সামাজিক সুরক্ষা ভাতা বাড়াতে হবে

24

 

সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় আশির দশকে বিভিন্ন ভাতা চালু করেছিল সরকার। মূলত সামাজিক নিরাপত্তাবলয় সুসংহত করার মাধ্যমে জনসাধারণের জীবনমান উন্নয়নই ছিল এ কর্মসূচির মূল লক্ষ্য। এর আওতায় বিভিন্ন ধরনের ভাতা দিচ্ছে সরকার। প্রতি বছর এসব ভাতার উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে জনপ্রতি টাকার অঙ্কে এ আর্থিক সহায়তার পরিমাণ খুবই কম। এর মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণিতে রয়েছে বয়স্ক, বিধবা ও নিগৃহীতা নারী এবং প্রতিবন্ধীরা। এ তিন শ্রেণির ভাতাভোগীর সংখ্যা বর্তমানে ১ কোটি ১২ লাখ ৭৬ হাজার। বর্তমানে ভাতাপ্রাপ্তদের মধ্যে বয়স্করা প্রতি মাসে ৬০০ টাকা, বিধবারা ৫৫০ এবং প্রতিবন্ধীরা পাচ্ছেন ৮৫০ টাকা। এ অর্থে এসব জনগোষ্ঠীর মাসিক চাহিদার কতটুকু পূরণ হয় সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তার ওপর ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতি ও টাকার অবমূল্যায়নের প্রভাবে ভাতার অর্থের মূল্য আরও সংকুচিত হয়ে পড়ছে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যানুযায়ী, গত রোববার ঢাকার বাজারে এক কেজি মোটা চালের দাম ছিল ৫০-৫২ টাকা। কেজিপ্রতি আলুর দাম ছিল ৪৫-৫০ টাকা। আর এক কেজি গরুর মাংসের দাম ছিল ৭৩০-৭৫০ টাকা। ফলে ৬০০ বা ৫৫০ টাকা মাসিক ভাতায় একজন বয়স্ক ব্যক্তি কিংবা বিধবার পক্ষে এক মাসে ১১ কেজি মোটা চাল কিংবা আলু কেনা সম্ভব। তবে তারা চাইলেও এ টাকা দিয়ে এক কেজি গরুর মাংস কিনতে পারবেন না।
খানা আয় ও ব্যয় জরিপ-২০২২ এর প্রাথমিক প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, দেশে বর্তমানে দারিদ্র্যের হার ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ এবং অতিদারিদ্র্য ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। এর আগের ২০১৬ সালের জরিপ অনুযায়ী, দারিদ্র্যের হার ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ এবং অতিদারিদ্র্য ছিল ১২ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০২৫ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ১৫ দশমিক ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সরকারের। বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০০৯-১০ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বরাদ্দ ছিল ১৩ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম, কিছু ক্ষেত্রে উপকারভোগীর সংখ্যা ও ভাতার হার পরিবর্তন করা হয়েছে।
আশির দশক থেকে সরকার সামাজিক সুরক্ষা খাতে অর্থ ব্যয় করছে। প্রাথমিকভাবে মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে কর্মসূচিটি শুরু হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে সংখ্যাতাত্তি¡কভাবে ভাতার পরিমাণ বাড়ানো হলেও মূল্যস্ফীতির চাপের কারণে এটি প্রকৃতপক্ষে বাড়েনি। তাছাড়া প্রকৃত উপকারভোগী বাছাই ও বিতরণ পর্যায়ে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে না পারার কারণেও এর পুরোপুরি সুফলতা পাওয়া যায়নি। বাজেটের অনুপাতে সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ সেভাবে বাড়েনি। তাছাড়া সরকারি কর্মচারীদের পেনশনের অর্থও সামাজিক সুরক্ষার আওতাভুক্ত করে আকার বাড়ানো হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তার অর্থ বর্তমানে মানুষ অলস বসে ব্যয় করছে। এটিকে যদি কোনোভাবে কর্মক্ষম করে তোলার ক্ষেত্রে প্রণোদনা হিসেবে কাজে লাগানো যায়, তাহলে সেটি বেশি কার্যকর ভ‚মিকা রাখবে বলে আমরা মনে করি। নির্বাচনের পর যে সরকার ক্ষমতায় আসবে, সে সরকারের উচিত হবে সামাজিক সুরক্ষা ভাতা আরও বাড়ানো।