সিলেট বোর্ডে পাসের হার ৬৭.০৫, বেড়েছে জিপিএ-৫ ॥ শতভাগ পাস ৭টি প্রতিষ্ঠান ॥ পাসের হারে এগিয়ে মেয়েরা ॥ জিপিএ-৫ এ ছেলেরা

88

স্টাফ রিপোর্টার :
সারাদেশের ন্যায় ২০১৯ সালের সিলেট শিক্ষা বোর্ডে উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল ঘোষনা করা হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের সম্মেলনকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. কবির আহমদ আনুষ্ঠানিকভাবে এ ফলাফল ঘোষণা করেন।
এবার সিলেটে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার মোট পাসের হার ৬৭ দশমিক ৫ শতাংশ। যা গতবছরের পাসের হার ছিল ৬২ দশমিক ১১। পাশাপাশি এবার সিলেট শিক্ষা বোর্ডে জিপিএ ৫ বেড়েছে। গতবার জিপিএ-৫ পেয়েছিলো ৮৭৩ জন শিক্ষার্থী। এবার সে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৯৪ জনে। তবে এবার পাসের হারে এগিয়ে রয়েছে মেয়েরা ও জিপিএ-৫ এ ছেলেরা এগিয়ে।
জিপিএ-৫ ছাড়াও সিলেট শিক্ষা বোর্ডের পাসকৃতদের মধ্যে ‘এ’ গ্রেডে পাস করেছে ৫ হাজার ৬২৮ জন, ‘এ মাইনাস’ গ্রেডে পাস করেছে ৮ হাজার ৬২১ জন, ‘বি’ গ্রেডে পাস করেছে ১৩ হাজার ৪৩৬ জন, ‘সি’ গ্রেডে ২০ হাজার ৮৩৩ জন এবং ‘ডি’ গ্রেডে পাস করেছে ১ হাজার ৫১২ জন শিক্ষার্থী।
তবে সিলেটে এবার এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার পাসের হার ৭০.৫৯ শতাংশ, হবিগঞ্জে পাসের হার ৬৭.৮০ শতাংশ, মৌলভীবাজারে পাসের হার ৬০.৯৬ শতাংশ এবং সুনামগঞ্জে পাসের হার ৬৫.৩৯ শতাংশ। এবারে সিলেটে মোট ৭৬২৫১ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছে ৫১১২৪ জন। এদের মধ্যে ছেলে ৩৪ হাজার ৬৪৯ জন এবং মেয়ে ৪১ হাজার ৬০২ জন। এছাড়া সিলেটে এবার ৩২ জন পরিক্ষার্থীকে বহিস্কার করা হয়েছে। গতবার এ সংখ্যা ছিল ২৮ জনে।
সিলেটে ৭টি প্রতিষ্ঠান শতভাগ পাস: এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় সিলেটে ৭টি প্রতিষ্ঠানের সবাই পাস করেছে। অন্যদিকে গতবার সিলেটে দু’টি প্রতিষ্ঠান শতভাগ ফেল করলেও এবার তা নেমে এসেছে শূন্যের কোঠায়।
গতকাল বুধবার সিলেট শিক্ষাবোর্ডের প্রকাশিত ফলাফল পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় মোট ২৮৫টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। এর মধ্যে সিলেট ক্যাডেট কলেজসহ ৭টি প্রতিষ্ঠান শতভাগ পাসের সাফল্য অর্জন করে। ২০১৮ সালে এ বোর্ডে শতভাগ পাশ করেছিল ১০টি, ২০১৭ সালে ৮টি, ২০১৬ সালে ৫টি ও ২০১৫ সালে ১৩টি। সিলেট শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. কবির আহমদ এ ফলাফলে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
পাসের হারে এগিয়ে মেয়েরা, জিপিএ-৫ এ ছেলেরা : উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হারে সিলেট বোর্ডে এগিয়ে আছে মেয়েরা। আর জিপিএ-৫ এ এগিয়ে রয়েছে ছেলেরা।
সিলেট বোর্ডের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এবারের পরীক্ষায় ৬৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ মেয়ে পাস করেছে। অপরদিকে ছেলেদের পাসের হার ৬৪ দশমিক ৯১ শতাংশ। আবার এ বছর সিলেট বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১০৯৪ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ৬৪৪ জন ছেলে এবং ৪৫০ জন মেয়ে।
বিজ্ঞান বিভাগ থেকে সিলেটে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯৪৪ জন, মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯১ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৯ জন। সিলেট জেলায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৭৭২ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ছেলে ৪৭৯ ও মেয়ে ২৯৩ জন। হবিগঞ্জের ৮৭ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এদের মধ্যে ৪৫ জন ছেলে এবং ৪২ জন মেয়ে। মৌলভীবাজারে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২০৭ জন। এর মধ্যে ১১০ জন ছেলে এবং ৯৭ জন মেয়ে। সুনামগঞ্জ জেলায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন মাত্র ২৮ জন। এর মধ্যে ১০ জন ছেলে এবং ১৮ জন মেয়ে।
জিপিএ-৫ই এক চতুর্থাংশ এমসি কলেজের দখলে: উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় এবার সিলেট শিক্ষা বোর্ডের মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৯৪ জন। যার এক চতুর্থাংশই রয়েছে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজের শিক্ষার্থীদের দখলে। এ বছর এমসি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৪শ’ ২১ জন পরীক্ষার্থী। যাদের মধ্যে ২শ’ ৫৮ জন পেয়েছে জিপিএ-৫। জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে শতবর্ষের প্রাচীন এই বিদ্যাপীঠটি এগিয়ে থাকলেও গতবারের তুলনায় এবার এখানে পাশের হার কমেছে। এমসি কলেজে গত বছর পাশের হার ছিল ৯৯.১৯ শতাংশ। তবে এ বছর দশমিক ৩৮ শতাংশ কমে ৯৮.৮১ শতাংশ হয়েছে।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, এবার এইচএসসি পরীক্ষায় এমসি কলেজ থেকে ৪২১ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। এর মধ্যে ৩০৭ জন ছাত্র ও ১১৬ জন ছাত্রী ছিল। পরীক্ষায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাশ করেছে ৪১৬ জন। এবারের ফলাফল সম্পর্কে এমসি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক নিতাই চন্দ্র চন্দ বলেন, আমাদের ছেলেমেয়েরা অনেক ভাল ফলাফল করেছে। ভবিষ্যতে এটি আরও ভাল হবে বলে আমি আশাবাদী।
সেরা সফলতা সিলেট সরকারি কলেজের: উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলে স্মরণ কালের সেরা সফলতা অর্জন করেছে সিলেট সরকারি কলেজ। চলতি বছর এই কলেজটিতে উচ্চমাধ্যমিক পরিক্ষায় তিনটি বিভাগ নিয়ে মোট ১ হাজার ২শ ৪১ জন শিক্ষার্থী উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে। এদের মধ্যে তিনটি বিভাগে মোট জিপিএ ৫ সহ কৃতকার্য হয় ১হাজার ১ শ জন শিক্ষার্থী। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৪শ ২৮ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিলে ৪শ ১৫ জন শিক্ষার্থী কৃতকার্য হওয়ার গৌরব অর্জন করে। রেজাল্টের শতকরা হার ৯৬.৯৬। মানবিক বিভাগ থেকে ৪শ ৬৫জন পরিক্ষার্থী অংশ নিয়ে ৩শ’৮২ জন কৃতকার্য হয়। শতকরা হিসেবে ৮২.১৫। তাছাড়া, বাণিজ্য বিভাগ থেকে ৩শ ৪৮ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে ৩শ ৭ জন পরীক্ষার্থী কৃতকার্য হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। শতকরা হিসেবে ৮৮.২১। এর মধ্যে জিপিএ ৫ পিয়েছে মোট ৩৬ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ২৮ টি মানবিক বিভাগ থেকে ৫টি এবং বাণিজ্য বিভাগ থেকে ২টি জিপিএ ৫ রয়েছে।
সিলেট সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাসিমা হক খান বলেন, এই ফলাফলের মধ্য দিয়ে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক দায়বদ্ধতা আরো বেড়ে গেলো। পাঠদানেরত কলেজের সকল শিক্ষা/ শিক্ষিকাদের সমন্বিত আন্তরিক প্রচেষ্টা আগামীতেও অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তিনি।