ক্রিকেটারদের দশ দাবী

17

বাংলাদেশের ক্রিকেট এখন ‘অসময়’ পার করছে। বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টের শেষ অর্ধ থেকে এর শুরু বলা যায়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে প্রবেশের পর বেশ কয়েক পর্বে এমন অসময়ে পড়েছে জাতীয় ক্রিকেট; উত্তরণও ঘটিয়েছে। এবারের অসময়ে বাড়তি এক উপাদান সংশ্লিষ্ট হয়েছে—সেটি হচ্ছে ক্রিকেটারদের ‘বিদ্রোহ’। অবশ্য এমন ঘটনা বাংলাদেশের ক্রিকেটে এই প্রথম নয়; কুড়ি বছর আগে প্রথম বিদ্রোহের ঘটনা ঘটেছিল মিনহাজুল আবেদিনের নেতৃত্বে। এবারের বিদ্রোহের সামনে রয়েছেন সাকিব আল হাসান।
আইসিসি ট্রফি জেতার পর বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল প্রথম বিশ্বকাপ ক্রিকেট ম্যাচ খেলার সুযোগ পায় ১৯৯৯ সালে। কুড়ি বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। এ সময়ে বাংলাদেশ অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়েছে, অর্জনও কম নয়। ক্রিকেটাররা পেয়েছেন যথেষ্ট। প্রশিক্ষণের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো (একাডেমি) হয়েছে, অর্থ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও বেড়েছে। তবে আর্থিক সুবিধার সমান পাল্লায় দেশের ক্রিকেট অবকাঠামোর উন্নয়ন হয়েছে বলা যায় না। নানা ধরনের সাংগঠনিক অব্যবস্থাও রয়েছে, এটা ক্রিকেট অনুরাগী মহল ভালো করে জানে। ক্রিকেটারদেরও অনেক অভিযোগ। তাঁদের অসন্তোষের প্রথম বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে; দ্বিতীয় বহিঃপ্রকাশ ঘটল মিরপুরে বিসিবির ক্রিকেট একাডেমি মাঠে।
সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে ১১ দফা দাবি জানিয়েছেন ক্রিকেটাররা। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের ক্রিকেট থেকে দূরে থাকবেন তাঁরা। এত দিন যেসব অভিযোগ ক্রিকেটারদের ড্রেসিংরুমে আবদ্ধ ছিল, সেসব এখন সবার সামনে এসেছে। প্রথম দফাতেই ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব)-এর নতুন নির্বাচনের দাবি তোলা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে কোয়াবের সঙ্গে ক্রিকেটারদের সম্পর্ক সুখকর নয়। অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ ক্রিকেটে প্লেয়ার্স ড্রাফট তুলে দেওয়া, আগামী মৌসুম থেকে পুরনো নিয়মে বিপিএল আয়োজনের পাশাপাশি বিদেশি ক্রিকেটারদের সঙ্গে স্থানীয়দের পারিশ্রমিকের ব্যবধান কমানো এবং বিপিএলের ড্রাফটে ক্রিকেটারদের নিজের মূল্যমান নির্ধারণের সুযোগ দেওয়া; প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক বাড়ানো, চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারের সংখ্যা ও বেতন বাড়ানো, মাঠকর্মীদের মজুরি এবং স্থানীয় কোচ, ফিজিও, ট্রেনার ও আম্পায়ারদের বেতন বাড়ানো, ঘরোয়া ক্রিকেটের ম্যাচ সংখ্যা বাড়ানো, ঘরোয়া ক্রিকেটের সূচি অপরিবর্তিত রাখা এবং ক্রিকেটারদের জন্য সর্বোচ্চ দুটি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে অংশ নেওয়ার বিধিনিষেধ তুলে দেওয়া।
ক্রিকেটারদের বিদ্রোহ বাংলাদেশেই ঘটছে তা নয়। অন্যান্য দেশেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্রিকেটারদের বিদ্রোহের ঘটনা ঘটেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটে এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সেসবের অবসানও ঘটে। সোমবারের সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা বলেছেন, দাবিনামা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা সব ধরনের ক্রিকেট থেকে বিরত থাকবেন। এতে যে অচলাবস্থা দেখা দেবে তা যদি দীর্ঘদিন বিরাজ করে, তাহলে ক্রিকেটের ক্ষতি হবে সন্দেহ নেই। সেটা যাতে না হয় সংশ্লিষ্টরা সেদিকে নজর দিয়ে দ্রুত সুরাহার ব্যবস্থা করবেন বলে আমরা আশা করি। না হলে যে অসময়ে পড়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেট, তার থেকে উত্তরণ দুরূহ হয়ে পড়বে।