সিপিবির জনসভায় কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ॥ ক্ষমতাসীনরা একত্রিত হয়েছে লুটপাটে

10
বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি)র সিলেট বিভাগীয় জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছেন পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি সংগ্রামী জননেতা কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।

“গণতন্ত্রহীনতা ও লুটপাট রুখো। গদি-নীতি-ব্যবস্থা বদলাও। স্বদেশ বাঁচাও।” শ্লোগানকে সামনে রেখে দেশরক্ষা অভিযাত্রা উপলক্ষে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সিলেট বিভাগীয় জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি সংগ্রামী জননেতা কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম উক্ত কথাগুলো বলেন।
তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশকে স্বৈরাচারের হাত থেকে রক্ষার আন্দোলনে অবতীর্ণ হচ্ছি। তাই কর্মসূচি নিয়ে জনগণের সামনে এসেছি। আমরা একদিন পাকিস্তান সরকারের হাত থেকে দেশ রক্ষা করতে সংগ্রামে নেমেছিলাম, আপনারাও নেমেছিলেন জান বাজি রেখে। পাকিস্তানি সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তুলে সবাই মিলে দেশকে মুক্ত করেছি। কিন্তু আজকের দেশ কি ১৭ কোটি মানুষের জন্য মুক্ত? না, সবার জন্য মুক্ত হয়নি। দেশ আজ দুইভাগে বিভক্ত। একদিকে এক শতাংশ লুটেরা ধনিকগোষ্ঠী, অন্যদিকে ৯৯ শতাংশ শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষ। আমাদের সংগ্রাম হচ্ছে- ৯৯ ভাগ মানুষকে দেশের ৯৯ শতাংশ সম্পদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার। কিছু সংখ্যক লোক ৯৯ ভাগ মানুষের সম্পদ লুটেপুটে খাবে, সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলবে, এটা মেনে নেব না। সাধারণ মানুষ শোষিত হচ্ছে, বৈষম্যের শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। দেশের আইন-কানুন, সুযোগ-সুবিধা সবকিছুই গরীবদের বিরুদ্ধে। প্রশ্ন করি, গরিব-মেহনতি মানুষরা কি সব সময় অধিকার বঞ্চিতই থাকবে?”
দেশব্যাপী কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল ২৩ ফেব্র“য়ারি রবিবার বিকেল ৩টায় সিপিবি সিলেট বিভাগীয় সমন্বয় কমিটির আয়োজনে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় জনসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কমরেড শাহ আলম, প্রেসিডিয়াম মেম্বার অনিরুদ্ধ দাস অঞ্জন, আব্দুল্লাহ কাফি রতন, কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সম্পাদক জলি তালুকদার।
সিলেট নগরীর কীন ব্রীজ পয়েন্টে অনুষ্ঠিত এ জনসভায় সভাপতিত্ব করেন সিলেট বিভাগীয় সমন্বয় কমিটির সমন্বয়ক কমরেড আনোয়ার হোসেন সুমন। প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি ছাড়াও বক্তব্য রাখেন সিপিবি সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি কমরেড চিত্ত রঞ্জন তালুকদার, মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি মকবুল হোসেন, হবিগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি হাবিবুর রহমান, সিলেট জেলা কমিটির সভাপতি হাবিবুল ইসলাম খোকা, সিপিবি ঢাকা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল হক রুবেল। সঞ্চালনা করেন সিপিবি মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড নিলিমেশ ঘোষ বলু ও ছাত্র ইউনিয়ন সিলেট জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক নাবিল এইচ।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ক্ষমতাসীনরা এখন একত্রিত হয়েছে লুটপাটে। বঙ্গবন্ধুর নাম ভাঙ্গিয়ে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে। ক্ষমতাসীনরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তির সাথে হাত মিলিয়ে দেশকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। পাঠ্যপুস্তকে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বুনছে। সরকারি দলের লোকজন সিন্ডিকেট করে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের পকেট কেটে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করে নিয়ে জুয়া খেলছে। এদের রুখতে হলে বাম কমিউনিস্টদের একত্রিত হতে হবে। সবাইকে এক কাতারে আসতে হবে। একইসঙ্গে গ্রামে- গ্রামে, সারা দেশে স্থানীয় ও জাতীয় দাবিতে জোরদার আন্দোলন গড়ে তোলার কর্মিসূচি গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, ৫০ বছর যাবত আওয়ামী লীগ-বিএনপির অপশাসনের সাথে সাথে দেশের মানুষ সামরিক শাসনও দেখেছে। আওয়ামী লীগ-বিএনপি দু’টোই বুর্জোয়া লুটেরা দল। এদের হাতে মুক্তিযুদ্ধের অর্জন নিরাপদ নয়। এদের দ্বারা গরিব-মেহনতি মানুষের মুক্তি আসবে না। তিনি বলেন, শোষণ ও বৈষম্যের যাতাকলে পিষ্ট হয়েও কঠোর পরিশ্রম করে দেশের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রেখেছে কামলা, কিষাণ, মুটে, মজুর, মেহনতি মানুষ ও মধ্যবিত্ত জনগণ। নানা সমস্যার মধ্যেও গ্রামের কৃষক-ক্ষেতমজুর কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রেখেছেন। এর ফলে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অথচ তাদের বঞ্চনার শেষ নেই। কৃষকরা বঞ্চিত হচ্ছে ফসলের ন্যায্য মূল্য থেকে। ক্ষেতমজুরদের সারা বছরের কাজের কোনো সংস্থান নেই। সরকারি আমলা-কর্মচারিদের বেতন বাড়লেও শ্রমিকের জন্য জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ হয়নি। শ্রমিকরা গার্মেন্টে কাজ করে দেশের আয় বাড়াচ্ছে। অথচ মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার মতো মজুরি পাচ্ছে না তারা। শ্রমিক-কৃষক-ক্ষেতমজুরের সন্তানেরা দেশে কাজ না পেয়ে বিদেশে গিয়ে অমানবিক কাজে বাধ্য হচ্ছে। তাদের পাঠানো টাকায় সরকার উন্নয়নের গল্প ফেঁদে বাহবা নিচ্ছে।
কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড শাহ আলম বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের জীবন আজ দিশেহারা। পেয়াঁজ-রসুনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের আয় সেই তুলনায় বাড়ছে না। পল্লী রেশনিং এর ব্যবস্থা নেই, ন্যায্য মূল্যের দোকান নেই। গরিব মানুষের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা তাদের হাতে পৌঁছায় না। গ্যাস-বিদ্যুৎ-গাড়ীভাড়া বার বার বাড়ানো হচ্ছে। জনগণ দু’বেলা ঠিকমতো খাবার পায় না, অসুখে চিকিৎসা পায় না; অথচ উন্নয়নের ফাঁকা বুলি নিয়মিত আওড়ানো হচ্ছে। তিনি বলেন, “কিন্তু কাদের উন্নয়ন হয়েছে? আজকে বৈষম্যের উন্নয়ন হয়েছে। শোষণের উন্নয়ন চলছে। আজ লুটপাটের উন্নয়ন চলছে। এমন উন্নয়ন আমরা চাই না।” বিজ্ঞপ্তি