শাবি থেকে সংবাদদাতা :
গত রবিবার দিবাগত রাত আনুমানিক ১১টা। এমন সময় কয়েকজন আচমকা আমার রুমে ঢুকে লোকপ্রশাসন বিভাগের আমিনুল ইসলাম তামিমের নির্দেশে আমাকে ৪১৮ নম্বর রুমে নিয়ে বলে, ‘তুই কি শুরু করছোস, তোর সমস্যাটা কি? তুই কার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চাস? এগুলো বলে আমার উপর ক্ষিপ্ত হয় এবং মারধর শুরু করে।’ এভাবেই সেদিন রাতের বর্ণনা দিচ্ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) রসায়ন বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী এবং শাহপরান হলের ৪২১ নম্বর রুমের আবাসিক শিক্ষার্থী এসএম সাখাওয়াত হোসেন সাকিব নিলয়।
তিনি আরও বলেন, ‘এর একপর্যায়ে আমার মোবাইল ফোন ওরা ছিনিয়ে নেয়। যা এখনো আমি ফেরত পাইনি।’ এদিকে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ও ক্ষতিপূরণ চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক এবং শাহপরান হল প্রভোস্ট বরাবর আবেদন পত্র দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ওই শিক্ষার্থী। সেখানে তাকে মারধর, তার আইফোন-১০ মোবাইল ফোনটি ছিনিয়ে নেওয়া এবং জোরপূর্বক ভিডিও ধারণের অভিযোগ উল্লেখ করেন নিলয়।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জানান, এ সময় সেখানে পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের তানভীর হাসান তামিম, শাকিল হাওলাদার, লোকপ্রশাসন বিভাগের হাবিবুর রহমান আসিফ, সাখাওয়াত হোসাইন রাকিব, শিমুল, সাব্বির হোসেন এবং তারেকসহ আরও অনেকেই উপস্থিত ছিলো। ওরা সবাই ছাত্রলীগের তারেক হালিমি এবং সুমন সরকারের গ্রুপের অনুসারী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গ্রুপ নেতা তারেক হালিমি এবং সুমন সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রুহুল আমিনের অনুসারী ছিলো। পরে কমিটি বিলুপ্ত হলে একাধিক ব্যক্তি ওই গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। নিলয় ছাত্রলীগের সুমন সরকার ও তারেক হালিমির অনুসারী।
ভিডিও ধারণের প্রসঙ্গ নিয়ে ওই শিক্ষার্থী জানান, তারা আমাকে জোরপূর্বক শিখিয়ে দেওয়া মিথ্যা এবং বানোয়াট কথা ‘ছাত্রলীগের আরেক গ্রুপের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চাই। এই গ্রুপের ক্ষতি করে আবু হাসান রাফি, শামসেদ সিদ্দিকী সুমন ভাইদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চাই।’ জোরপূর্বক এগুলো বলিয়ে নিয়ে ভিডিও ধারণ করে।
নিলয় জানান, এই বিষয়টি নিয়ে প্রভোস্টের সঙ্গে কথা বললে তিনি ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলে সমাধান করতে বলেন। এ বিষয়ে প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান খানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা এ বিষয় নিয়ে কাজ করছি। তবে ছাত্রলীগের বিষয়ে যে অভিযোগ তিনি তা অস্বীকার করেন।
এদিকে আবু হাসান রাফি এবং শামসেদ সিদ্দিকী সুমনকেও সেদিন রাতে তারেক হালিমি এবং সুমন সরকারের গ্রুপের অনুসারীরা হল থেকে বের করতে যায়। শামসেদ সিদ্দিকী সুমন বলেন, সেসময় হৃদয় মোদকসহ অনেকেই আমার রুমে এসে আমার সঙ্গে উচ্চবাচ্য করে এবং আমাকে রুম থেকে বের হতে বলে। পরে ছাত্রলীগের অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সবাই সাবেক সভাপতি রুহুল আমিনের অনুসারী ছিলাম। পরবর্তীতে আমরা জাতীয় প্রোগ্রামে নিয়মিত অংশগ্রহণ করি। কিন্তু অন্যান্য প্রোগ্রামে না যাওয়ায় তারা আমাদের বের করতে চাচ্ছে।’
ছাত্রলীগের গ্রুপ নেতা তারেক হালিমি সাংবাদিকদের জানান, তিনি ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ঢাকায় অবস্থান করছেন। এ বিষয়ে সুমন সরকার বলতে পারবে। পরে সুমন সরকার মারধরের কথা অস্বীকার করে বলেন, প্রথমে একজন তার কাছ থেকে দেখার জন্য ফোন নিয়ে একটু পরে দিয়ে দেয়। কিন্তু পরে সে বলে ফোন পায়নি। এটা তার ভিন্ন পরিকল্পনা হতে পারে। এদিকে জোরপূর্বক ভিডিও ধারণের বিষয়ে তিনি বলেন, সে রকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। তার বন্ধু এবং সিনিয়ররা তাকে কিছু বিষয়ে জিজ্ঞেস করে।