সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেয়ায় নূর ও সঙ্গীদের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা

16

কাজিরবাজার ডেস্ক :
ডাকসু ভবনে হামলার ঘটনায় রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে ফেঁসে গেছেন ডাকসু ভিপি নুরুল হক নূর ও তার সঙ্গী রাশেদসহ অন্যরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অব্যাহতভাবে সাম্প্রদায়িক উস্কানি ও মানহানিকর তথ্য প্রচারের অভিযোগে নূর ও তার সঙ্গি রাশেদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা অনেককেই আসামি করা হয়েছে।
শনিবার ধানমণ্ডি থানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জগন্নাথ হল ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক অর্ণব হোড় বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। বাদী একই সঙ্গে জগন্নাথ হল ছাত্র সংসদের অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ধানম-ি জোনের অতিরিক্ত কমিশনার (এডিসি) আব্দুল্লাহিল কাফী বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, নূর ও রাশেদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় উস্কানি ও অপপ্রচার চালানোর অভিযোগে ধানম-ি থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের ২৫, ২৬, ২৯ ও ৩১ ধারায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে ঢাবির এক শিক্ষার্থী। মামলার এজাহার অনুযায়ী নূর ও রাশেদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় উস্কানিমূলক তথ্য প্রচার করেছেন। তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য প্রচার করেছেন।
ধানম-ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ হুমায়ুন কবির বলেছেন, মামলায় আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর উদ্দেশ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মানহানিকর তথ্য প্রকাশের অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলাটির তদন্ত হচ্ছে। তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে। মামলা দায়েরকারী অর্ণব হোড় বলেন, হামলার দিন নূর ও রাশেদ ফেসবুক লাইভে এসে গুজব ছড়ায়। এছাড়া ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসসহ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে নূর ও তার সঙ্গিরা সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে। তথ্য প্রমাণ তুলে ধরে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
নূর ও তার সংগঠন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের বিরুদ্ধে কদিন ধরেই ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেয়ার অভিযোগ নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। নূরের এ তৎপরতায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ বিশ^বিদ্যালয় প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের মাঝে।
এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ইসকন সদস্য ও ইন্ডিয়ান গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর এজেন্ট। স্বৈরাচারের বিরোধিতা ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাস, হত্যাসহ নানা ধরনের বর্বরতার প্রতিবাদ করার কারণেই এ পর্যন্ত নয় বার আমাকে হত্যাচেষ্টা করা হয়। সর্বশেষ ডাকসুতে ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি, ভারতীয় ‘র’-এর এজেন্ট, ইসকন সদস্য সনজিদ ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম এবং তথাকথিত মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামক ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী মঞ্চের সভাপতি বুলবুল ও মামুনের নেতৃত্বে তিন দফায় আমার ওপর হমলা চালানো হয়। সংগঠনের সহযোদ্ধাদের ওপর অসংখ্যবার হামলা চালানো হয়। এখানেই শেষ নয়, ঢাবি ছাত্রলীগ সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসসহ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছে নূরের সংগঠনে থাকা শিবিরসহ উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও কিছু ভুঁঁইফোঁড় অনলাইনে সনজিত চন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক উস্কানি ছাড়াও নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে গোষ্ঠীটি। রামদা হাতে দাঁড়িয়ে আছেন সনজিত চন্দ্র দাস বৃহস্পতিবার এমন একটি বিকৃত ছবিও ছড়ানো হয়েছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে। অথচ সনজিতের ছবিটি এডিট করে বসানো হয়েছে।
সনজিতের ছাতা হাতে ধরে রাখা একটি ছবি ফটোশপের মাধ্যমে এডিট করে সেখানে রামদা জুড়ে দেয়া হয়েছে। ছবিটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর শুরু হয়েছে বাকযুদ্ধ। আসল ছবিটি ফেসবুকে থাকায় সহজেই ধরা পড়ছেন অপরাধীদের চেহারা।
মোঃ রেজাউল হক নামে একজন ফেসবুকে সনজিত এবং আরেক ছাত্র সিফাতের ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, দুইটা ছবিই মিথ্যাচারের। একজন সবজি কেটেছে, আর সনজিতের হাতে ছিল ছাতা। এই প্রজন্ম ঠিক মিথ্যাচারের মধ্য দিয়েই রাজনৈতিক চর্চা করছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, এই প্রজন্ম নিয়েই আমরা সোনার বাংলা বিনির্মাণের স্বপ্নে বিভোর! এই বিদ্বেষ আর রেষারেষির রাজনৈতিক চর্চা থেকে বেরিয়ে না আসলে আগামী প্রজন্ম আর আগামীকাল আমাদের জন্য অনেক বিভীষিকাময় হবে।
াসামি ডাকসুর স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক!
ডাকসু ভবনে হামলার ঘটনায় কিছু জানতেন না ডাকসুর স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী। তিনি অবস্থান করছিলেন হলে। তবুও ডাকসু ভিপি নূরের মামলার আসামি করা হয়েছে তাকে। এ ঘটনায় বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।
মামলার বিষয়ে সাদ বিন কাদের চৌধুরী বলেন, মারামারি শেষ হয় ১টা ২০ মিনিট থেকে দেড়টার মধ্যে। আর (হলের সিসি টিভি ফুটেজের বরাত দিয়ে) আমি হল থেকে বের হই ১টা ৫৩-এর দিকে। আমার হল (জহুরুল হক) থেকে ডাকসুতে আসতে সময় লাগে ৫-১০ মিনিট। মারামারি শেষ হয় দেড়টায় তারপর আমি হল থেকে বের হলাম তাহলে আমার নামটা কিভাবে আসে এটা আমার বোধগম্য নয়, আমি রীতিমতো অবাক।
তিনি আরও বলেন, একই সময়ে একই মানুষ দুই জায়গায় অবস্থান করার ক্ষমতা আল্লাহ কোন মানুষকে দেননি এমনকি কোন মহামানবেও না। একই সঙ্গে হলে ও ডাকসুর অবস্থান করা কি আমার পক্ষে সম্ভব? এদিকে ভিপি নুরুল হক নূরের ওপর হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ডাকসু নেতারা। কিন্তু হামলায় ডাকসুকে জড়ানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা। চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আজ রবিবার সংবাদ সম্মেলন করবেন ডাকসুর নেতৃবৃন্দ।
ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসবিরোধী গণপদযাত্রা : নূর ও তার অনুসারীদের ওপর হামলাকারীদের বিচার ও ব্যর্থ প্রক্টরের অপসারণসহ চার দফা দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসবিরোধী গণপদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে এ গণপদযাত্রা শুরু হয়। নূরদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ নিয়ে গঠিত সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্রঐক্যের ব্যানারে এ কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পদযাত্রায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান, ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি ফয়সাল মাহমুদ, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেহেদি হাসান নোবেল, স্বতন্ত্র জোটের শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি, বিপ্লবী ছাত্র যুবের আতিফ অনিক, ছাত্র ফেডারেশনের গোলাম মোস্তফা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি মাসুদ রানা, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি ইকবাল কবীর প্রমুুখ।