সিলেটে বড় ধরনের কোন ক্ষয়ক্ষতি নেই

46

স্টাফ রিপোর্টার :
সারাদেশের মতো সিলেটেও বড় মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। ভূমিকম্পে সিলেটের বিভিন্ন এলাকার ঘর-বাড়ি, নগরীর বহুতল ভবন কেঁপে-দুলেছে। আতঙ্কে ঘর থেকে অঙ্গিনা কিংবা রাস্তায় নেমে আসেন মানুষ। তবে এতে বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, ভূমিকম্পের স্থায়িত্ব ছিল কয়েক সেকেন্ড। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল নেপালের পোখরার পার্শ্ববর্তী লামজুংয়ের ৩৫ কিলোমিটার পূর্বে। উৎপত্তিস্থলে রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭.৫। তবে নগরী ও শহরতলীর বিভিন্ন বাসা-বাড়ি, উঁচুতল ভবন ও কোন কোন স্থানে শিক্ষা-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভবনে ফাঁটল দেখা দিয়েছে।
সিলেটের আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭.৫।
সিলেট ফায়াস সার্ভিসের উপ-পরিচালক মোজাম্মেল হক জানান, সিলেটের বিভিন্ন স্থানে আমাদের কর্মকর্তারা তথ্য সংগ্রহ করছেন। তবে এখনো সিলেটে ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির খবর পাইনি।
বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার ইন্সটিটিউ এসোসিয়েশন সিলেটে জোনের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোস্তফা শাহরিয়ার বলেন, দুর্যোগ মোকাবেলার পর্যাপ্ত সক্ষমতা ও প্রস্তুতি নেই। একই সাথে মানা হচ্ছে না ‘বিল্ডিংকোড’ও। এসব কারণে সিলেটে ভবিষ্যতে আরও বড় ধরণের বিপর্যয় দেখাতে দিতে পারে। তিনি বলেন, ঢাকা শহরের তুলনায় এখনো সিলেটে তেমন বহুতল ভবন বা ঢাকার ‘গিঞ্জি’ অবস্থার সৃষ্টি হয়নি। তবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে বহুতল ভবন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই দুর্যোগ মোকাবেলায় এখনই পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেয়ার সময়। নিয়ম মেনে স্থপনা নির্মাণের ব্যাপারে জনগণকে সচেতন করতে হবে। অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির মজুদ রাখার সাথে গলি রাস্তাগুলোকে প্রশস্ত করতে হবে। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেকোন দেশে যেকোন সময় হতে পারে। দুর্যোগ মোকাবেলার সক্ষমতা ও প্রস্তুতি রাখাই সচেতন ও নাগরিকবান্ধর রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কিন্তু আমাদের সেটা নেই। এছাড়া ভূমিকম্প সর্তকীকরণ মেশিন বসানো প্রয়োজন। তিনি আরো বলেন, এসব সমস্যার সমাধান করতে না পারলে উৎকন্ঠা ও উদ্বেগ থেকেই যাবে। আইন না মানার প্রবণতাও দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির কারণ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
জকিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা জানিয়েছেন : ভূমিকম্পে সারাদেশের মত কেঁপে উঠলো জকিগঞ্জ। দুপুর সোয়া বারটায় ভূমিকম্প শুরু হলে বাসা-বাড়ির, মার্কেট থেকে লোকজন রাস্তায় বের হয়ে দিকবিদিক ছুটাছুটি শুরু করেন। কুশিয়ারা নদী, পুকুর ও জলাশয়ের পানিতে ছিল দীর্ঘক্ষণ অস্বাভাবিক উত্তাল ডেউ। আতংকিত হয়ে পড়েন মানুষজন। তবে জকিগঞ্জে কোথাও কোন ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
জগন্নাথপুর থেকে সংবাদদাতা জানিয়েছেন : সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে মৃদু ভূ-কম্পন অনুভূত হয়েছে। গতকাল শনিবার বেলা ১২ টা ১৩ মিনিটের সময় প্রায় ১ মিনিট স্থায়ী মৃদু ভূ-কম্পন অনুভূত হয়। এ সময় ভয়ে জগন্নাথপুর বাজারের ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের জনতা দিকবিদিক ছুটাছুটি করতে থাকেন। মুহূর্তে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। তখন চারদিকে লোকজন আল্লাহ আল্লাহ ধ্বনি দিয়ে উঠেন। এ যেন কিছু সময়ের জন্য পৃথিবী ওলট-পালট হয়ে যাচ্ছিলো।
কুলাউড়া থেকে সংবাদদাতা জানিয়েছেন : সারাদেশের মতো মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় গতকাল ২৫ এপ্রিল শনিবার দুপুর সোয়া ১২টায় প্রায় ১ মিনিট স্থায়ী ভূমিকম্প হয়েছে। ভূমিকম্পে উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নে একটি ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে।
ভূমিকম্পের সময় অনেকের বাসা-বাড়িতে কাঁপন শুরু হয়।  হঠাৎ কাঁপুনি শুরু হলে আতংকে লোকজন বাসা বাড়ি ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসেন।
এ ব্যাপারে কুলাউড়া ফায়ার সার্ভিস ইনচার্জ মিজানুর রহমান জানান, ভূমিকম্পে কুলাউড়ার ভাটেরা ইউনিয়নে একটি ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। তবে কোন ঘটনা ঘটেনি।
সুনামগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা জানিয়েছেন : সারা দেশের ন্যায় সুনামগঞ্জেও তীব্র ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। এই সময় কেড়ে উঠে ঘরবাড়ি ও স্থাপনা। আতঙ্কিত মানুষ খোলা জায়গায় তাড়াহুড়ো করে ছুটে আসে। ভূমিকম্পে সুনামগঞ্জের করচার হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের একাংশের মাটি ধসে গেছে। এতে কৃষকদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তবে এখনো কোথাও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
সুনামগঞ্জ স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌলশী ইকবাল আহমদ বিষয়টি জানান, খবর পেয়ে তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাঈদ আহমদকে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি আরো জানান, করচার হাওরের বোরো ফসল রক্ষা এ বাঁধে রাবার ড্যাম প্রকল্পের কাজ চলছে। ভূমিকম্পে বাঁধের পশ্চিম পাশের মাটি ধসে গেলেও বাঁধের তেমন ক্ষতি হবে না। এছাড়া খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাঁধ  মেরামতে কাজ শুরু হয়েছে বলে তিনি জানান।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাঈদ আহমদ জানান, এ বাঁধের ওপর সদর উপজেলা ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খরচার হাওরের  ৪ হাজার ৬০০ হেক্টর বোরো ফসল নির্ভরশীল।
জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম জানান, তাৎক্ষণিকভাবে জেলার কোথাও কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
সুনামগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা জানিয়েছেন : সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলায় ভূমিকম্পে সুরমা নদীতে নৌকাডুবিতে রন দাস (৩০) নামের এক কৃষকের সলিল সমাধি হয়েছে। তিনি উপজেলার মান্নারগাঁও ইউনিয়নের ডুলপশি গ্রামের মৃত রমেশ দাসের পুত্র। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার দুপুরে হাওরে নিজের জমির ধান কেটে বাড়ী ফেরার সময় একই ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামের সন্নিকটে  ভূমিকম্পের সময় মাঝ নদীতে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। এ সময় নৌকায় থাকা ৪ জন কৃষকের মধ্যে মাঝিসহ ৪ জন সাঁতার কেটে উঠতে পারলেও নিখোঁজ হন ওই কৃষক। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিখোঁজ কৃষকের লাশের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। নৌকাডুবিতে নিখোঁজ কৃষকের লাশ না পেয়ে পরিবারের লোকজনের মধ্যে চলছে এখন শোকের মাতম। বিকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম নৌকাডুবির ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এদিকে শনিবার দুপুরের আকস্মিক ভূমিকম্পে উপজেলার দোয়ারাবাজার মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের পুরাতন একাডেমিক ভবন ও সুরমা ইউনিয়নের টেংরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবন ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেয়ালে বড় ধরণের ফাটল দেখা দিলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় দিকবিদিক ছুটাছুটি করে বিদ্যালয়ের ৭/৮ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। সুরমা ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান মাস্টার জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেয়ালে ফাটল দেখা দেয়ায় আতঙ্কের মধ্যে খোলা আকাশের নীচে পাঠদান করতে হচ্ছে। প্রায় ১মিনিট স্থায়ী ভূমিকম্পের সময় উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বাড়ী-ঘর থেকে দিকবিদিক ছুটাছুটি করতে থাকেন মানুষজন।
কমলগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা জানিয়েছেন : মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে শনিবার দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটের সময় প্রায় ৫০ সেকেন্ড স্থায়ী ভূমিকম্প হয়েছে। ভূমিকম্পের সময় অনেকের বাসাবাড়িতে কাপন শুরু হয়। হঠাৎ কাপুনি শুরু হলে আতঙ্কে লোকজন বাসা বাড়ি ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসেন। কমলগঞ্জ উপজেলার ভানুগাছ বাজারের ব্যবসায়ী সুমন আহমদ, মুন্সীবাজারের সরকারী কর্মচারী চম্পা বেগম, আমরা কখনো এত স্থায়ী ভূমিকম্পের দেখা পাইনি। আরেক সংবাদকর্মী জানান, আমি চেয়ারে বসে কাজ করছি। এ সময় ভূমিকম্প হলে আমি চেয়ার থেকে পড়ে যাই। তখন প্রথমে আমি মনে করি, আমার মাথা ঘুরাচ্ছে। পরে দেখি সকলেই দৌড়াদৌড়ি করছেন। তখন আমিও রাস্তায় যাই। এভাবে কমলগঞ্জ উপজেলার মানুষের মধ্যে ভূমিকম্পের সময় ব্যাপক আতঙ্ক দেখা দেয়। তবে তাৎক্ষণিক কোনো ক্ষয়ক্ষতি খবর পাওয়া যায়নি।