নির্বাচনের সময়, বিশেষ করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় সংঘাত-সহিংসতা বাড়ে। অনেক দিন ধরে বাংলাদেশে এ ‘রীতি’ দেখা যাচ্ছে। রাজনৈতিক দলে বা রাজনৈতিক পরিসরে গণতান্ত্রিক চর্চার অভাব এর মূল কারণ। সরকার, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নির্বাচন কমিশনের শিথিলতা, সামর্থ্যরে অভাব, রাজনৈতিক চাপ প্রভৃতি বিষয়ও নির্বাচনকালীন সংঘাত-সহিংসতার কারণ। বিভিন্ন সময়ে অসাংবিধানিক উপায়ে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতায় ছেদ ঘটার কারণে গণতন্ত্র চর্চা বিঘ্নিত হয়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাব যে রাজনৈতিক অসূয়া তৈরি করেছে তার জেরও টানতে হচ্ছে রাজনৈতিক দল, নির্বাচনসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং জনগণকে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ৩০ ডিসেম্বর। এখন রাজনৈতিক দলগুলো প্রার্থী চূড়ান্ত করার কাজে ব্যস্ত। মনোনয়নপত্র কেনার প্রথম দিনেই ঢাকার মোহাম্মদপুরে ক্ষমতাসীন দলের দুই পক্ষের কোন্দলে দুজন নিহত হয়েছে। কয়েক দিন পর নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র বিতরণের দিন রাস্তা দখল করে মিছিল করার সময় দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রচুর গাড়ি ভাঙচুর করে এবং গাড়িতে আগুন দেয়। আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হলে প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষগুলো সংঘাত-সহিংসতায় জড়াবে না, তা বলা যায় না। অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ উঠবে। এরই মধ্যে উঠতে শুরু করেছে।
বিএনপি ‘গায়েবি ও মিথ্যা’ রাজনৈতিক মামলার একটি তালিকা নির্বাচন কমিশনের কাছে দিয়েছে। মামলাগুলো ২০১২-২০১৫ সালের অর্থাৎ তফসিল ঘোষণার অনেক আগের ঘটনা। বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বলেন, এসব মামলার আসামিদের গ্রেফতার না করার জন্য পুলিশকে নির্দেশনা দিতে কমিশনের কাছে আবেদন জানিয়েছে বিএনপি। কমিশন বলেছে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার পূর্ণাঙ্গ তথ্য তারা পায়নি। তাই ব্যবস্থা নিতে পারেনি। সিইসি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্দেশে বলেন, মামলাগুলো ভালো করে খতিয়ে দেখতে হবে, মেরিটলেস মামলা বাদ দিতে হবে। কাউকে হয়রানি করা ঠিক হবে না। তবে নাশকতামূলক ও ফৌজদারি অভিযোগের মামলা থাকলে খতিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। পরে তিনি গণমাধ্যমকে জানান, নির্বাচনকালে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আগামী ১৫ ডিসেম্বরের পর পুলিশের সঙ্গে মাঠে থাকবে সশস্ত্র বাহিনীর ছোট টিম। প্রসঙ্গত, নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি ছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে যথানির্দেশনাই দিয়েছেন সিইসি। রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ থাকতে পারে বা অভিযোগ আমলে না নেওয়ার জন্য চাপ থাকতে পারে। এসব যথাসম্ভব এড়িয়ে নির্বাচন কমিশনকে দৃঢ় থাকতে হবে। প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কমিশনের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। ঢালাও গ্রেফতার ও হয়রানির ঘটনা যাতে না ঘটে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।