রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

57

১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীর প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসনে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি, সেই সঙ্গে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক পরিম-লের অব্যাহত চাপ সত্ত্বেও নতুন করে মিথ্যাচার শুরু করেছে মিয়ানমার। সম্ভবত এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনকে মিয়ানমার সরকার দেখিয়েছে তাদের মানচিত্রে। উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান ও ভারত বিভক্তির সময় সেন্ট মার্টিন অন্তর্ভুক্ত হয় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানচিত্রে। ১৯৭১ সালে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এটি বাংলাদেশের অন্তর্গত। এমনকি ১৯৭৪ সালে সেন্ট মার্টিনের ওপর বাংলাদেশের অধিকার স্বীকার করে নিয়েই বাংলাদেশের সঙ্গে সমুদ্রসীমা চুক্তি করে মিয়ানমার। ২০১২ সালে সমুদ্র আইনবিষয়ক আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল এক রায়ে সেন্ট মার্টিনকে দেখিয়েছে বাংলাদেশের মানচিত্রে। এত কিছুর পরও সম্প্রতি মিয়ানারের শ্রম, অভিবাসন ও জনসংখ্যা মন্ত্রণালয়সহ অন্তত তিনটি ওয়েবসাইটে সেন্ট মার্টিনকে দেখানো হয়েছে মিয়ানমারের অংশ হিসেবে। অথচ এক সময় অর্থাৎ মধ্যযুগে তৎকালীন বর্মা মুলুক বর্তমানে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য অন্তর্ভুক্ত ছিল বৃহত্তর চট্টগ্রামের সঙ্গে। ঐতিহাসিক নথিপত্রে এর সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। ইতিহাস যাই বলুক বাংলাদেশ সেই দাবি কখনোই উত্থাপন করেনি। উল্টো মিয়ানমার এখন সেন্ট মার্টিনকে দেখাতে চাইছে তাদের মানচিত্রে। বাংলাদেশ সরকার অবশ্য তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকার মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে কড়া ভাষায় প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং ব্যাখ্যা দাবি করেছে। আসলে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে কোন পদক্ষেপ না নিয়ে নতুন ইস্যু তুলে অযথা সময়ক্ষেপণ করতে চাইছে, যা কাম্য নয় কোন অবস্থাতেই। অবশ্য চাপের মুখে মিয়ানমার ইতোমধ্যে উক্ত মানচিত্র প্রত্যাহার করেছে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বশেষ জাতিসংঘের সদর দফতরে মহাসচিব এ্যান্তোনিও গুতেরেসের উপস্থিতিতে শরণার্থী বিষয়ক বৈশ্বিক প্রভাব শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে যোগদান করেন। সেখানে তিনি বছরাধিককাল ধরে চলা রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা-সঙ্কট সমাধানে তিন দফা প্রস্তাব বা সুপারিশ উপস্থাপন করেন। ইতোপূর্বে বাংলাদেশ পাঁচ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেছিল। প্রথমত, মিয়ানমারকে অবশ্যই বৈষম্যমূলক আইন ও নীতি বিলোপ এবং রোহিঙ্গাদের প্রতি নিষ্ঠুরতা বন্ধ করে সে দেশ থেকে বাস্তুচ্যুত করার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে হবে। দ্বিতীয়ত, সব রোহিঙ্গাকে নাগরিকত্ব দেয়ার সঠিক উপায়, নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। তৃতীয়ত, রোহিঙ্গাদের প্রতি নৈরাজ্য রোধে সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের জবাবদিহি, বিচার বিশেষ করে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধানী মিশনের সুপারিশের আলোকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। আর তাহলেই কেবল সব রোহিঙ্গার নিরাপদে প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে।