কাজিরবাজার ডেস্ক :
দেশব্যাপী আলোচিত বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহমেদ নয়ন (নয়ন বন্ড) পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। এ সময় পুলিশ ও নয়ন বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে পুলিশের চার সদস্য আহত হয়। মঙ্গলবার ভোরে বরগুনা সদর উপজেলার ৬নং বুড়িরচর ইউনিয়নের পুরাকাটা ফেরিঘাট সংলগ্ন মজিদ মিয়ার বাড়ির সামনে এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন পিপিএম জানিয়েছেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা জানতে পাই যে, সদর উপজেলার পুরাকাটা ফেরিঘাট সংলগ্ন এলাকায় রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় কয়েক আসামি অবস্থান নিয়েছে এবং তারা নদী পথে পালানোর পাঁয়তারা করছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে আসামিদের গ্রেফতার করার জন্য পাথরঘাটা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিএম আশ্রাফউল্লাহ তাহেরের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা সেখানে অভিযান চালায়। অভিযান পরিচালনাকালীন পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে আসামিরা পুলিশকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। এ সময় পুলিশও জান এবং সরকারী মালামাল রক্ষার জন্য পাল্টা গুলি ছোড়ে। উভয়পক্ষের গোলাগুলিতে আসামিদের একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনা স্থলে পড়ে থাকে। তার সহযোগী আসামিরা পালিয়ে যায়। গোলাগুলির শব্দ শুনে ঘটনাস্থলে আসা স্থানীয় লোকজন গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিকে রিফাত হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহম্মেদ নয়ন বন্ড বলে শনাক্ত করেন। ঘটনাস্থল থেকে এ সময় একটি বিদেশী পিস্তল, এক রাইন্ড পিস্তলের গুলি, শর্টগানের দুটি কার্তুজের খোসা ও তিনটি দেশীয় তৈরি ধারালো অস্ত্র জব্দ করা হয়। পুলিশ সুপার আরও জানিয়েছেন, নয়ন বন্ড নিহত এবং তার সহযোগী অন্য আসামিরা পালিয়ে গেলেও তারা পুলিশের জালের মধ্যে রয়েছে। যে কোন সময় তারা ধরা পড়বে।
সন্ত্রসীদের সঙ্গে গোলাগুলিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল শাহ-জাহান হোসেন, এসআই (নি.) হাবিবুর রহমান, এসআই (নি.) মনিরুজ্জমান, কনস্টেবল হাবিবুর রহমান আহত হয়। তাদের প্রথমে বরগুনা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহ-জাহান ও এসআই হাবিবুর রহমানের আঘাত গুরুতর হওয়ায় তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে দুপুর বারোটার দিকে বন্দুকযুদ্ধে নিহত নয়ন বন্ডের ময়নাতদন্ত করা হয়। হাসপাতালের তত্ত্বাধায়ক ডাঃ সোহরাফ হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদেস্যের মেডিক্যাল বোর্ড ময়নাতদন্ত করে। ডাঃ সোহরাফ হোসেন জানিয়েছেন নিহত নয়নের শরীরে তিনটি গুলির আঘাত পাওয়া গেছে। শরীরের পেছন দিক থেকে গুলিগুলো বেদ করে বুকের ডান দিক থেকে দুটি ও বাম দিক থেকে একটি বের হয়। এতে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়।
বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে বরগুনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবির মোহাম্মদ হোসেন নিহত নয়নের লাশ তার মামা মিজানুর রহমানের কাছে হস্তান্তর করেন। এদিকে আলোচিত এ হত্যা মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় বরগুনার সর্বস্তরের মানুষ স্বস্তি প্রকাশ করেছে। নয়নের লাশ দেখার জন্য বরগুনা হাসপাতাল প্রাঙ্গণে শত শত মানুষ ভির জমায়। পুলিশ সারিবদ্ধভাবে তাদের লাশ দেখার সুযোগ করে দেয়। কেউ কেউ এলাকায় মিষ্টিও বিতরণ করে।
রিফাত শরীফের বাড়িতে সাংসদ শম্ভু : সন্ত্রাসীদের নির্মম হামলার শিকার হয়ে নিহত শাহ নেওয়াজ রিফাত শরীফের (২৫) বাড়িতে গিয়ে তার পিতা-মাতাকে সান্ত্বনা দিলেন বরগুনা-১ আসনের সাংসদ এ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। তিনি মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে রিফাত শরীফের বাড়িতে যান। এসময় তিনি রিফাতের কবর জিয়ারত করে তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কমনায় দোয়া মোনাজাত করেন। এ সময় তিনি রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ, মা ডেইজি আক্তার ও চাচা প্রাক্তন চেয়ারম্যান আঃ আজিজ শরীফসহ পরিবাবের সদস্যদের সান্ত্বনা দেন। তিনি এ ঘটনায় পুলিশ প্রশাসনের তৎপরতায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, জঘন্যতম এ হত্যাকা-ের মূল আসামি ইতোমধ্যে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। অপর আসামিরাও অচিরেই ধরা পড়বে এবং তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে। জাতীয় সংসদের বাজেট আলোচনা থাকার কারণে তিনি ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে আসতে না পেরে দুঃখ প্রকাশ করেন। সাংসদ শম্ভু বলেন, নিষ্পাপ রিফাত শরীফ হত্যাকা-কে কেন্দ্র করে একটি মহল ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের পাঁয়তারা করছে। হত্যাকা-ে জড়িত নয়ন বন্ড এবং তার সহযোগীদের আমি চিনি না, তারা কখনই আমার কোন সহযোগিতা পায়নি। আমি বিগত দিনের মতো এখনও মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার রয়েছি। বরগুনাকে মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত করতে যে ধরনের পদক্ষেপ প্রয়োজন তা নেয়া হবে।
এরপরে তিনি রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির বাবার বাড়িতে গিয়ে মিন্নি ও তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের সান্ত¦না দেন। এ সময় মিন্নি তার স্বামী হত্যার বিচার দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। এ বিষয়ে সাংসদ সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।