জকিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা
পরিবহন শ্রমিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন সিলেটের সীমান্তঞ্চল জকিগঞ্জের মানুষ। যেকোন ইস্যু নিয়েই হুট করে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়ে যাত্রীদের জিম্মি করা এখন তাদের স্বভাবে পরিণত হয়েছে বলে যাত্রীদের ধারণা। সোমবার থেকে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে চারদফা দাবী আদায়ে সিলেট জেলা পরিহবহন শ্রমিক ঐক্য পরিষদ অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট পালন শুরু করেছে। সকাল হতে জকিগঞ্জে কোন যানবাহন চলাচল করেনি। এতে যাত্রীরা চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েন। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, চাকুরীজীবী, ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ ঘন্টার পর ঘন্টা সড়কে দাঁড়িয়ে পরিবহন না পেয়ে অনেকে হেঁটে গন্তব্যে পৌছতে বাধ্য হয়েছেন। পরিবহন শ্রমিকরা ধর্মঘট পালন করতে সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে অবস্থান নেয়। কিন্তু পুলিশি টহলের কারণে সড়কে দাঁড়াতে পারেনি ধর্মঘটকারীরা।
রবিবার উপজেলা আইনশৃংখলা কমিটির সভায়ও। স্থানীয় যাত্রী সাধারনের সুবিধার্থে নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যদিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার অনুমতি নিয়ে টমটম চালানোর প্রস্তাব করা হয় সভায়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জেলা প্রশাসকের সাথে আলোচনা করে ধর্মঘট প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেয়ার সিন্ধান্ত হয়।
এদিকে যাত্রীদের জিম্মি করে পরিবহন শ্রমিকরা তাদের দাবী বাস্তবায়নের চেষ্টা করায় বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে সর্বস্তরের মানুষ। বিগত মার্চ মাসে সড়ক সংস্কারের দাবিতে পরিবহন শ্রমিকরা ধর্মঘটের ডাক দিলে সাধারণ মানুষ তাদের দাবীর প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেছিলো। কিন্তু এবার চার দফা দাবী আদায়ে শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটে সাধারণ মানুষ পরিবহন শ্রমিকদের প্রতি ক্ষুব্ধ। নাজির আহমদ নামের একযাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সকাল থেকে সড়কে দাঁড়িয়ে কোন গাড়ী পাইনি। পরিবহন শ্রমিকরা যাত্রীদের জিম্মি করে তাদের দাবী আদয়ের চেষ্টা করে। এটা মোটেও কাম্য নয়। পরিবহন শ্রমিকরা যাত্রীদের নিয়ে তামাশা বন্ধ করতে হবে।
পরিবহন শ্রমিকদের চারদফা দাবীর মধ্যে রয়েছে, জকিগঞ্জ উপজেলায় ব্যাটারী চালিত অটোবাইক, টমটম, ব্যাটারি চালিত রিক্সা দ্বারা যাত্রী পরিবহন, ট্রলি দ্বারা মালামাল পরিবহন বন্ধ, জকিগঞ্জ-সিলেট সড়ক সংস্কার ও জকিগঞ্জে পরিবহন শ্রমিকদের উপর পুলিশী হয়রানি বন্ধ।
এ ব্যাপারে সিলেট বিভাগীয় পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সমিতির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা সেলিম আহমদ ফলিক বলেন, পরিবহন শ্রমিক ঐক্য পরিষদের পূর্ব নির্ধারিত চার দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ায় সোমবার সকাল ৬টা থেকে জকিগঞ্জ উপজেলার সব ক’টি সড়কে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট চলছে। শ্রমিকদের চার দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার জকিগঞ্জ শহরের এম এ হক চত্তরে আয়োজিত শ্রমিক সমাবেশে প্রশাসনকে ১০ তারিখ পর্যন্ত সময় দিয়েছিলাম। এর আগে গত ২৮শে আগস্ট এ সকল দাবি ১০ সেপ্টেম্বরের ভিতরে বাস্তবায়নের জন্য সিলেটের জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। কিন্তু বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব সমস্যা সমাধানের কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় এ ধর্মঘটের পালিত হচ্ছে।
জকিগঞ্জ উপজেলা টমটম শ্রমিক ঐক্য পরিষদ সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বলেন, জকিগঞ্জের গ্রামাঞ্চলে আমরা যাত্রী সাধারণ বহন করে আসছি। টমটম বন্ধ হলে সহস্রাধিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
জকিগঞ্জ থানার ওসি জানান, সীমান্তবর্তী উপজেলায় গভীর রাতে বহিরাগত দুষ্কৃতিকারীরা জকিগঞ্জে যাতায়াত করার কারণে চুরি, ডাকাতি ও মাদক বন্ধে অতিরিক্ত সতর্কতা হিসাবে পুলিশ গাড়ী চলাচল নিয়ন্ত্রণের রাখার চেষ্টা করছে। বিনা কারণে কাউকে হয়রানী করা হচ্ছে না।
সিলেটের জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার বলেন, অবৈধ পরিবহনের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছে। এর পরেও নির্দিষ্ট একটি উপজেলায় পরিবহন ধর্মঘট অযৌক্তিক। বিষয়টি নিয়ে পরিবহন নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা হচ্ছে।