কে কত ট্যাক্স দিল আর কত খরচ করল হিসেব নেয়া দরকার – প্রধানমন্ত্রী

17
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মন্ত্রী পরিষদ সভা কক্ষে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প ঠিক করে তা দ্রুত বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়গুলোকে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, যথাযথভাবে বাজেট বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জন্য মন্ত্রণালয়গুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। আমরা বাজেট দিয়েছি এবং উন্নয়ন প্রকল্প নিয়েছি। কিন্তু তা বাস্তবায়নে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে প্রকল্প অনুযায়ী তাদের কাজের অগ্রাধিকার ঠিক করতে হবে।
তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে রবিবার তার কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা একদা বাংলাদেশের স্বাধীনতার শুধু বিরোধিতাই করে নাই, তারা বলেছিল বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে একটা বটমলেস বাস্কেট হবে। সেই দেশটার থেকেও আমাদের দারিদ্র্যের হার কমাতে হবে। তাদের চেয়ে অন্তত এক শতাংশ হলেও দারিদ্র্য কমাতে হবে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। তারা উন্নত দেশ হতে পারে কিন্তু আমরা যে পারি সেটা আমাদের প্রমাণ করতে হবে।’
দারিদ্র্যবিমোচন এবং দেশের সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে যেকোন কাজে তার কাছে যেকোন সময় যে কাউকে আসার অনুমতি দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাকে জনগণ ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী করেছে এটা ঠিক, কিন্তু আমি জাতির পিতার কন্যা। কাজেই সেই হিসেবে মনে করি দেশের প্রতি আমার একটা দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। সেখানে প্রটোকলের বাধা আমি কখনও মানি না, মানতেও চাই না। আমি চাই সবার সঙ্গে মিশতে, জানতে এবং কাজ করতে। আমরা সবাই একটা টিম হিসেবে কাজ করব যাতে দেশের উন্নয়নটা ত্বরান্বিত হয়।’
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, ড. মশিউর রহমান ও ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, পিএমও’র এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মোঃ আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এবং প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মোঃ নজরুল ইসলাম এ সময় উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোঃ নজিবুর রহমান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
অনুষ্ঠানে দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং দুর্নীতি দমনে তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে ঘুষ খাবে সেই কেবল অপরাধী নয়, যে দেবে সেও অপরাধী। এই বিষয়টা মাথায় রেখেই পদক্ষেপ নিলে এবং এ বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ হলে অনেক কাজ আমরা দ্রুত করতে পারব।’ এ সময় তার সরকারের আমলে দুর্নীতি দমন কমিশন সক্রিয় থাকার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী উপার্জন অনুযায়ী ট্যাক্স প্রদানের বিষয়টিও লক্ষ্য রাখার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘কে কত ট্যাক্স দিল আর কে কত খরচ করল- তারও একটা হিসেবে নেয়া দরকার।’
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার বিশাল বাজেট পেশ করেছে এবং মন্ত্রণালয়গুলোকে অগ্রাধিকার নিয়ে তাদের ভৌত কাজ বন্যার পরই যাতে শুরু করা যায় সে লক্ষ্যে পেপার ওয়ার্ক শেষ করে দ্রুত উন্নয়ন কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক নিয়মেই বাংলাদেশে বন্যা হবে এবং এ দেশের মানুষকে প্রকৃতির সঙ্গেই বসবাস করতে হবে। বন্যার পরই বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজের গতি বাড়াতে হবে যাতে এসব প্রকল্প সঠিক সময়ে সম্পন্ন হয় এবং দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়।
দেশের প্রবৃদ্ধি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১ ভাগে উন্নীত করেছে এবং এরপর আরও যত উপরে ওঠার চেষ্টা করা হবে অর্থনীতির নিয়ম অনুযায়ীই তা দুরূহ হবে উল্লেখ করে তিনি এ সময় কাজের প্রতি সবাইকে যতœবান হওয়ার পরামর্শ দেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা সবসময় একটু কমই ধরি। কিন্তু অর্জনটা বেশি করতে চাই। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের লক্ষ্য আছে যে, আমরা প্রবৃদ্ধিতে ডাবল ডিজিটে যাব। প্রবৃদ্ধি ৮ পর্যন্ত আমরা উঠে এসেছি। এটা মনে রাখতে হবে আটের পরে ওপরে ওঠানো কিন্তু একটু বেশি কঠিন এবং এটা কিন্তু একটু ধীরগতিসম্পন্ন হয়। এটাই অর্থনীতির নিয়ম। ধীরগতিসম্পন্ন হবে বলেই আমাদের একটু বেশি নজর দিতে হবে। বেশি শ্রম দিতে হবে। বেশি কাজ করতে হবে।