হাওরাঞ্চলে করোনার ছুটিতে টিভিতে প্রচারিত শিক্ষার্থীদের পাঠদান কর্মসূচী প্রভাব পড়ে নি

17
তাহিরপুরে প্রযুক্তিগত পাঠদান থেকে বহু দূর হাওরপারের শিশুরা। করোনা সংক্রমণের প্রথম দিকে শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের মাটিয়ান গ্রামের সামনে থেকে ছবিটি তোলা।

বাবরুল হাসান বাবলু তাহিরপুর থেকে :
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্য টিভিতে প্রচারিত পাঠদান কর্মসূচী কোন প্রভাব পড়ে নি হাওরে পারে। অধিকাংশ গ্রামে শিক্ষার্থীরা জানেই না টিভিতে প্রচারিত এ রকম একটা প্রোগ্রামের খবর। কিছু সংখ্যক অভিভাবক পাঠদানের সংবাদ জানলেও পারিবারিক উদাসীনতায় আমলেই নিচ্ছেন না টিভিতে পাঠদান কর্মসূচী। সেই সাথে পাঠদান চলাকালীন সময় বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও বিভিন্ন এলাকায় স্যাটেলাই টিভি সংযোগ না থাকায় কোন শিক্ষার্থীদের আগ্রহ নেই সংসদ টিভিতে প্রচারিত পাঠদান কর্মসূচীর প্রতি।
বিশ^ব্যাপী নভেল করোন ভাইরাস সংকটে অচল হয়ে পড়ছে গোঠা বিশ^। এক দেশ থেকে অন্য দেশের সাথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ছে। সেই সাথে বিভিন্ন দেশের এক শহর থেকে অন্য শহরে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এরই ধারবাহিকতায় বাংলাদেশে করোন ভাইরাস সংক্রমিত হলে গত ১৮ মার্চ থেকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারী ভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়। প্রথম দিকে বিদ্যালয়গুলো কিছু দিনের জন্য বন্ধ ঘোষনা করা হলেও বর্তমানে পরিস্থিতির উপর তা আরো দীর্ঘায়িত হচ্ছে। পরিস্থিতির উন্নিতি হলে বিদ্যালয়ের ছুটি তুলে নেয়া হবে।
এ দিকে বিদ্যালয় দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকায় পাঠে অমনোযোগী হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের কিছুটা পাঠে মনযোগী করতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বাংলাদেশ সংসদ টিভিতে ”আমার ঘর আমার ক্লাসরুম” শিরোনামে মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের জন্য২৯ মার্চ থেকে শুরু করেছে ডিজিটাল পাঠদান কর্মসুচী। অন্যদিকে প্রাথমিক শিক্ষা অদিদপ্তর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ’’ঘরে বসে শিখি’’ শিরোনামে ডিজিটাল পাঠদান শুরু করেছে ৭ এপ্রিল থেকে।
প্রতিদিন রুটিন অনুযায়ী পাঠদান কার্যক্রম প্রচারিত হচ্ছে টিভিতে। কিন্তু বাস্তবতায় কতটুকু সফলতা মিলছে টিভিতে পাঠদান কর্মসূচী প্রচারে। শহরে প্রতিটি ঘরে ঘরে রয়েছে স্যাটেলাইট টিভি সংযোগ। করোনার প্রভাবে বাসাবন্ধি রয়েছে সকল শিশু। তাদের অভিভাবকগনও সচেতন। কিন্তু গ্রামের চিত্র পুরোই উল্টো। হাওর পারের অনেক উপজেলার গ্রামগুলোতে এখনো চোখে পড়েনি করোনার প্রভাব। বয়স্ক থেকে শুরু করে ছোট শিশু কিশোরারও ইচ্ছে মতে ঘুরে বেড়াচ্ছে এদিক সেদিক। বৈশাখে বাবা মা’র সাথে বিদ্যালয় পড়ুয়া সকল শিশু কিশোররা ব্যস্ত ছিল ধান কাটা মাড়াইয়ে। তাদের কাছে বিদ্যালয় ছুটি মানে অফুরান দুরন্তপনা। যেখানে বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হতে অনিচ্ছুক সেখানে টিভি দেখে লেখাপড়া শেখা গ্রামের শিশু কিশোরদের জন্য দুরূহ ব্যাপার। তাদের চিন্তা চেতনাতেই নেই টিভিতে পাঠদান কর্মসূচীর প্রতি।
তাহিরপুর সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী মিল্টন মিয়া, মধ্য তাহিরপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী হানিফা বেগম সহ একাধিক শিক্ষার্থীদের সাথে টিভিতে পাঠদান কর্মসূচীর বিষয়ে জানাতে চাইলে তারা জানায় তারা টিভি দেখেনা। একই অবস্থা বিরাজমান উপজেলার সর্বত্রই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক বলেন, যেখানে বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীরা পাঠদানের জন্য উপস্থিত হয় না সেখানে টিভিতে পাঠদান শিখবে সেটা তাদের কাছে অবিশাস্য।
উপজেলা সদর সূয্যের গাঁও গ্রামের ছাত্র অভিভাবক সত্য রঞ্জন রায় বলেন, তাদের গ্রামে অনেকের বাড়িতে টিভি সংযোগ রয়েছে কিন্তু গ্রামের অনেক শিক্ষার্থীরা টিভিতে লেখাপড়া শিখে না। টিভিতে তারা কার্টুন কিংবা ছবি দেখে বলেও তিনি জানান।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও পাঠাবুকা সরকারী প্রাথীমক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অজয় কুমার দে বলেন, হাওরের অনেক প্রত্যন্ত গ্রাম রয়েছে যেখানে স্যাটেলাইট টিভি সুবিধা নেই। সেই সাথে অনেক গরীব পরিবার রয়েছে যারা ইচ্ছে করলেই টিভি কিনতে পারেন না।
উপজেলা সহাকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সাঈদ বলেন, গ্রামে টিভি নেই। উপজেলা সদর সহ আশপাশে কিছু স্বচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থীরা টিভিতে পাঠদান কর্মসূচীর সুফল কিছুটা পেয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কমকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, করোনার প্রভাবে দীর্ঘ ছুটিতে টিভিতে প্রচারিত শিক্ষার্থীদের পাঠদান কর্মসূচীটা একটা ভালো উদ্যোগ, তবে তাহিরপুর উপজেলা হাওর কেন্দ্রিক হওয়ায় সেই সাথে স্যাটেলাইট টিভি না থাকায় শিক্ষার্থীরা কিছুটা বঞ্চিত।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিজেন ব্যানার্জি বলেন, হাওর পারের লোকজন বোরো ধান কাটা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, ধান কাটায় ব্যস্ত থাকায় বিষয়টি তেমন প্রচার পায়নি। আমরা দ্রুত বিষয়টি প্রচার করার ব্যবস্থা করছি। যাতে করোনা সংকটে ছুটি থাকালীন সময় শিক্ষার্থীরা টিভি দেখে দেখে পাঠদান শিখতে পারে।