দূষণ, ভেজাল ও খাদ্যাভ্যাসজনিত নানা কারণেই রোগব্যাধি বাড়ছে। একইভাবে বাড়ছে নানা ধরনের ক্যান্সারও। জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের তথ্য মতে, ২০১২ সালেও হাসপাতালটির বহির্বিভাগে রোগী ছিল বছরে ৫৯ হাজার। গত বছর এ সংখ্যা দুই লাখ ছাড়িয়েছে। অর্থাৎ পাঁচ বছরে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় চার গুণ। হাসপাতালে আসা পুরুষ রোগীদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সার সবচেয়ে বেশি, নারীদের মধ্যে বেশি স্তন ক্যান্সার। জরায়ুর ক্যান্সারও বাড়ছে খুব বেশি পরিমাণে। এ ছাড়া খাদ্যনালি, মুখ, পরিপাকতন্ত্র ও লিভারের ক্যান্সারও বাড়ছে। এভাবে ক্যান্সার বৃদ্ধির কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ধূমপান, মুখে তামাক গ্রহণ, মারাত্মক পরিবেশদূষণ, খাদ্যে ভেজাল ও রাসায়নিক উপাদানের মিশ্রণ, শাকসবজি-ফলমূলে কীটনাশক প্রয়োগ, নানা ধরনের ক্ষতিকর প্রিজারভেটিভের ব্যবহার ইত্যাদি। ক্যান্সারসহ অন্যান্য রোগ সৃষ্টির এই কারণগুলো রোধ করার কার্যকর উদ্যোগ নেই বললেই চলে। ক্যান্সার প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রমও অনুপস্থিত। চিকিৎসার সুবিধাও খুবই কম। ফলে ক্যান্সারে মৃৎত্যুর হারও দিন দিন বাড়ছে। এ অবস্থা কি চলতেই থাকবে?
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী দেশে এখন ১২ লাখের মতো ক্যান্সার রোগী। প্রতিবছর নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে আরো প্রায় তিন লাখ। তাদের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসার আওতায় আসছে বছরে মাত্র ৫০ হাজার। বাকিরা চিকিৎসার বাইরে থেকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। রোগের শেষ ধাপে কাউকে কাউকে হাসপাতালে আনা হলেও কোনো লাভ হয় না। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে নারীরা। রোগের প্রথম দিকে তারা লজ্জায় কাউকে তা বলতে চায় না। এরপর বলা হলেও পরিবারের পুরুষ কর্তা সেটিকে তেমন আমলে নেন না। চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ায় অনেক নারীর চিকিৎসা মাঝপথেও থেমে যায়। এসব ক্ষেত্রে একটি রাষ্ট্রীয় নীতিমালা থাকা প্রয়োজন। দরিদ্র নারীদের জন্য চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে হবে। পাশাপাশি দ্রুততম সময়ে অন্তত উপজেলা পর্যায়ে ক্যান্সারের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসার সুযোগ সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন।
ক্যান্সারের দ্রুত প্রসার ঠেকাতে হলে প্রতিরোধের ওপরই সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে। খাদ্যে ভেজাল রোধে কঠোরতর পদক্ষেপ নিতে হবে। ভেজালকারীদের বিচার দ্রুততর করা এবং সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি। উৎপাদনকারীরা শাকসবজি ও ফলমূলে যেন ক্ষতিকর মাত্রায় কীটনাশক বা ফরমালিন মেশাতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। বাজারগুলোতে নিয়মিত এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা রাখতে হবে। মাছ, মাংস, দুধেও ক্ষতিকর রাসায়নিক বা বিষাক্ত উপাদানের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। তাই এগুলোও পরীক্ষা-নিরীক্ষার আওতায় আনতে হবে। পরিবেশদূষণের মাত্রা কমিয়ে আনতে হবে। বায়ুদূষণের দিক থেকে ঢাকা এখন সারা পৃথিবীতেই একটি নিকৃষ্ট শহর। এটিও ফুসফুসের ক্যান্সার বেড়ে যাওয়ার একটি কারণ। সেই সঙ্গে আছে পানিদূষণ, মাটিদূষণ। এগুলো কমাতে হবে। পাশাপাশি মানুষকে খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রা সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। ক্যান্সার বৃদ্ধির এই গতি কোনোভাবেই কাম্য নয়।