সিয়াম সাধনার মাস

25

কাজিরবাজার ডেস্ক :
মাহে রমজানের মাগফিরাতের দশকের মাঝামাঝিতে আমরা অবস্থান করছি, আজ ষোল রমজান। এ মাসে জিকির আসকার তাসবিহ তাহলিল দরুদ ইস্তিগফারে আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ সাধন করতে হবে, বৃদ্ধি করতে হবে খোদার সঙ্গে প্রেমময় সম্পর্ক। মহান আল্লাহ তায়ালা মানবজাতিকে দুনিয়াতে তাঁরই গোলামি ও ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। সমস্ত ইবাদতের মূলে হচ্ছে আল্লাহর জিকির। এজন্য আল্লাহ তা’য়ালা সর্বাবস্থায় তার জিকিরে মশগুল থাকার জন্য বান্দাদের নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন- আল্লাহর বাণী ঃ ‘ইয়া আইয়্যুহাল লাযিনা আমানুয্ কুরুল্লাহ্ যিক্রান ক্বাছিরান ওয়াসাব্বিহু হু বুকরাতান আছিলা’। অর্থাৎ হে মুসলমানগণ! তোমরা আল্লাহ্কে অধিক স্মরণ কর এবং সকাল-সন্ধ্যা তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর।’-(সূরা আহযাব ৪১-৪২)।
জিকির দুই প্রকার ঃ ১. জিক্রে কালবি-অন্তরের জিকির, ২. জিক্রে লিসানী-মুখের জিকির। কালব দ্বারা সবসময় আল্লাহর জিকির করা সম্ভব। তাই কালবের মধ্যে জিকির জারি করার জন্য চেষ্টা করা প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য খুবই জরুরী। সর্বক্ষণ জিন্দাহ কালবের দ্বারা আল্লাহকে স্মরণ করার পদ্ধতি গ্রহণ করা প্রত্যেক মু’মিনের জন্য একান্ত প্রয়োজন। জিকিরের গুরুত্ব প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (স) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর জিকির করে এবং যে আল্লাহর জিকির করে না তাদের দৃষ্টান্ত হলো, জীবিত ও মৃতের ন্যায়।
জিক্রে লিসানী- মুখ দিয়ে জিকির। এ জিকির মুখে উচ্চারণ করা হয়। এর গুরুত্বও কম নয়। কেননা, রাসুলুল্লাহ (স) বলেছেন- ‘লা ইয়াযালু লিসানিকা রাতবান মিন যিকরিল্লাহ্’ – তোমাদের জিহ্বা যেন সবসময় আল্লাহর জিকিরে সিক্ত থাকে।’ ইমাম গাজ্জালি (র.) বলেন, জিকিরকারী একমাত্র আল্লাহকে হাজির নাজির জেনে, তাঁর মহব্বতে নিমজ্জিত থেকে অন্তরে সবসময় আল্লাহর জিকির করে থাকেন। জিকিরের মাধ্যমে বান্দার সঙ্গে মহান আল্লাহর যোগসূত্র স্থাপন হয়। যেমন আল্লাহ্র বাণী ঃ ‘ফাযকুরুনি আয্কুরকুম ওয়াশ কুরুওলি ওয়ালা তাকফুরুন’- তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদের স্মরণ করব। তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও এবং অকৃতজ্ঞ হয়ো না।’-(সূরা বাকারা ১৫২)। হাদিসে কুদ্সিতে আছে, বান্দা যখন আমাকে স্মরণ করে তখন আমি তার সঙ্গে থাকি।’ আল্লাহ্র জিকিরে আত্মিক শান্তি হাসিল হয়। যেমন মহান আল্লাহ্র বাণী ঃ ‘আলা বি জিকরিল্লাহি তাত্বমায়িন্নুল কুলুব।’- জেনে রেখো! আল্লাহ্র স্মরণেই আত্মাসমূহ প্রশান্তি লাভ করে।’(সূরা রা’দ-২৮)। আল্লাহ্র জিকির আত্মাকে সজীব রাখে। প্রার্থিব স্বার্থের জন্য মানুষ সবসময় ব্যস্ত থাকে। ফলে তার কালব বা আত্মা দুর্বল ও কঠিন হয়ে পড়ে। এরূপ মৃত প্রায় আত্মাকে সজীব করে তোলার একমাত্র উপায় হলো আল্লাহর জিকির। আর অন্তরের ময়লা পরিষ্কার করার উপকরণ হলো আল্লাহর জিকির। জিকিরের দ্বারা অন্তরের কালিমা দূর হয়। শয়তান মানুষকে গুনাহের কাজে লিপ্ত করে এবং এর ফলে মানুষের অন্তরে কালিমা সৃষ্টি হয়। আর এ কালিমা দূর করার উপায় হলো, আল্লাহর জিকির। জিকিরের দ্বারা শয়তান বিতাড়িত হয়। যে মানুষের অন্তরে সবসময় আল্লাহর জিকির থাকে, শয়তান তাকে বিভ্রান্ত করতে পারে না। রাসুলুল্লাহ (সা) বলেন ঃ ‘আশ্শাই ত্বানু জাছেমুন আলা কালবি ইবনে আদামু ফায়িযা যাকারাল্লাহ খনাছ ওয়া ইযা গাফালা ওয়াছওয়াছা।’-শয়তান আদম সন্তানের (মানুষের) অন্তরে হাঁটু গেড়ে বসে থাকে। যখন সে আল্লাহর জিকির করে, তখন শয়তান পালিয়ে যায় এবং সে যখন আল্লাহর জিকির থেকে গাফিল হয়, তখন শয়তান মানুষকে প্ররোচনা দেয়।’ উপরোক্ত আলোচনা হতে জানা যায় যে, দুনিয়া ও আখিরাতের জীবনের সার্বিক কল্যাণ তথা মুক্তির ক্ষেত্রে তাসবিহ তাহলিল ইস্তিগফার ও জিকিরের তাৎপর্য ও গুরুত্ব অপরিসীম।