টি-টোয়েন্টিতেও অজেয় বাংলাদেশ

17

BC-24-04-15-N_41স্পোর্টস ডেস্ক :
আবহাওয়ার পূর্ভাবাসে বলা হয়েছিল রাতে দমকা হাওয়াসহ ঝড় হতে পারে। কিন্তু দেশের আর কোথাও এ ঝড় না হলেও মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পাকিস্তানি বোলারদের ওপর দিয়ে বয়ে গেল সাকিব-সাব্বিরের ‘বৈশাখী’ ঝড়।
সদ্য শেষ হওয়া ওয়ানডে সিরিজে ৩-০’তে জয়ের পর সাকিব-সাব্বিরের জোড়া অর্ধশতকে একমাত্র টি-টোয়েন্টি ম্যাচেও টাইগার স্টাইলে ৭ উইকেটের দাপুটে জয় তুলে নিয়েছে মাশরাফি বাহিনী।
সাকিব ৪১ বলে ৯ চারে ৫৭ এবং সাব্বির ৩২ বলে ৭টি চার আর একটি ছয়ে ৫১ রান করে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে সাকিব পঞ্চম আর সাব্বির প্রথম অর্ধশতক হাঁকান। দু’জনই অপরাজিত থাকেন।
১৬.২ ওভার খেলেই বাংলাদেশ জয় পায়। হাতে ছিল আরও ২২টি বল।
ব্যাটিং ক্রিজে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিবের সঙ্গে দলের হাল ধরতে জুটি গড়েন সাব্বির রহমান। এ দু’জন মিলে স্কোরবোর্ডে ৬৪ বলে ১০৫ রান যোগ করেন।
এর আগে ইনিংসের এগারোতম ওভারে পাকিস্তান ক্রিকেটারদের অবাক করে দিয়ে উমর গুলের বলে পরপর দু’টি চার আর একটি ছয় হাঁকিয়ে নিজের জাত চেনান সাব্বির।
ব্যাটিংয়ে নেমে দারুণ শুরু করেন তামিম ইকবাল। পাকিস্তানি ওপেনার বোলার মোহাম্মদ হাফিজকে প্রথম ওভারের প্রথম বলে সম্মান দেখালেও পরের বলে বিশাল ছক্কা মেরে দলের ও নিজের রানের খাতা খোলেন তামিম। পরের দুটি বলে আরও দুটি চার হাঁকান তিনি। তবে, প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে রান আউট হয়ে বিদায় নেন কোনো বল না খেলা সৌম্য সরকার।
ইনিংসের তৃতীয় ওভারে মোহাম্মদ হাফিজের হাতে ধরা পড়েন তামিম। উমর গুলের বলে আউট হওয়ার আগে তামিম ১০ বলে ১৪ রান করেন।
সৌম্য সরকার আর তামিম বিদায় নিলে মুশফিক আর সাকিব দলের হাল ধরেন। কিন্তু ওয়াহাব রিয়াজের করা ষষ্ঠ ওভারে বোল্ড হয়ে ফেরেন ওয়ানডেতে ধারাবাহিক রান করা মুশফিকুর রহিম। আউট হওয়ার আগে তিনি ১৫ বলে চারটি চারে করেন ১৯ রান।
এর আগে অভিষিক্ত মুস্তাফিজের বোলিংয়ে দারুণ গতি আর সুইং পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের বড় সংগ্রহ দাঁড় করাতে দেয় নি। বিশ্বসেরা সাকিব আল হাসানের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে পাকিস্তান বেশ অস্বস্তি নিয়েই ব্যাট করে।
নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে পাকিস্তানের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৪৫ উইকেট হারিয়ে ১৪১ রান। জিততে হলে টাইগারদের করতে হবে ১৪২ রান।
এর আগে মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ওয়ানডে সিরিজে শতভাগ সাফল্যের তৃপ্তি নিয়ে একমাত্র টি-টোয়েন্টি ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামে বাংলাদেশের টাইগাররা।
এ ম্যাচে টস জিতে পাকিস্তানের অধিনায়ক শহিদ আফ্রিদি আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন। পাকিস্তানের হয়ে ব্যাটিং শুরু করতে ক্রিজে আসেন আহমেদ শেহজাদ এবং মুক্তার আলি। আর টাইগারদের হয়ে বোলিং সূচনা করতে আসেন মুস্তাফিজুর রহমান।
ইনিংসের নবম ওভারে মাশরাফি তাসকিনকে আক্রমণে আনেন। তৃতীয় ওয়ানডেতে মাত্র দুই ওভার বল করা তাসকিন সিরিজের একমাত্র টি-টোয়েন্টি ম্যাচের প্রথম উইকেট শিকারির খাতায় নাম লেখান। তার করা নবম ওভারের শেষ বলে মাশরাফির তালুবন্দি হয়ে ফেরেন আহমেদ শেহজাদ। আউট হওয়ার আগে ৩১ বলে দুটি চারে শেহজাদ করেন মাত্র ১৭ রান।
দলীয় ৫০ রানের মাথায় পাক ওপেনার আহমেদ শেহজাদ সাজঘরে ফিরলে ব্যাটিং ক্রিজে আসেন শহিদ আফ্রিদি। তবে, তাকেও দ্রুত ফেরান অভিসিক্ত মুস্তাফিজ। উইকেটের পিছনে মুশফিকের গ্লাভসবন্দি হওয়ার আগে পাক দলপতি করেন মাত্র ১২ রান।
১৩তম ওভারে আরাফাত সানির বলে সাজঘরের পথ ধরেন টাইগারদের গলার কাঁটা হয়ে থাকা মুক্তার আহমেদ। দলীয় ৭৭ রানের মাথায় মুশফিকের স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়ে বিদায় নেন ৩০ বলে ৩৭ রান করা মুক্তার।
দলীয় ৭৭ রানের মাথায় টপঅর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান ফিরে গেলে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন মোহাম্মদ হাফিজ এবং হারিস সোহেল। এ দু’জন ৪৯ রানের জুটি গড়ে দলের রান এগিয়ে নিচ্ছিলেন। তবে, মুস্তাফিজ হাফিজকে এলবি’র ফাঁদে ফেলে বিদায় করেন। হাফিজ আউট হওয়ার আগে ১৮ বলে ২৬ রান করেন।
২৪ বলে ৩০ রান করে অপরাজিত থাকেন হারিস সোহেল।
টাইগারদের হয়ে দুটি উইকেট নেন মুস্তাফিজ আর একটি করে নেন আরাফাত সানি এবং তাসকিন আহমেদ।
এর আগে অভিষেক ম্যাচেই প্রথম ওভারে ৪ রান দিয়ে শুরু করেন মুস্তাফিজুর রহমান। দ্বিতীয় ওভারে সাকিব আক্রমণে এসে দেন মাত্র দুই রান। আর তৃতীয় ওভারে বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজ দেন মাত্র এক রান। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে মাশরাফি এসে দেন আরও ৯ রান। আর পঞ্চম ওভারে আরাফাত সানি ১৩ রান দিলে ৫ ওভার শেষে পাকিস্তানের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২৯ রান।
প্রথম দশ ওভারে পাকিস্তানের সংগ্রহ দাঁড়ায় এক উইকেটে ৫৩ রান। ১৫ ওভার শেষে পাকিস্তানের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩ উইকেট হারিয়ে ১০১ রান।
বাংলাদেশ একাদশ: তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিম (উইকেটরক্ষক), সাকিব আল হাসান, সাব্বির রহমান, নাসির হোসেন, মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), আরাফাত সানি, তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান।
পাকিস্তান একাদশ: সরফরাজ আহমেদ (উইকেটরক্ষক), আহমেদ শেহজাদ, হারিস সোহেল, মুক্তার আহমেদ, শহিদ আফ্রিদি (অধিনায়ক), সোহেল তানভীর, ওয়াহাব রিয়াজ, সাঈদ আজমল, উমর গুল, মোহাম্মদ হাফিজ ও মোহাম্মদ রিজওয়ান।