উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকুক

226

একটি দেশ তখনই অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধি অর্জন করে, যখন দেশের অভ্যন্তরীণ উৎসগুলো সম্প্রসারিত হয়। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার মধ্য দিয়ে নতুন নতুন উদ্যোগের সূচনা হয়। নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করা গেলে দেশে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হয়। অর্থনীতিতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ে। আর তাতে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল থাকে। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দেশে একটি ব্যবসাবান্ধব সরকার প্রয়োজন। গত বুধবার ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের আয়োজনে ‘শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশ’ শীর্ষক ব্যবসায়ী সম্মেলনে এসব কথাই উঠে এসেছে। সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সারা দেশের আড়াই হাজার ব্যবসায়ী এ সম্মেলনে অংশ নেন। এ সম্মেলনে ব্যবসায়ী নেতারা বর্তমান সরকারের ধারাবাহিকতা চেয়েছেন। সরকারের ধারাবাহিকতা কেন দরকার, তা আলোচিত হয়েছে এ সম্মেলনে। বর্তমান সরকার গত ১০ বছর যে উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে তার ইতিবাচক কিছু দিক এরই মধ্যে দেশে ও বিদেশে প্রতিফলিত হয়েছে। এসব অর্জন ধরে রাখার জন্যই বর্তমান সরকারের ধারাবাহিকতা প্রয়োজন বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী নেতারা; তাঁরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘আশার প্রতীক’ হিসেবে দেখছেন। সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তিনি যেনতেনভাবে ক্ষমতায় আসতে চান না।
দেশে এখন অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। পদ্মা সেতু দৃশ্যমান। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ চলছে। দেশে ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। মহাকাশে গেছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। দেশের ১৬ কোটি মানুষের হাতে পৌঁছেছে ১৩ কোটি মোবাইল সিম। সহজতর হয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য। বিকশিত হতে শুরু করেছে সবুজ অর্থনীতি। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে মূল্যায়ন করলে দেখা যাবে, বাংলাদেশ আজ পৃথিবীর ১০টি সবচেয়ে দ্রুত প্রবৃদ্ধির দেশের একটি। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম। অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন সূচকে তার অবস্থান ৩৪তম। উন্নয়নের সূচকগুলো ঊর্ধ্বমুখী। গত এক দশকে মোট জিডিপি ৯১ বিলিয়ন থেকে বেড়ে ২৮৫ বিলিয়ন ডলার হতে যাচ্ছে। এই সময় প্রবৃদ্ধির হার ৫.৪ থেকে বেড়ে সর্বশেষ ৭.৮৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। শিগগিরই তা ৮ শতাংশ পেরিয়ে যাবে। ২০২১ সাল নাগাদ প্রবৃদ্ধির হার ১০ শতাংশে উন্নীত হবে—এমন স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। দারিদ্র্য নেমে এসেছে অর্ধেকে। মূল্যস্ফীতি ১২ থেকে কমে ৫.৪ শতাংশে পৌঁছেছে। মাথাপিছু আয় ৬৮৬ থেকে বেড়ে এক হাজার ৭৫১ ডলারে উন্নীত হয়েছে। বিনিয়োগ বেড়েছে চার গুণ। ভোগ তিন গুণ। রেমিট্যান্স বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। রপ্তানি ১০ বিলিয়ন থেকে ৩৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়নে গত এক দশকে বর্তমান সরকারের অর্জন এককথায় অসাধারণ। সব মিলিয়ে সরকারের অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে অর্থনীতি সমৃদ্ধ হয়েছে। বিকশিত হয়েছে ব্যক্তি ও বেসরকারি খাত। এই উন্নয়ন ধরে রাখার জন্যই ব্যবসায়ীরা চেয়েছেন সরকারের ধারাবাহিকতা। ব্যবসাবান্ধব সরকারই পারে অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে।