কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন উপলক্ষে দেশজুড়ে ৭৫ লাখ টিকা প্রদানের মহাযজ্ঞ পরিচালনা করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার ইউনিয়ন, ওয়ার্ড থেকে শুরু করে সিটি কর্পোরেশন ও শহরজুড়ে সরকারী, বেসরকারী ও স্বেচ্ছাসেবীসহ প্রায় ৮০ হাজার লোকের অংশগ্রহণে দিনব্যাপী চলে টিকাদান ক্যাম্পেন। সকাল ৯টা থেকে সারাদেশের নির্ধারিত টিকা কেন্দ্রগুলোয় এই কার্যক্রম শুরু হয়ে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে। তবে যেসব কেন্দ্রে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি সেসব কেন্দ্রে টিকাদান চলমান থাকবে। এদিকে সোমবার পর্যন্ত দেশে টিকার আওতায় এসেছেন ৪ কোটি ১৩ লাখ ৮০ হাজার ৭৬০ মানুষ। মঙ্গলবার ৭৫ লাখ টিকা প্রদানের ফলে দেশ প্রায় ৫ কোটি টিকা প্রদানের মাইলফলকের পথে।
এদিন টিকাদান কেন্দ্র পরিদর্শনে এসে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস বলেছেন, (মঙ্গলবার) কেউ টিকা ছাড়া ফিরে যাবে না। রাজধানীর ধানমণ্ডির ১৫ নম্বর ওয়ার্ড টিকাদান কেন্দ্র পরিদর্শনে এসে তিনি একথা বলেন। অনেকেই নিবন্ধন করে দুই-তিন মাস ধরে এসএমএস পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন। তাদের অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত, সেই হিসেবে আমরা দিয়েছি। এর ভেতরে যদি কোন বয়স্ক মানুষ চলে আসেন আমরা তাদেরও টিকা দেব। সিদ্ধান্ত হচ্ছে কেউ ফিরে যাবে না। তিনি আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে যতক্ষণ সময় প্রয়োজন ততক্ষণ দেয়া হবে। (মঙ্গলবার) টার্গেট পূরণ না হলে আজ (বুধবার) টিকা দেয়া হবে।
আহমেদ কায়কাউস বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী জন্ম নিয়েছিলেন এই দিনে। এজন্য আমরা আমাদের ব্যাপক কর্মসূচী এই শুভক্ষণে শুরু করেছি। কারণ, আমরা মনে করি এটি বাঙালী জাতির জন্য একটি শুভক্ষণ। দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করছিলাম এই ব্যাপক টিকাদান কর্মসূচী হাতে নিতে। এখন আমাদের হাতে টিকা আছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে (মঙ্গলবার) দিনকে ঠিক করেছি।
তিনি বলেন, (মঙ্গলবার) থেকে আমরা বড় বড় অঙ্কের টিকা দেব; যাতে অপেক্ষমাণ যারা তাদের সংখ্যা কমে আসে। তারপর বয়সসীমাÑ যেটা ২৫ বছর পর্যন্ত আছে, সেটা আমরা ধাপে ধাপে কমিয়ে আনব। আমরা আশা করছি, এই বছরের শেষে কিংবা আগামী বছরের প্রথম ভাগে যে ৮০ ভাগ মানুষকে টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তা পূরণ করতে পারব।
এদিন সারাদেশের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয় হাসপাতাল, শেখ রাসেল গাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালেও এই কর্মসূচী পালিত হয়। সরেজমিনে রাজধানীর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ টিকাকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সকাল ৯টা থেকে টিকাদান কর্মসূচী শুরু হলেও ১২টা নাগাদ টিকাপ্রত্যাশীদের লাইন হাসপাতালের মূল ফটক পেরিয়ে প্রধান সড়কে এসে পৌঁছে। দীর্ঘদিন যাবত রেজিস্ট্রেশন করেও এসএমএস না পাওয়ায় হতাশাগ্রস্তদের মুখে এদিন ছিল স্বস্তির হাসি। রাজধানীর নীলক্ষেত এলাকা থেকে টিকা নিতে আসা সালমা আক্তার বলেন, আগস্ট মাসে সুরক্ষা এ্যাপে নিবন্ধন করেছি। সেপ্টেম্বর পুরোটা কেটে গেলেও এসএমএস আসেনি। আজ (মঙ্গলবার) প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে এমন উদ্যোগ নেয়ায় ধন্যবাদ জানাচ্ছি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে। স্বস্তির কথা বলেন সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে টিকা নিতে আসা মেহেরুন্নেসা মৌও। তিনি বলেন, আগস্ট মাসের ২ তারিখ রেজিস্ট্রেশন করেছিলাম। গত (সোমবার) এসএমএস এসেছে। একপর্যায়ে তো টিকা নেয়ার আশায়ই ছেড়ে দিয়েছিলাম। দেরিতে হলেও (মঙ্গলবার) পাচ্ছি যাক বাবা।
তবে প্রত্যাশিত টিকা পেতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ক্লান্ত-শ্রান্ত অবস্থায় হাঁপাতে দেখা যায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল কেন্দ্রে টিকা নিতে আসা আশফাক উদ্দিনকে। বলেন, টিকা কার্ড আর জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে সেই সকাল ৮টায় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। এখন দুপুর ১২টা। এখনও লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। কখন টিকা পাব কে জানে? একই হাসপাতালে টিকা নিতে আসা সৌদি প্রবাসী রুহুল কুদ্দুস বলেন, এরকম গণটিকার ব্যবস্থা করে যদি প্রবাসীদের টিকা দেয়া হতো তাহলে আমাদের এত ভোগান্তি হতো না। সাংবাদিকদের মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতি আমাদের অনুরোধ আমাদের জন্যও এরকম ক্যাম্পেন করুন। তাহলে দিনের পর দিন লাইনে দাঁড়িয়ে টিকার জন্য ভোগান্তি পোহাতে হবে না আমাদের।
তবে কোন ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই রাজধানীর ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ধানমণ্ডি ৮ নম্বরের ডিঙ্গি রেস্টুরেন্ট সংলগ্ন ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের টিকাকেন্দ্রের টিকা পেয়েছেন মানুষজন। সকাল থেকেই সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা গ্রহীতারা টিকা নেয়ার জন্য অপেক্ষা করেছেন। টিকা নিতে আসা ব্যক্তিদের সহযোগিতার জন্য বেশ কয়েক স্বেচ্ছাসেবকেও কাজ করতে দেখা যায়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে তারা মাইকে নির্দেশনা দিচ্ছিলেন। টিকা পেয়ে খুশি কলাবাগানের বাসিন্দা শাহনাজ বেগম। তিনি বলেন, আমি আগেই নিবন্ধন করেছিলাম। আজকে টিকা নিতে পেরেছি। সকাল সাড়ে নয়টায় লাইনে দাঁড়িয়ে সাড়ে ১০টার সময়ই টিকা নিয়েছি।
টিকাদান কর্মসূচী প্রসঙ্গে এ সময় ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন মইনুল আহসান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে ৭৫ লাখ টিকা দেয়ার কর্মসূচী চলছে। সকাল থেকেই দেশব্যাপী এ ভ্যাকসিন ক্যাম্পেন শুরু হয়েছে। আমি ঢাকার বেশ কয়েকটি কেন্দ্র পরিদর্শন করেছি। যারা ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে এসেছেন তাদের সঙ্গেও কথা বলেছি। ভ্যাকসিন গ্রহীতার সবাই সন্তুষ্ট। কারো কাছ থেকে এখনও কোন অভিযোগ পাইনি।
এর আগে সোমবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডাঃ আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম লাইভে এসে বলেন, যে গণটিকাদান কর্মসূচী সারাদেশে পরিচালিত হবে সেখানে আমরা শুধু প্রথম ডোজের টিকা দেব এবং একইভাবে আগামী মাসের একই তারিখে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেব। আর এজন্য প্রয়োজনীয় সব মালামাল সারাদেশে সরবরাহ করেছি, সে কাজ চলছে। ক্যাম্পেন শুরু হবে সকাল ৯টায় এবং আমাদের লক্ষ্যমাত্রায় না পৌঁছা পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে টিকাদান চলমান থাকবে। শেষ টিকা প্রদানের পর আমাদের টিম এক ঘণ্টা অবস্থান করবে। স্থানীয়ভাবে টিকাদানের সময় পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করতে পারবে। কোনভাবেই আমাদের ইপিআই সেশনের টিকা দেয়া বন্ধ রাখা যাবে না।
এই ক্যাম্পেনে আগে থেকে নির্ধারিত জনগোষ্ঠী ২৫ বছর বয়সী বা তদুর্ধ তাদের এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে জানিয়ে অধ্যাপক খুরশীদ আলম বলেন, চল্লিশোর্ধ জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার দেব এখানে। সঙ্গে বয়স্ক, নারী ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের আমরা বিবেচনায় রাখব। টিকা পাবেন না স্তন্যদায়ী মা ও অন্তঃসত্ত্বা নারী। ভ্যাকসিন নেয়ার সময় জাতীয় পরিচয়পত্র ও টিকা কার্ড সঙ্গে আনতে হবে।
প্রসঙ্গত, দেশে এখন পর্যন্ত টিকা এসেছে ৫ কোটি ৪৫ লাখ ৮৫ হাজার ৮০ ডোজ। এর মধ্যে সোমবার পর্যন্ত ৪ কোটি ১৩ লাখ ৮০ হাজার ৭৬০ ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ এই মুহূর্তে টিকা মজুদ আছে ১ কোটি ৩২ লাখ ৪ হাজার ৩২০ ডোজ । এখন পর্যন্ত প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে ২ কোটি ৪৮ লাখ ৮০ হাজার ৮৯৪ জনকে এবং দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ১ কোটি ৬৪ লাখ ৯৯ হাজার ৮৬৬ জন। আর সোমবার দুই ডোজ মিলিয়ে দেয়া হয়েছে ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৬৫৪ ডোজ টিকা।