ভূমিকম্পে নিহত ৫, হেলে পড়েছে বহু ভবন ॥ নেপালে লাশের মিছিল

65

VAকাজিরবাজার ডেস্ক :
সারাদেশে ভূমিকম্পে পাঁচজন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। ভূমিকম্পে বহু ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। এছাড়া রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বহু ভবন হেলে পড়েছে।
সারাদেশে শনিবার দুপুর সোয়া ১২টা এবং আধা ঘণ্টা পর ফের ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। দু’দফাতেই মিনিটখানেক স্থায়ী থাকে কম্পন।
ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নেপালের পোখারায়। উৎপত্তিস্থলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭.৯। নিমিষেই এ কম্পন ভারত ও বাংলাদেশে ছড়িয়ে যায়। উত্তর ও উত্তর-পূর্ব ভারতে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭.৫।
ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় এক স্কুলভবন ধসে এক ছাত্র নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আরো সাত ছাত্র আহত হয়েছে।
এদিকে পাবনায় ভূমিকম্পের সময় আওয়ামী লীগ নেত্রী ও টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে এক নারীর মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
ভূমিকম্প টের পেয়ে দ্রুত নামতে গিয়ে সাভারের আল মুসলিম গার্মেন্টের শতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছেন। পরে আহতদের মধ্যে একজন মারা যান। একই কারণে কুমিল্লা ইপিজেডে নয় শ্রমিক আহত হয়েছেন। গাজীপুরের শ্রীপুরে রিদিশা নামক একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের বহুতল ভবন  হেলে পড়েছে।
এছাড়া কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে ভূমিকম্প আতঙ্কিত হয়ে আবুল হেকিম নামে এক বৃদ্ধ মারা গেছেন।
ভূমিকম্পে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে একটি বহুতল ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। বঙ্গবাজারের বরিশাল প্লাজা নামে ৫ তলা একটি ভবন হেলে পড়েছে। যাত্রাবাড়ীতেও দু’টি ভবন হেলে পড়ার খবর পাওয়া গেছে।
পুরান ঢাকার বংশালে একটি ছয় তলা ভবন হেলে পড়েছে। বংশালের ২৪৯/১ নম্বর ওই ভবনের পুরোটাজুড়ে জুতা ও ব্যাগের কারখানা। স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ওই ভবন থেকে কারখানার সবাইকে নামিয়ে দিয়ে ফটকে তালা লাগিয়ে দিয়েছে।
রাজধানীর শ্যামলীতে হেলে পড়েছে আশা টাওয়ারসহ তিন ভবন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। অন্য দুটি ভবন হলো- এরশাদ নগরের একটি ৬ তলা ভবন ও নবাবপুরের আরেকটি বহুতল ভবন।
সিলেট, নীলফামারী, রংপুর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও, ফরিদপুর প্রতিনিধি জানান, এসব এলাকায় দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ভূকম্পন অনুভূত হয়।
প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর অনুযায়ী, রাজশাহীর কয়েকটি ভবন, সাতক্ষীরার একটি শপিং মল হেলে পড়েছে। এছাড়া রংপুরের একটি বহুতল ভবন ও কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে।
এদিকে ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত হিমালয় কন্যা নেপাল, বিধ্বস্ত রাজধানী কাঠমান্ডু। ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে আছে হাজার হাজার মানুষ। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রাণহানি। এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি অসংখ্য মানুষকে। সময় যত পেরোচ্ছে তাদের জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনা ততই কমে আসছে।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শনিবার দুপুরে আঘাত হানা ভূমিকম্পে প্রাণহানির সংখ্যা হাজার পেরিয়ে গেছে।
শনিবার (২৫ এপ্রিল) স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ৪১ মিনিটে (বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১২টা ১১ মিনিট) রাজধানী কাঠমান্ডু সহ নেপালের বিভিন্ন স্থানে আঘাত হানে রিখটার স্কেলে ৭.৯ মাত্রারএই ভূমিকম্পটি ।
কাঠমান্ডু ও পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর পোখারার মধ্যবর্তী লামজুংয়ের ভূগর্ভের ৯.৩ মাইল গভীরে ছিলো এর উৎপত্তিস্থল। কাঠমান্ডু থেকে লামজুং প্রায় ৮০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত।
মূল কম্পনের পর অনুভূত হয় আরও বেশ কয়েকটি মাঝারি ও মৃদু মাত্রার কম্পন। মার্কিন ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস এর তথ্য অনুযায়ী প্রথম ভূমিকম্পটির ২৬ মিনিট পর দ্বিতীয় এবং এর ৮ মিনিট পর তৃতীয় ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। সব মিলিয়ে বিভিন্ন মাত্রার মোট ১৫-১৭টি কম্পন অনুভূত হয় বলে জানায় স্থানীয়রা।
রাজধানী কাঠমান্ডু ছাড়াও নাগরকোট, কোদারি ও পানাওতি সহ পুরো নেপাল জুড়েই অনুভূত হয় এই কম্পন।
ভূমিকম্পে কাঠমান্ডুর বিভিন্ন ভবন ধসে পড়েছে। ভেঙ্গে পড়েছে বহু প্রাচীন মন্দির, স্থাপনা ও ঐতিহাসিক ভবন। অসংখ্য মানুষ এসব ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও চাপা পড়ে আছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।
কাঠমান্ডুর প্রাণকেন্দ্রে নয় তলা বিশিষ্ট একটি প্রাচীন টাওয়ার ধসে এর নিচে চাপা পড়েছেন চার শতাধিক মানুষ।
১৮৩২ সালে নির্মিত হয়েছিলো ধারাহারা টাওয়ার নামে পরিচিত কাঠমান্ডুর ওই প্রাচীন নিদর্শনটি। প্রতিদিনই প্রচুর দর্শনার্থী ভীড় করতেন টাওয়ারটি দেখতে। এখন পর্যন্ত ওই ধ্বংসস্তূপ থেকে ১৩০টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম।
এছাড়া ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের অন্তর্গত কাঠমান্ডুর রাজপ্রাসাদ, প্রাচীন বেশ কয়েকটি মন্দিরও এই ভূমিকম্পে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ভূমিকম্পের কারণে নেপালের হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলেও ব্যাপক তুষার ধসের খবর পাওয়া গেছে।
ভূমিকম্পের পরপরই অ্যালেক্স গ্যাভেন নামের এক পর্বতরোহী এভারেস্টের একটি বেস ক্যাম্প থেকে তাৎক্ষণিকভাবে তুষার ধসের বিষয়টি সংবাদমাধ্যমকে অবহিত করেন।
ইতোমধ্যেই এভারেস্ট সংলগ্ন হিমালয়ের বিভিন্ন স্থান থেকে থেকে তুষারধসে চাপা পড়ে নিহত ৮ পবর্তরোহীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে নেপালের পর্যটন মন্ত্রণালয়।
পর্যটন মওসুম শুরু হওয়ায় এই মুহূর্তে কমপক্ষে তিন লাখ পর্যটক নেপালে অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছে দেশটির পর্যটন কর্তৃপক্ষ।
ভূমিকম্পে কাঠমান্ডুর ত্রিভূবন আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের রানওয়েতে ফাঁটল দেখা দেয়ায় বিমান ওঠানামা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।শিডিউল ফ্লাইটগুলো প্রতিবেশী ভারতের বিভিন্ন বিমাবন্দরে অবতরণ করছে। বাতিল করা হয়েছে বহু ফ্লাইট।
পাহাড় ধসের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে কাঠমান্ডুর সঙ্গে নেপালের অন্যান্য অঞ্চলের সংযোগ রক্ষাকারী বেশ কয়েকটি সড়ক। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে টেলিযোগাযোগ ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা।
নেপাল ছাড়াও ভূমিকম্পে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রতিবেশী ভারত। নেপাল সীমান্তবর্তী ভারতের বিহার রাজ্যে এখন পর্যন্ত ২৫ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে রাজ্য কর্তৃপক্ষ। এছাড়া উত্তর প্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিম সহ ভারতের অন্যান্য স্থানেও ভূমিকম্প অনুভূত হয়। সব মিলিয়ে ভারতে প্রাণ হারিয়েছেন ৩৬ জন।
হিমালয়ের অপরপ্রান্তে অবস্থিত চীনের তিব্বতেও ভূমিকম্পে ৫ জনের প্রাণহানির খবর দিয়েছে সংবাদমাধ্যম।
অপর দিকে শনিবার (২৫ এপ্রিল) আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্প কাঁপিয়ে দিয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পর্বত এভারেস্টও। ভূমিকম্পের কারণে এভারেস্টে তুষারধসে অন্তত আট জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের সবাই পর্বতারোহী ও শেরপা বলে মনে করা হচ্ছে।
নেপালের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানায়, ভূমিকম্পের কারণে এভারেস্টের একটি বেজ ক্যাম্প (তাঁবু) তুষারধসে চাপা পড়ে যায়। এতে ওই বেজ ক্যাম্পে থাকা আট পর্বতারোহী ও শেরপার মৃত্যু হয়।
তবে, ওই আটজনের মধ্যে কারা কোন দেশের নাগরিক এ ব্যাপারে তৎক্ষণাৎ কিছু জানা যায়নি।
শনিবার (২৫ এপ্রিল) বাংলাদেশ সময় ১২টা ১১ মিনিটে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর অদূরে রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৯ মাত্রার এই ভূমিকম্প আঘাত হানে। মূল কম্পনের আগে ও পরে অনুভূত হয় আরও বেশ কয়েকটি কম্পন।
মার্কিন ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস‘র তথ্য অনুযায়ী, প্রথম ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল রাজধানী কাঠমাণ্ডুর অদূরে পোখরার কাছে লামজুং। এর ২৬ মিনিট পর দ্বিতীয় এবং ৮ মিনিট পর তৃতীয় ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। বিভিন্ন মাত্রার মোট ১৫-১৭টি কম্পন অনুভূত হয় বলে স্থানীয়দের উদ্ধৃতি দিয়ে জানায় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।
ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত নেপালে সাড়ে চারশ’ মানুষের প্রাণহানির খবর নিশ্চিত করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে আরও অন্তত ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে ভারতে।