সম্প্রতি তুরস্ক আর সিরিয়ার ভূমিকম্পের ভয়াবহতা ভূমিকম্পপ্রবণ অনেক দেশকেই ভাবাচ্ছে। এবার ভ‚মিকম্প আঘাত হেনেছে বাংলাদেশে। গত শুক্রবার বাংলাদেশ সময় ভোর ৫টা ৫৭ মিনিটে ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় একটি ভ‚মিকম্প অনুভ‚ত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ভ‚তাত্তিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের তথ্য অনুযায়ী, রিখটার স্কেলে ভ‚মিকম্পটির মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৩। এর উৎপত্তিস্থল ঢাকার দোহার থেকে ১৪ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণ-পূর্বে। ভ‚পৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে ছিল ভ‚মিকম্পটির উৎপত্তিস্থল। ঢাকার আশপাশে কিছু ভ‚তাত্তিক চ্যুতি বা ফাটল আছে। ছোট ও সরু নদী বা খাল এসব চ্যুতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এমন একটি চ্যুতি থেকেই গত শুক্রবার সকালে ভ‚মিকম্প হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভ‚মিকম্প বিশেষজ্ঞদের মতে, দোহার ও তার আশপাশের এলাকায় কয়েকটি ছোট নদী আছে। সেখানে চ্যুতি দিয়ে নিয়ন্ত্রিত কিছু নদী আছে। এমন চ্যুতিগুলো দিয়ে ছোট ভ‚মিকম্প হতে পারে। ইছামতী নদী বা তার কোনো শাখা নদী কিংবা খাল আজকের ভ‚মিকম্পের উৎসস্থল হতে পারে বলে ধারণা করা হয়েছে।
ভ‚মিকম্প বিশেষজ্ঞ মাকসুদ কামাল বলেন, ‘আমার গবেষণা অনুযায়ী, আজকের ভ‚মিকম্পটি নিয়ে বার্তা হলো-এমন ভ‚মিকম্প দেশে আগেও হয়েছে। নদীপথ নিয়ন্ত্রণ করে যে ফাটলরেখা, তা দিয়ে যখন ভ‚মিকম্প হয়, সেই ভ‚মিকম্প বড় হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই।’ তবে এ অঞ্চলে এখন পর্যন্ত দুটি বড় ভ‚মিকম্পের ইতিহাস আছে। তার একটি হয় ১৯১৮ সালে, শ্রীমঙ্গলে। আরেকটি হয় ১৮৮৫ সালে, ঢাকার অদূরে মানিকগঞ্জে। এটিকে ‘বেঙ্গল আর্থকোয়েক’ বলা হয়। আর ছোট ভ‚মিকম্প অনেক হয়েছে। আজকেরটাও ছোট ভ‚মিকম্প।
বাংলাদেশ ভ‚মিকম্পের ঝুঁকিতে আছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক শিক্ষকের এক গবেষণায় বলা হয়, দেশের ১৩টি এলাকা ভ‚মিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। ভ‚মিকম্পের ঝুঁকিতে থাকা সব কটি এলাকাই ঢাকা থেকে কমপক্ষে ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। চলতি বছরের দুটি ভ‚মিকম্পের ধরনের সঙ্গে প্রায় ২১১ বছর আগে হওয়া ভ‚মিকম্পের একটি মিল আছে। ১৮১২ সালের এপ্রিল ও মে মাসে ঢাকার আশপাশে পরপর দুটি ভ‚মিকম্প আঘাত হানে। ওই ভ‚মিকম্প ঠিক কত মাত্রার ছিল, তা নিশ্চিতভাবে জানা না গেলেও এতে ঢাকার দুটি এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া যায়। যেসব এলাকার ভ‚-অভ্যন্তরে চ্যুতি বা ফাটল থাকে, সেখানে প্রতি ২০০ থেকে ২৫০ বছর পরপর মাঝারি থেকে তীব্র ভ‚মিকম্প হয়ে থাকে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সেই হিসাবে ঢাকার আশপাশে বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে-এমন ভ‚মিকম্পের ঝুঁকি বাড়ছে। বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে যাওয়া ভ‚-অভ্যন্তরের বার্মা প্লেটের নিচে ইন্ডিয়ান প্লেট চাপা পড়ে যাচ্ছে। যে কারণে সেখানে প্রচুর শক্তি জমা হচ্ছে। ওই শক্তি যেকোনো সময় বের হয়ে শক্তিশালী কম্পন সৃষ্টি করতে পারে। ফলে ভ‚মিকম্প মোকাবিলায় থেমে থাকা কাজ আমাদের শুরু করা উচিত। ভ‚মিকম্প অতি কম সময়ের মধ্যে বিস্তর ক্ষতি সাধন করে। শুধুমাত্র আমাদের সচেতনতা ও সাবধানতার অভাবের ফলেই ভ‚মিকম্পে এত জীবন ও সম্পত্তির ক্ষতি সাধন হয়। এখন থেকেই এ ব্যাপারে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করার বিকল্প নেই।