কাজিরবাজার ডেস্ক :
মাস খানেক আগে শতকের পথে হাঁটতে থাকা পেঁয়াজের দাম কয়েকদিন কমার পর ফের একই পথেই এগোচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরেই পেঁয়াজের বাজার চড়া। এর মধ্যে ভারত আবার রপ্তানিমূল্য বাড়িয়েছে। তাই দাম আরও বাড়বে ক্রেতাদের বলে দিচ্ছেন বিক্রেতারা।
গত এক সপ্তাহের তুলনায় বাজারে পাইকারি দোকানে সব ধরনের পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। গত সপ্তাহে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হওয়া দেশি পেঁয়াজ এখন খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকায়। আর আমদানি করা পেঁয়াজ সপ্তাহের ব্যবধানে ৬০ টাকা থেকে বেড়ে এখন ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পাইকারি বাজারে এক পাল্লা (পাঁচ কেজি) দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়। আর আমদানি করা পেঁয়াজ ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা।
বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী মোস্তফা বলেন, ‘সরবরাহ কম থাকায় ভারতের বাজারেই পেঁয়াজের দাম বাড়তির দিকে রয়েছে। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি কমে যাওয়ায় চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমেছে এবং বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানির পরিমাণ আগের তুলনায় কমে গেছে। তাই আমদানি পেঁয়াজের সাথে দেশি পেঁয়াজেরও দাম বেড়েছে।’
বাংলাদেশে পেঁয়াজের যে চাহিদা রয়েছে তার একটা অংশ আসে ভারত থেকে। সেই ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম এখন বাড়তির দিকে।
ব্যবসায়ীরা জানান, পেঁয়াজ রপ্তানিতে দাম প্রায় দ্বিগুণ করেছে ভারত। এতদিন প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজ ৪০০ থেকে ৫০০ ডলারে আমদানি করা গেলেও নতুন দামে তা কিনতে হবে ৮৫০ ডলারে। শনিবার থেকে কার্যকর হবে এই নতুন দাম। প্রতি ডলার ৮২ টাকা ধরলে প্রতি কেজি পেঁয়াজের আমদানি মূল্যই পড়বে ৭০ টাকার মতো। এর সঙ্গে যোগ হবে পরিবহন খরচ, হাত বদলের লাভ। আবার কিছু পেঁয়াজ পরিবহনের সময় নষ্ট হবে এবং এই ক্ষতি ব্যবসায়ীরা পুষিয়ে নেবে বাড়তি দাম দিয়েই।
ভারত নতুন সিদ্ধান্ত নেয়ার পর পরই এই দাম বেড়ে গেছে বাজারে। পাইকারি বিক্রেতা মোস্তফার দোকান মাড়িয়ে আড়ত থেকে কিছুটা দূরে খুচরা বিক্রেতা কাজলের দোকানে গিয়ে দেখা যায়, কেজিপ্রতি দেশি পেঁয়াজ ৮৫ টাকা এবং ভারতীয় বড় পেঁয়াজ ৬৫-৭০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।
মোস্তফা বলেন, ‘গত ৪-৫ দিনের মধ্যে এ দাম বেড়েছে। নতুন মাল নামছে না। বস্তা কাটায় এই মালটা ৮২ টাকায় আমারই কেনা! আমি কত বেচমু কন? এ বছর বৃষ্টিতে নতুন পেঁয়াজ ক্ষেত নষ্ট হয়েছে দুইবার। কৃষকের হাতে কোনো পেঁয়াজ নেই। আর ভারত থেকে আদমানি কমে গেছে।’
তার সাথে আলাপচারিতার মাঝেই তার দোকানে পেঁয়াজ কিনতে আসেন মনির। তিনি প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলেন পাঁচ কেজি কিনবেন। কিন্তু দাম শোনার পর দোকানিকে এক কেজি দিতে বলেন।
মনির বলেন, ’৮৫ থেকে ৯০ টাকায় যদি পেঁয়াজ কিনতে লাগে বাকি সদাই কিনব কী দিয়ে? আমি পাঁচ কেজির নিচে নেই না, এই কয়দিন আগে দেখলাম কিছুটা কম ছিল আবার বেড়ে গেছে । তাই এক কেজি নিলাম। পরে দাম কমলে নেব। এতে যে কয়দিন যায়।’
বাজার ঘুরে পাইকার ও খুচরা বিক্রেতাদের ভাষ্য অনুযায়ী, পেঁয়াজের অস্থিতিশীলতা ডিসেম্বরের আগে থামার কোনো সুখবর পাওয়া যায়নি। ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি বাড়ার জন্য এবং নতুন দেশি পেঁয়াজ ওঠার জন্য অপেক্ষা করতে হবে বলে তথ্য দেন তারা।
দেশে বছরে প্রায় ২৪ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ১৮ লাখ টন দেশে উৎপাদিত হয়। বাকিটা আমদানি করা হয়, যার অধিকাংশই আসে ভারত থেকে। তবে নয় লাখ টনের দামেই নির্ধারিত হয় বাকি ১৮ লাখ টনের দাম। পচনশীল বলে তুরস্ক, চীন বা পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা কঠিন বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।