সড়ক সংস্কারসহ বিভিন্ন উন্নয়নে সিসিক পেল মাত্র দুই কোটি টাকা

4

কাজির বাজার ডেস্ক

২০২২ সালের বন্যায় পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল সিলেট মহানগরীর বেশিরভাগ সড়ক। সেই ক্ষততে প্রলেপ লাগার আগেই ২০২৪ সালে ফের বন্যায় আক্রান্ত হয় সিলেট। বন্যায় ক্ষতবিক্ষত সড়ক সংস্কারে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) ৫৮৮ কোটি টাকার প্রকল্প জমা দিয়েছিল মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু বরাদ্দ মিলেছে মাত্র ২ কোটি টাকা। অর্থ সংকটে মহানগরের বেহাল সড়কে লাগেনি সংস্কারের ছোঁয়া। ফলে খানাখন্দ আর ভঙ্গুর সড়কের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। সিসিক সূত্র জানায়, ২০২২ সালের এপ্রিল ও জুন মাসে দুইদফা বন্যায় আক্রান্ত হয় সিলেট নগরী। দীর্ঘমেয়াদী বন্যায় সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকার সড়ক অনেক দিন ধরে পানিতে নিমজ্জিত ছিল। বন্যার পানি নেমে গেলে বেহাল হয়ে পড়ে প্রায় ২১০ কিলোমিটার সড়ক। উপরের পিচ ওঠে গিয়ে কোথাও কোথাও পাথর বের হয়ে আসে। কোন কোন সড়কে তৈরি হয় বড় বড় খানাখন্দ। ফলে ওইসব সড়ক দিয়ে যান চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। গর্তে পড়ে প্রায়ই ছোটখাটো দুর্ঘটনাও ঘটতে শুরু করে। সড়ক মেরামতের জন্য বন্যার পর সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে প্রথমে ৪২২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। ওই প্রকল্পের মধ্যে ২০১ কিলোমিটার সড়ক ছাড়াও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া কুশিঘাট পানি শোধনাগারের দেড় কিলোমিটার আরসিসি ওয়াল, ৩০ কিলোমিটার ফুটপাতের বøক ও ৫ হাজার বৈদ্যুতিক খুঁটি মেরামতের কাজ অন্তভর্‚ক্ত ছিল। পরবর্তীতে নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি পেলে রি-শিডিউল করে পুনর্মূল্যায়ন করে ৫৮৮ কোটি টাকার সংশোধিত প্রকল্প জমা দেওয়া হয় মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ মিলে মাত্র ২ কোটি টাকা।
এদিকে, ২০২৪ সালের বন্যায় ফের ক্ষতিগ্রস্থ হয় নগরীর সড়ক। নতুন করে ৯৬ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে পাঠানো হয় প্রকল্প। ৪৮ কোটি টাকার এসপল্ট ও সমপরিমাণ টাকার আরসিসি সড়ক সংস্কারের জন্য এই টাকা চাওয়া হলেও কোন বরাদ্দ পায়নি সিসিক।
নগরী ঘুরে দেখা গেছে কালিঘাট, কদমতলী বাসটার্মিনাল, পাঠানটুলা, শিবগঞ্জ, শিববাড়ি, হুমায়ূন রশিদ চত্বরসহ বিভিন্ন এলাকার সড়ক বেহাল হয়ে পড়েছে। কোন কোন সড়কের পিচ ওঠে গ্রামীণ সড়কে রূপ নিয়েছে। খানাখন্দে ভরা সড়ক দিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। পথচারীদেরও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এই বেহাল সড়কগুলোর কারণে।
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, বরাদ্দ না পাওয়ায় সড়কগুলো মেরামত করা সম্ভব হয়নি। নগরবাসীর সুবিধার্থে ক্ষতিগ্রস্থ সড়কগুলোর খানাখন্দ ভরাট ও যৎসামান্য সংস্কার করা হয়েছে। ঠেকসই মেরামত করতে না পারায় সংস্কারকৃত সড়কগুলো কয়েকদিন পর পর ফের বেহাল হয়ে পড়ছে। ফলে জনদুর্ভোগ লাঘব করা সম্ভব হচ্ছে না। মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ না দেওয়ায় নিজস্ব খাতের অর্থায়ন থেকে ‘ঠুকঠাক’ সংস্কার করা ছাড়া কিছুই করার নেই সিটি করপোরেশনের।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানান, সিলেট সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন নগরীর ১০৬৮ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে গত বছরের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ২০১ কিলোমিটার। ক্ষতিগ্রস্থ সড়ক, ফুটপাতের বøক, বৈদ্যুতিক খুঁটি ও পানি শোধনাগারের আরসিসি ওয়াল মেরামতের জন্য মন্ত্রণালয়ে ৫৮৮ কোটি টাকার প্রকল্প জমা দেওয়া হলেও বরাদ্দ মিলেছে মাত্র ২ কোটি টাকা। ফলে ক্ষতিগ্রস্থ সড়ক মেরামত সম্ভব হয়নি।