্যবসা ও মোহামেডান ক্লাবের ম্যানেজারি নিয়ে। তার মানে দেশ বা জাতীয় দলের চেয়েও তার কাছে ক্লাব বা ব্যক্তিগত কাজই বড়। এর আগেও তিনি এমন কান্ড করেছেন। নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব ছেড়ে ব্যস্ত ছিলেন অন্য কাজে। তবে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) এ জন্য তাকে আগেও যেমন সতর্ক করেনি বা শাস্তি দেয়নি, তেমনি এবারও করবে কি না সন্দেহ আছে। ‘প্রচারের কাঙাল’ এই বাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে তিনি নিজের চেহারা ও ছবি মিডিয়ায় দেখাতে অসাধু পন্থা অবলম্বন করেন।