’২১ সাল থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পরীক্ষা থাকবে না

40

কাজিরবাজার ডেস্ক :
’২১ সাল থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত গতানুগতিক কোন পরীক্ষা থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত কোন পরীক্ষা না নেয়ার সিদ্ধান্ত ২০২১ সাল থেকে কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসকে সামনে রেখে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। প্রাথমিক স্তরের শিশু শিক্ষার্থীদের ওপর থেকে পরীক্ষার চাপ কমাতে এই সিন্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রতিমন্ত্রী জানান, আগামী ৮ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাপী ‘আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস’। এ বছর ইউনেস্কো এ দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে ‘লিটারেসি এ্যান্ড মাল্টিলিঙ্গুয়ালিজম।’ এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাংলায় প্রতিপাদ্য করা হয়েছে, ‘বহুভাষায় সাক্ষরতা, উন্নত জীবনের নিশ্চয়তা।’ সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম-আল-হোসেন ছাড়াও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দেশে সাক্ষরতার হার ৭৩ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ : গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন জানান, সরকারের নিরলস প্রচেষ্টায় দেশে বর্তমানে সাক্ষরতার হার শতকরা ৭৩ দশমিক ৯ ভাগে উন্নীত হয়েছে, যা ২০০৫ সালে তৎকালীন সরকারের সময় ছিল শতকরা ৫৩ দশমিক ৫ ভাগ। বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ নিরক্ষরকে অক্ষর জ্ঞান প্রদান করা হয় উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সাক্ষরতা বিস্তারে এ বিশাল অর্জনের বাংলাদেশ ১৯৯৮ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক ‘আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা পুরস্কার ১৯৯৮’ লাভ করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পক্ষ থেকে এ পুরস্কার গ্রহণ করেন। ‘সবার জন্য শিক্ষা’ এবং ‘সহ¯্রাব্ধ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাসমূহ’ সাফল্যজনকভাবে অর্জনের জন্য ২০১৪ সালে ইউনেস্কো মহাসচিব ইরিনা বোকোভা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘শান্তি বৃক্ষ’ পদক প্রদান করেন।
তিনি আরও জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস উদযাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সরকার প্রতিবছর আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে পালন করে আসছে।
তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পরীক্ষা নয় ২০২১ সাল থেকে : সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম-আল-হোসেন জানিয়েছেন, প্রথম ও দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা এবং বার্ষিক পরীক্ষার বদলে সারাবছর ক্লাসে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে। শুধু পড়াশোনা নয়, শিক্ষার্থীর আচার-আচরণ সব বিষয় মূল্যায়ন করে গ্রেড দেয়া হবে বলে জানান সচিব।
সচিব বলেন, জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ অনুযায়ী প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীতে ধারাবাহিক মূল্যায়ন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পরীক্ষা না রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। শিশু শিক্ষার্থীদের ওপর পরীক্ষা চাপ কমানোর জন্য তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পরীক্ষা না নেয়ার নির্দেশনা ছিল। আমরা জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সঙ্গে সভা করেছি।
এক প্রশ্নে সচিব বলেন, ২০২১ সালে নতুন কারিকুলামে কার্যক্রম শুরু করব। ২০২০ সালে সামেটিক পরীক্ষা তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত রাখব না, ফরমেটিভ পরীক্ষা রাখব অর্থাৎ রাউন্ড দ্য ইয়ার তারা পরীক্ষা দেবে।
সেক্ষেত্রে ১০০টি স্কুলে ট্রাইআউট করব। এরপরে ২০২১ সালে নতুন কারিকুলামে পুরোপুরি বাস্তবায়ন হবে। অর্থাৎ গতানুগতিক প্রথম ও দ্বিতীয় সাময়িক এবং বার্ষিক পরীক্ষা থাকবে না। তবে সারাবছরই ক্লাসে মূল্যায়ন করা হবে।
শিক্ষানীতি অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত হবে কীনা জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এটি প্রক্রিয়াধীন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ফাইল চালাচালি চলছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত বার্ষিক পরীক্ষা নেয়া হবে না। ক্লাস পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে। আগামী বছর থেকে প্রথম পর্যায়ে দেশের ১০০টি বিদ্যালয়ে পাইলটিং হিসেবে এ কার্যক্রম শুরু করা হবে বলে জানান আকরাম-আল হোসেন। এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের ওপর পরীক্ষার চাপ কমাতে আমরা প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত বার্ষিক পরীক্ষা না নেয়ার সিদ্ধান্ত নেই। সে লক্ষ্যে আমরা গত ছয় মাস থেকে কাজ করেছি। ২০২০ সাল থেকে পাইলটিং হিসেবে ১০০ বিদ্যালয়কে এর আওতায় আনা হবে। এসব বিদ্যালয়ে মাসিক ক্লাস পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত উত্তীর্ণ করা হবে। তবে চতুর্থ শ্রেণী থেকে বার্ষিক পরীক্ষা আয়োজন করা হবে।