আজকালের মধ্যেই সার্চ কমিটি, বর্তমান ইসি বিদায় নেবে ১৪ ফেব্রুয়ারি

5

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মেয়াদ আছে আর মাত্র দুই সপ্তাহ। ১৪ ফেব্রুয়ারি বিদায় নেবে এই কমিশন। তার আগেই গঠিত হবে নতুন নির্বাচন কমিশন। এ লক্ষ্যে জাতীয় সংসদে সদ্য পাস হওয়া নতুন আইন অনুসারে আজকালের মধ্যেই রাষ্ট্রপতি ৬ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করবেন। এ কমিটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য ১০ জনের নাম সুপারিশ করবে। সেখান থেকে রাষ্ট্রপতি ১ জনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও ৪ জনকে কমিশনার পদে নিয়োগ দেবেন।
‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য কমিশনার নিয়োগ আইন-২০২২’ অনুসারে সার্চ কমিটি স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে দায়িত্ব পালন করবে। আইনে বেঁধে দেয়া যোগ্যতা, অযোগ্যতা অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও সুনাম বিবেচনা করে সিইসি ও ইসি পদে নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে। কমিটি গঠনের ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশ রাষ্ট্রপতির কাছে জামা দিতে হবে। তবে হাতে সময় কম থাকায় এবারের সার্চ কমিটিকে ১৫ দিনের আগেই কাজ শেষ করতে হবে।
৬ সদস্যের সার্চ কমিটির মধ্যে কমপক্ষে ৩ জনের উপস্থিতিতে সভার কোরাম হবে। উপস্থিত সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। সভায় সভাপতিত্বকারী সদস্যের দ্বিতীয় বা নির্ণায়ক ভোট প্রদানের ক্ষমতা থাকবে। সার্চ কমিটি যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের অনুসন্ধান করার উদ্দেশে রাজনৈতিক দল এবং পেশাজীবী সংগঠনের নিকট হতে নাম আহ্বান করতে পারবে। সার্চ কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগদানের উদ্দেশে প্রতিটি শূন্য পদের জন্য ২ ব্যক্তির নাম সুপারিশ করবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সার্চ কমিটির সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবে।
সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার পরও আগের কোন সরকারই নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়ন করেনি। বর্তমান সরকারের আমলে এসে আইন প্রণয়ন করে সেই আইন অনুসারে নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি জোরদার হয়। তাই, একটি আইন করার বিষয়ে এ সরকার প্রস্তুতি শুরু করে। কিন্তু বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্র ২ মাস আগেও আইন প্রণয়নের বিষয়ে সরকারের জোরালো কোন পদক্ষেপ না থাকায় বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও বিদেশী কূটনীতিকরা অধিকতর তৎপর হয়। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়েও ২৪টি রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশন নিয়োগে আইন প্রণয়নের জোর দাবি জানায়। এ পরিস্থিতিতে সরকার আগে থেকে ফাইল ওয়ার্ক করে রাখা আইন প্রণয়নের জন্য কাজের গতি বাড়ায়। অবশেষে সকল প্রক্রিয়া শেষ করে স্বাধীনতার ৫০ বছর পর নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য কমিশনার নিযোগ আইন-২০২২’ প্রণয়ন করে।
১৭ জানুয়ারি ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন-২০২২’ এর খসড়া মন্ত্রিসভায় উত্থাপন ও অনুমোদন করা হয়। এ আইন পাসের উদ্দেশে ২৩ জানুয়ারি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জাতীয় সংসদে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২’ উত্থাপন করেন। ওইদিনই বিলটি যাচাইবাছাই করে রিপোর্ট পেশ করার জন্য আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে প্রেরণ করেন স্পীকার। এর পর ওই কমিটি বিলটি রিপোর্ট আকারে সংসদে উপস্থাপনের পর এর ওপর ১২ জন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য ছাঁটাই ও সংশোধনী প্রস্তাব দেন। এর পর কিছু সংশোধনীসহ ২৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়। বিলের শিরোনামেও সামান্য সংশোধন হয়। সংশোধনীসহ বিলটি পাস হয় ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন-২০২২’ শিরোনামে।
সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে- ১১৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, দেশে একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোন আইনের বিধানাবলীসাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগদান করবেন। সংবিধানের ১১৮(৪) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকবেন এবং কেবল এই সংবিধান ও আইনের অধীন হবেন। তাই সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল ২০২২’ সংসদে উত্থাপন করেন। পরে এটি ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন ২০২২’ শিরোনামে পাস হয়।
‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন-২০২২’ এ উল্লেখ করা হয়েছে- রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনারের শূন্য পদে নিয়োগদানের জন্য এ আইনে বর্ণিত যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নাম সুপারিশ করার জন্য ৬ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করবেন। এর মধ্যে একজন নারী সদস্য থাকবেন। এই ৬ সদস্যের মধ্যে এক নম্বরে থাকবেন প্রধান বিচারপতি মনোনীত সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের একজন বিচারপতি। তিনি কমিটির চেয়ারম্যান হবেন। এরপর থাকবেন প্রধান বিচারপতি মনোনীত সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারক এবং বাংলাদেশের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান এবং রাষ্ট্রপতি মনোনীত ২ বিশিষ্ট নাগরিক, যার মধ্যে একজন নারী।
নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার কারা হতে পারবেন এবং তাদের যোগ্যতা কি হবে সেক্ষেত্রে বলা হয়েছে, তাকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। বয়স কমপক্ষে ৫০ বছর হতে হবে। কোন গুরুত্বপূর্ণ সরকারী, আধা-সরকারী,স্বায়ত্তশাসিত, বেসরকারী বা বিচার বিভাগীয় পদে কমপক্ষে ২০ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।