প্রতারণা বন্ধ হোক

8

দূষণ, ভেজাল খাদ্য গ্রহণসহ নানা কারণে বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের প্রকোপ ক্রমেই বাড়ছে। নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের পরেই রয়েছে জরায়ু গ্রিবার (সারভিক্স) ক্যান্সারের প্রকোপ। আক্রান্তদের একটি বড় অংশই চিকিৎসার বাইরে থেকে যায়। তার পরও বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১২ হাজার নতুন রোগী শনাক্ত হয় এবং ছয় হাজারের বেশি মৃত্যু হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দক্ষ লোকবল বাড়িয়ে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত নারীদের বিভিন্ন ক্যান্সার শনাক্ত করার পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতি খুবই কম। অথচ ক্রমেই বাড়ছে জরায়ু গ্রিবার ক্যান্সার। আর এর সুযোগ নিচ্ছে নানা ধরনের প্রতারকচক্র। টিকা ও চিকিৎসার নামে মানুষকে প্রতারিত করছে। প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবির সদস্যরা প্রতারণার অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছেন। জানা যায়, গত দুই বছরে ঢাকা, গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় এই চক্রটি ক্যান্সারের ভুয়া টিকা বিক্রি করে প্রায় চার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রায় ছয় হাজার নারী এদের প্রতারণার শিকার হয়েছে এবং ভুয়া টিকা নিয়ে অনেকেই নানা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
সারভাইক্যাল ক্যান্সার বা জরায়ু গ্রিবার ক্যান্সারের জন্য মূলত দায়ী হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি)। প্রাথমিক অবস্থায় এই ক্যান্সার শনাক্ত হলে আরোগ্যের হার হয় অনেক বেশি। এ জন্য জাতীয় ভিত্তিতে স্ক্রিনিং বা সংক্রমণযোগ্য সবার, বিশেষ করে ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সের সব নারীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করা জরুরি বলে মনে করা হয়। এর পাশাপাশি রোগটি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়িয়ে সবাইকে রোগ প্রতিরোধে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সেই সঙ্গে চিকিৎসার সুযোগও বাড়াতে হবে। কিন্তু কোনো ক্রমেই প্রতারক শ্রেণিকে সুযোগ করে দেওয়া যাবে না। তাদের ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। গ্রেপ্তারকৃত প্রতারকরা যে পদ্ধতিতে টিকা বানিয়েছে তা জরায়ু গ্রিবার ক্যান্সার প্রতিরোধে কোনো কাজই করবে না। মানুষকে এ ধরনের টিকা না নেওয়ার জন্য সচেতন করতে হবে। টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন করে সেগুলো কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।
বাংলাদেশে নারীরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় স্তন ক্যান্সারে। এর পরই রয়েছে জরায়ু গ্রিবার ক্যান্সারের প্রকোপ। উভয় ক্যান্সারের প্রকোপ কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে আমাদের আরো উদ্যোগী হতে হবে। দেশে ক্যান্সার চিকিৎসা ও রোগ নির্ণয়ের সুযোগ খুবই কম, তা বাড়াতে হবে। শুধু টিকা নয়, ক্যান্সারের ওষুধ নিয়েও প্রতারণা হয়। তাই ক্যান্সারের নামে অপচিকিৎসা এবং ওষুধ ও টিকা নিয়ে সব ধরনের প্রতারণা বন্ধ করতে হবে। প্রতারণার সঙ্গে জড়িতদের কঠিন শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।