কাজিরবাজার ডেস্ক :
সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি খাতেও ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের জন্য সাবমেরিন ক্যাবলের লাইসেন্স দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। নীতিমালা অনুযায়ী দুটি প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেওয়া হবে। শেষ দিন (১০ মে) পর্যন্ত ৬টি প্রতিষ্ঠানের আবেদন জমা পড়েছে। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিটিআরসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাবমেরিন ক্যাবলের লাইসেন্সের জন্য সামিট কমিউনিকেশন্স লিমিটেড, ফাইবার অ্যাট হোম লিমিটেড, সিডিনেট টেকনোলজিস লিমিটেড, ম্যাঙ্গো টেলিসার্ভিসেস লিমিটেড, টোটাল সলিউসন্স লিমিটেড ও মেটাকোর সাবকম লিমিটেড আবেদনপত্র জমা দিয়েছে।
জানা গেছে, ‘বিল্ড, অপারেট অ্যান্ড মেইনটেইন সাবমেরিন ক্যাবল ইন বাংলাদেশ’ নামে একটি গাইডলাইনও তৈরি করা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয় দুটি বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানকে সাবমেরিন ক্যাবলের লাইসেন্স দেওয়া হবে।
লাইসেন্স দেওয়ার পর প্রতিষ্ঠান দুটি সাবমেরিন ক্যাবলের অপারেশন চালু করতে অন্তত ৪ বছর সময় পাবে। এর আগেই বাংলাদেশ তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে (সি-মি-ইউ-৬) যুক্ত হয়ে যাবে। বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিসিএল) তত্ত্বাবধানে এগুলো পরিচালিত হচ্ছে। সি-মি-ইউ-৪, সি-মি-ইউ-৫ এবং সি-মি-ইউ-৬, এই তিনটিই হবে সরকারি প্রতিষ্ঠানের সাবমেরিন ক্যাবল।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এবার আবেদনগুলো নিয়ে বিউটি কনটেস্ট অনুষ্ঠিত হবে। তারপর লাইসেন্স পাওয়ার উপযুক্ততা বিচার করে নির্বাচন করা হবে দুটি প্রতিষ্ঠানকে। জানা যায়, আবেদনের শর্ত অনুযায়ী, লাইসেন্স পাওয়ার ৪৮ মাসের (৪ বছর) মধ্যে অপারেশনে আসতে হবে প্রতিষ্ঠান দুটিকে।
প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালের প্রথম দিকে দেশে প্রথম সাবমেরিন ক্যাবল কমিশনিং করা হয়। ২০২৪ সাল নাগাদ দেশে ৬ হাজার জিবিপিএস’র (গিগাবিটস পার সেকেন্ড) বেশি আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইথের প্রয়োজন হবে। সি-মি-ইউ-৬ সাবমেরিন ক্যাবল দিয়ে দেশে ১৩ দশমিক ২ টেরাবাইট ব্যান্ডউইথ আসবে বলে জানা গেছে। যদিও আগে আসার কথা ছিল ৬ টেরাবাইট ব্যান্ডউইথ। পরে এর সক্ষমতা বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলটি চালু হবে বলে জানা গেছে।
গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর সি-মি-ইউ-৬ কনসোর্টিয়ামে সই করেছে বাংলাদেশ। সি-মি-ইউ-৬ কনসোর্টিয়ামে যোগদানকারী ১৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে সিংটেল সিঙ্গাপুর, বিএসসিসিএল বাংলাদেশ, টেলিকম মালয়েশিয়া, এসএলটি শ্রীলঙ্কা, ধিরাগু মালদ্বীপ, এনআইটুআই ভারত, টিডব্লিউএ পাকিস্তান, জিবুতি টেলিকম, জিবুতি, মোবিলিংক সৌদি আরব, চায়না মোবাইল ইন্টারন্যাশনাল চায়না, টেলিকম গ্লোবাল লিমিটেড চায়না, ইউনিকম চায়না, মাইক্রোসফট যুক্তরাষ্ট্র, টেলিকম ইজিপ্ট মিসর ও অরেঞ্জ ফ্রান্স।
বেসরকারি খাতের সাবমিরন ক্যাবল এই তিনটির বাইরে হবে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সি-মি-উই-৬-এ যে পরিমাণ ব্যান্ডইউথ আসবে, তা দিয়ে আমাদের চাহিদা ভালোভাবেই পূরণ হবে। ২০৩০ সাল পর্যন্ত নতুন কোনও সাবমেরিন ক্যাবল না হলেও চলবে।’
তিনি উল্লেখ করেন, আমরা অবশ্যই বেসরকারি খাতের জন্য ব্যবসা উন্মুক্ত করে দিয়েছি। যোগ্যতা দেখিয়ে যদি কোনও প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স পায়, সেটা তো অবশ্যই ইতিবাচক একটি দিক হবে। এজন্য আগ্রহপত্র চাওয়া হয়েছিল। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যেসব প্রতিষ্ঠান আবেদন জমা দিয়েছে, তাদের যাচাই-বাছাই করে উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করা হবে।
এ বিষয়ে দেশের ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবির সাবেক সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, ‘সব ধরনের লাইসেন্স আছে এমন প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেওয়া হলে বাজারে মনোপলি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এসব বিষয় লাইসেন্স দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্টরা ভেবে দেখবেন বলে আশা করি।’ তিনি মনে করেন, ভ্যালু চেইনে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্য থেকে লাইসেন্স দিলে খাতটিতে লেভেল প্লেয়িং আর থাকবে না।