বোরো ধান কাটা শেষের দিকে। এরই মধ্যে যা কাটা হয়েছে, তার কিছু বাজারে আসতে শুরু করেছে। আর বাজারে আসতে না আসতেই নতুন ধানের দাম কমতে শুরু করেছে। দাম কমতে কমতে কোথায় গিয়ে ঠেকে এখন তা নিয়েই চিন্তিত কৃষক। জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে সারা দেশ থেকে আট লাখ মেট্রিক টন ধান কিনবে সরকার। এবার ধানের দাম এক হাজার ৪০ টাকা মণ নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রায় দুই হাজার ৮০ কোটি টাকার ধান কিনবে সরকার। ২৬ এপ্রিল থেকে আগামী ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত ধান কিনবে সরকার। অনেক জেলায় তালিকা ও লটারিবিষয়ক জটিলতার কারণে ধান সংগ্রহ কার্যক্রম শুরুই করতে পারেনি সরকার। এ পরিস্থিতি কৃষকের জন্য ক্ষতিকারক, বিশেষ করে প্রান্তিক কৃষকের জন্য।
সরকারের ধান কেনায় বিলম্বের সুযোগ নিচ্ছে ফড়িয়া ও চাতাল ব্যবসায়ীরা। কৃষকদের নগদ টাকার দরকার। ফলে তাঁরা সরকার ঘোষিত মূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন এলাকাভেদে ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকা মণ দরে ধান বিক্রি হচ্ছে। কৃষকরা বলছেন, নতুন ধান বাজারে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে কমে যাচ্ছে ধানের দাম। অনেক জায়গায় জেলা ধান ক্রয় কমিটি এখনো কেনা শুরু করতে পারেনি। অথচ ধান কাটা ও সেচের খরচ মেটানো এবং ঋণ পরিশোধের জন্য কৃষকদের টাকা প্রয়োজন। ফলে কম দামে ধান বেচে দিতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। সাধারণত প্রান্তিক কৃষকরা আগেভাগেই ধান বিক্রি করতে বাধ্য হন। তাঁদের পরিবারের নানা খরচও মেটাতে হয় এই ধান বিক্রির টাকা দিয়ে।
কাঁচা ধানের দাম কম হবে এমন যুক্তি দিয়ে ফড়িয়ারা ধান কিনছে। কিন্তু কাঁচা ধানের দামও ঠিকমতো কৃষক পান না। মোটা চালের ধান বলেও দামে কম দেওয়া হয়। মোট কথা, কৃষককে বঞ্চিত করার একটি প্রক্রিয়া সব সময় বহাল থাকে। সরকার যদি ধান কেনার প্রস্তুতি আগেই সম্পন্ন করে রাখত, তাহলে ধান কাটার দিনকয়েকের মধ্যেই কেনার কার্যক্রম শুরু করতে পারত। তাদের প্রক্রিয়া শুরু হয় ধান কাটারও সপ্তাহ বা পক্ষকাল পর। এটা বড় বিপত্তি তৈরি করে। যাঁদের তাৎক্ষণিক বিক্রি করা প্রয়োজন তাঁরা সরকারি মূল্যে বিক্রির সুযোগ পান না। সরকারের প্রক্রিয়া আসলে কৃষকবান্ধব নয়। ফলে প্রতিবারই কৃষককে ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হতে হয়; বিশেষ করে প্রান্তিক কৃষকদের। সরকারের ধান ক্রয় প্রক্রিয়া যথাসময়ে হওয়া উচিত এবং কৃষকের যথাপ্রয়োজনে লাগা উচিত বলে আমরা মনে করি।