নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড না নিউজিল্যান্ড?

20

স্পের্টস ডেস্ক :
ইংল্যান্ডের দ্বাদশ বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠার রসদ তাহলে বাংলাদেশের কাছে গত বিশ্বকাপে হারেই মিলেছে। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কাছে হেরে এমনই বিধ্বস্ত হয়েছে ইংলিশরা যে নিজেদের এ বিশ্বকাপের জন্য পুরোই বদলে ফেলে। সেই বদলের ফলও মিলেছে। এবার বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলবে ইংল্যান্ড। শিরোপাও কী স্বাগতিক ইংল্যান্ড শিবিরই তাহলে উঁচিয়ে ধরবে, নাকি চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ফাইনালে ওঠা নিউজিল্যান্ড শেষ পর্যন্ত বাজিমাত করবে? যে দলই চ্যাম্পিয়ন হোক রবিবার লর্ডসে নতুন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন মিলবে।
কখনই বিশ্বকাপ জেতেনি ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড। এবার বিশ্বকাপে দুই দলই খেলবে ফাইনালে। ইংল্যান্ড ২৭ বছর পর ফাইনালে উঠেছে। শিরোপা খরাতো তারা ঘোচানোর চেষ্টা করবেই। যে দল রবিবার জিতবে তাদের হাতেই শিরোপা ধরা দেবে। কিন্তু কোন্ দল শিরোপা জিতবে? নতুন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হবে কোন দল ইংল্যান্ড না নিউজিল্যান্ড? এ প্রশ্নই এখন চতুর্দিকে। নিউজিল্যান্ড টানা দ্বিতীয়বার ফাইনালে খেলছে। তারাও বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে প্রস্তুত।
গত বিশ্বকাপের ঘটনা। বাংলাদেশের সঙ্গে গ্রুপপর্বে ম্যাচ ইংল্যান্ডের। কোয়ার্টার ফাইনালে খেলতে হলে ইংল্যান্ডকে জিততেই হবে। এমন কঠিন সমীকরণের মুখে পড়ে বাংলাদেশের কাছে হেরে গেল ইংল্যান্ড। ২০১৫ বিশ্বকাপে হারের আগে ২০১১ বিশ্বকাপেও বাংলাদেশের কাছে হারে ইংল্যান্ড। এই একটি হারে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়ল ইংলিশরা। এই হার এমনই ক্ষত তৈরি করল যে ইংল্যান্ড দল পুরোই নতুনরূপে হাজির হলো। নিজেদের ব্যাটিং-বোলিং স্টাইল পুরোই পরিবর্তন করে ফেলল। সাড়ে তিন শ’ রান যে কোন বিষয়ই না, ইংল্যান্ড তা দেখিয়ে দিল। একের পর এক ম্যাচে তিন শ ছড়ানো রান করল, প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দিল। যখন ইংল্যান্ড অধিনায়ক দলের এমন পরিবর্তন কিভাবে হলো? এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হন। তখন বাংলাদেশের কাছে গত বিশ্বকাপে হারের দুঃস্মৃতির কথাই তুলে ধরেন। এই একটি হার যে পুরোই নতুন ইংল্যান্ডকে সামনে তুলে ধরেছে। নিজেরা বুঝতে পেরেছেন, যেভাবে খেলছিলেন সেভাবে খেললে কিছুই হবে না। তাই খেলার ধরন বদলালো ইংলিশরা। তাতেই বাজিমাত। ১৯৯২ সালের পর আবার বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলবে ১৯৭৯, ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপসহ তিনবার ফাইনালে খেলে প্রতিবারই রানার্সআপ হওয়া ইংল্যান্ড।
এবার ইংল্যান্ড দলটিকে বিশ্বকাপে যেভাবে দেখার মিলছে, বিশ্বকাপের আগেও চ্যাম্পিয়ন হবে ইংলিশরা এই দাবি ওঠে। ফেবারিট ইংল্যান্ডরাই ছিল। কিন্তু লীগপর্বের শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে উড়িয়ে দিয়ে পাকিস্তানের কাছে হার হয়। এরপর বাংলাদেশকে সহজেই হারায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজকেও পাত্তা দেয়নি। আফগানিস্তানকেও হারায়। খুব সুন্দরভাবেই সব চলছিল। হঠাৎ করেই ছন্দপতন হয়ে যায়। শ্রীলঙ্কার কাছে হারে যেন ইংল্যান্ডের মানসিকতায় ধাক্কা লাগে। এরপর অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারায় বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্নই শেষ হতে চলেছিল। শেষ পর্যন্ত ভারত ও নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে সেমিফাইনালে খেলা নিশ্চিত করে ইংল্যান্ড। সেমিফাইনালে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকেও কুপোকাত করে ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করে।
ইংল্যান্ড দলটি ফাইনালে ফেবারিটই ধরা হচ্ছে। কিন্তু যে দলটির বিপক্ষে খেলা ইংল্যান্ডের সেই দলটি কিন্তু গচ্ছপ গতিতে এগিয়ে চলেছে। এমনই বিপদ প্রতিপক্ষের ঘাড়ে তৈরি করছে, ছিটকেই পড়ছে। তা না হলে সেমিফাইনালে ভারতের মতো সেরা ব্যাটিং লাইন আপের সামনে ২৪০ রানের টার্গেট দিয়েও জিতে নিউজিল্যান্ড। গত বিশ্বকাপের মতো এবারও ফাইনালে উঠে যায়। তারা এমনভাবে বিশ্বকাপ খেলছে একবার বিদায় হয়, আরেকবার সেমিফাইনালে ওঠে এমন অবস্থায় পড়ে। প্রথম পাঁচ ম্যাচ টানা জিতেই আসলে নিজেদের ওপরের দিকে তুলে রাখে কিউইরা। শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারায় নিউজিল্যান্ড। সঙ্গে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়। তাতে করে সেমিফাইনালে ওঠার জন্য যে পয়েন্ট এবং রানরেট দরকার নিউজিল্যান্ড সেই পুঁজি করে রাখে। শেষে পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের কাছে হারলেও রানরেটে এগিয়ে থেকে সেমিফাইনালে খেলে নিউজিল্যান্ড। সেমিফাইনালে ভারতকে হারিয়ে ফাইনালেও খেলছে। নিউজিল্যান্ডও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দাবিদার। বিশ্বকাপ শুরুর আগে যে চার দলকে সেমিফাইনালের দল ধরা হয়েছে (ইংল্যান্ড, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড) তারাই খেলেছে। কিন্তু ফাইনালের দল হিসেবে আসলে নিউজিল্যান্ডকে নিচের সারিতেই রাখা হয়েছিল। সেই নিউজিল্যান্ড দলটিই এখন খেলবে ফাইনাল। এমন এক ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লড়াই করবে নিউজিল্যান্ড যে ফাইনাল ইতিহাস রচনা করবে নতুন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন কে হবে।
ইংল্যান্ড এর আগে তিনবার ফাইনালে খেলেছে। একবারও বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। যারা ক্রিকেটটাই পুরো বিশ্বের কাছে ছড়িয়ে দিল তারাই এখন পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হয়নি। তাতে ইংল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসে কালিমা লেগেই আছে। নিউজিল্যান্ড এর আগে শুধু ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে ফাইনালে খেলেছে। এবার দ্বিতীয়বারের মতো টানা বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলছে। নিউজিল্যান্ডকে ‘ডার্ক হর্স’ বলা হচ্ছে ফাইনালেও। ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যানদের এবং বোলারদের যে দাপট তাতে কিউইদের হিসেবে রাখা হচ্ছে না। কিন্তু সেটিতো সেমিফাইনালেও হিসেবের খাতা থেকে নিউজিল্যান্ডকে বাদ দেয়া হয়েছিল। নিউজিল্যান্ডতো দেখিয়ে দিয়েছে স্কোর যাই হোক বিশ্বাসটা তাদের এত বেশি যে কোন দলই সামনে পড়লে ছাড় পাবে না। নিউজিল্যান্ডকে সেমিফাইনালের দল বলা হতো। সেই দল মোট আটবার সেমিফাইনাল খেলে টানা দুইবার ফাইনালে উঠেছে। ১৯৯২ সালের পরতো ইংল্যান্ড কখনও সেমিফাইনালেই খেলতে পারেনি। এর আগে তিনবার ফাইনালে ও দুইবার সেমিফাইনালে খেলে। কিন্তু এখনকার ইংল্যান্ড দল যে ভয়ঙ্কর তা সবাই বুঝে গেছে। নিউজিল্যান্ডও বুঝেছে। আর তাইতো নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন হুঙ্কার দিয়ে ইংল্যান্ড ক্রিকেটারদের নড়বড় করার পথ খুঁজেছেন, ‘আমরা ইনজুরিযুক্ত দল হয়েও এতদূর এসেছি। কিছু একটা করে দেখাব।’ ইংল্যান্ড অধিনায়ক ইয়ন মরগান আবার এত হুঙ্কার-টুঙ্কারে বিশ্বাসী না। তার সোজাসাপ্টা কথা, ‘আমরা যদি ফাইনালে ভাল খেলি তাহলে জিতব। একটি দিনের খেলায় যে কেউ জিততে পারে। তবে আমরাও বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে চাই।’
সেই ১৯৭৫ সাল থেকে পুরুষ ক্রিকেট বিশ্বকাপ হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়া সর্বোচ্চ পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ভারত দুইবার করে শিরোপা জিতেছে। পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা জিতেছে একবার করে। শ্রীলঙ্কা যখন জিতে তখন চার বছর পরই নতুন চ্যাম্পিয়ন মিলে। এরপর আর নতুন চ্যাম্পিয়ন দেখা যায়নি। এবার ২৩ বছর পর নতুন চ্যাম্পিয়ন মিলবে। কিন্তু ইংল্যান্ড এর আগে তিনবার ও নিউজিল্যান্ড একবার ফাইনালে উঠেও শিরোপা জয়ের স্বপ্ন বাস্তব করতে পারেনি। ৪৪ বছর ধরে বিশ্বকাপ হচ্ছে। প্রতিবারই ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড অংশ নিয়েছে। কিন্তু অধরা শিরোপা একবারও ধরা দেয়নি। এবার ইংল্যান্ড না নিউজিল্যান্ড বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হবে? যে কোন একদলের স্বপ্ন ডানা হয়ে উড়বে তা নিশ্চিত। কিন্তু কোন দল নতুন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হবে, প্রথমবার শিরোপা উঁচিয়ে ধরবে, শিরোপা নিয়ে মাঠ প্রদক্ষিণ করবে, খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়বে, তার ফয়সালার দিকেই ক্রিকেট বিশ্বের দৃষ্টি রয়েছে। অপেক্ষা করতে হবে রবিবার পর্যন্ত। ক্রিকেটের তীর্থস্থান খ্যাত লর্ডসে যে নতুন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন পাওয়ার মধ্য দিয়ে বিশ্বকাপের দ্বাদশ আসরের পর্দাও নামবে।