কাজিরবাজার ডেস্ক :
আজ রাত পেরোলেই আগামীকাল ভোরের পূর্বাকাশে দেখা দেবে নতুন বছরের সূর্য। এসে গেল আরও একটা নতুন বছর। নতুন আশায় বুক বেঁধে নতুন করে পথ চলার ব্রত। কিন্তু, অতীতের বীজেই যে ভবিষ্যতের বৃক্ষ, সে তো আর নতুন নয়। তাই পেছনে ফিরতেই হয়। দেখে নিতে হয়। কেমন গেল, কী মিলল, কী হারাল। আগামীতেইবা কী হবে। এই ফিরে দেখাটা পেছনে যাওয়া নয়, সামনে এগোনোর তাগিদেই।
দেখতে দেখতে কেটে গেল আরেকটি ঘটনাবহুল বছর। দিনপঞ্জিকার শেষ পাতাটি উল্টে যাবে আজ। নানা কাজের ফিরিস্তি লেখা নিত্যসঙ্গি হয়ে হাতখাতাটি হয়ে পড়বে সাবেক। পরমায়ুর বৃক্ষ থেকে ঝরে যাবে একটি পাতা। মহাকাল নামের এক অন্তহীন মরুভূমির বুকে যেন একফোঁটা জল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত এবং সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সর্বত্র পরাজয়ের উৎসবকে ইতিহাসের পাতায় স্মরণীয় করে রেখে বিদায় নিচ্ছে ঘটনাবহুল ২০১৯।
তবে এই বর্ষ বিদায় শুধু একটি বছর নয়, একই সঙ্গে এক দশকেরও বিদায়। আর জাতির জীবনে এই বিদায়ী ১০ বছর অনেক তাৎপর্যপূর্ণ, ঘটনাবহুল, অনেক কিছু অর্জনের দশক। গত এ দশকে জাতির ওপর চেপে বসা সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিদায় এবং পরবর্তী নির্বাচনে ভূমিধস বিজয় নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর আর জাতিকে সাম্প্রদায়িক-জঙ্গিবাদ, অগ্নিসন্ত্রাস, পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যার ভয়াল ও বীভৎস অন্ধকারের রাজনীতির দিকে ফিরে যেতে হয়নি।
গত এক দশক অর্থাৎ টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে অন্ধকার থেকে দেশকে আলোর পথে, ব্যর্থ রাষ্ট্র পরিণত করার সকল ষড়যন্ত্র নস্যাত করে দেশকে উন্নয়ন ও অগ্রগতির মহাসড়ক দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই জাতি শুধু একটি বছর ২০১৯ নয়, বরং গত এক দশকের বিদায়ক্ষণে অতীতের সবকিছু স্মরণ করেই অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় শপথে বলীয়ান হবে।
আজ মহাকাল সেভাবেই মুছে দেবে বহুল আলোচিত ২০১৯ কে। ‘যেতে নাহি দিব’-এ চিরন্তন বিলাপধ্বনির ভেতরে আবহমান সূর্য একটি পুরনো দিবসকে আজ কালগ্রোতের ঊর্মিমালায় বিলীন করে পশ্চিম দিগন্তে মিলিয়ে যাবে। বর্ষবরণের আবাহন রেখে কুয়াশামোড়া পা-ুর সূর্য আজ বিদায় নেবে মহাকালের যাত্রায়। সময় হলো খিস্টীয় ২০১৯ সালকে বিদায় বলার। খ্রিস্টীয় নতুন বছর ২০২০ সালকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত গোটা বিশ্ববাসী। আর বাংলাদেশে যে কালজয়ী মানুষটির দীর্ঘ সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ, সেই জাতির পিতা ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ঘোষিত বছরব্যাপী ‘মুজিববর্ষ’ পালনেও দেশের মানুষ প্রস্তুত।
সময় যায়। সময় যাওয়ার সময় বদলে যায় অনেক কিছুই। এ হলো পরম সত্য। সময় যেন এক প্রবহমান মহাসমুদ্র। কেবলই সামনের এগিয়ে যাওয়া, পেছনে ফেরার সুযোগ নেই। তাই তো জীবন এত গতিময়। সেই গতির ধারাবাহিকতায় মহাকালের প্রেক্ষাপটে একটি বছর মিলিয়ে গেল। আজ আলোড়িত-আন্দোলিত বর্ষ বিদায়ের দিন। জীর্ণ-ঝরা পল্লবের মতো সরল রৈখিক গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে আজ খসে পড়বে ‘২০১৯’। মধ্যরাতে নতুন বছর ২০২০-কে স্বাগত জানানোর উৎসবের বাঁশি বেজে উঠবে সবার প্রাণে।
আগামীকাল থেকে শুরু হবে নতুন প্রত্যাশার নতুন বছর, কিন্তু যে বছরটি হারিয়ে গেল জীবন থেকে, ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে, তার সবই কি হারিয়ে যাবে? মুছে যাবে সব? না, সবকিছু মুঝে যায় না। ঘটনাবহুল ২০১৯-এর ঘটনার রেশ টেনেই মানুষ এগিয়ে যাবে ২০২০ সালের মধ্যরাত্রির পথে। অনেক ঘটনা মুছে যাবে বিস্মৃতির ধুলোয়। আবার পাওয়া না পাওয়ার অনেক ঘটনা থাকবে উজ্জ্বল হয়ে।
প্রতিবারের মতো এবারও নতুন সূর্যালোকে নতুন আশা ও স্বপ্ন নিয়ে নতুন একটি বছরে যাত্রা শুরুর জন্য প্রস্তুত সবাই। অসীম প্রত্যাশা নিয়ে মানুষ অপেক্ষা করছে আজ মধ্যরাতের প্রথম প্রহরের জন্য, যখন সূচিত হবে নতুন আকাক্সক্ষায় উদ্ভাসিত হবে নতুন বছর। যে বছরের খেরোখাতায় চোখ বুলালেই বয়ে যায় আনন্দ-বেদনার গ্রোত। হয়ত স্মৃতি সতত সুখের নয়। হিসাবের খেরোখাতায় জমে আছে অনেক বিয়োগ-ব্যথা, হারানোর কান্না, নানা গ্লানি আর মালিন্যের দাগ। বছরজুড়ে অপ্রত্যাশিত নানা ঘটনা-দুর্ঘটনায় আমাদের মন ভীষণ ভারাক্রান্ত, তবু নিরাশার গভীর থেকে ফুঠে ওঠে বিপুল আশার আলো, ধ্বংসস্তূপ থেকে ফোটে নবতর জীবনের ফুল। আমরা আবার মেতে উঠি সৃষ্টিসুখের উল্লাসে, বৈরী সময়কে মারিয়ে হেসে গেয়ে উঠি জীবনের জয়গান।
আজ রাত পেরোলেই কাল পূর্বাকাশে উঠবে যে নতুন সূর্য, সে সূর্য নতুন বছরের। নতুন আশায় বুক বেধে আরও একটি নতুন বছরের দিনলিপি পড়ে থাকবে পেছনে। নতুন বছরে নতুন সূর্যের অসীম প্রতীক্ষা মানুষের। উৎসব আয়োজনের মধ্য দিয়েই মানুষ স্বাগত জানাবে ইংরেজী নতুন বছর ২০২০ সালকে। ইংরেজী পঞ্জিকার সর্বজনীনতায় কাল বিশ্ববাসীও মেতে উঠবে নতুন বছরের আগমনী আনন্দ-উল্লাসে। স্বপ্ন আর দিনবদলের অপরিমেয় প্রত্যাশার রক্তিম আলোয় উদ্ভাসিত শুভ নববর্ষ ২০২০। ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ উচ্চারিত হবে বিশ্বের শত কোটি মানুষের কণ্ঠে।
বহু ঘটনার জন্ম দিয়ে মহাকালের পরিক্রমায় বিদায় নিল আরও একটি বছর। মিথ্যার কুহেলিকা ভেদ করে সত্য প্রতিষ্ঠিত এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অভূতপূর্ব পুনর্জাগরণ ঘটিয়ে চিরকালের জন্য আজ হারিয়ে যাচ্ছে ঘটনাবহুল ২০১৯ সাল। বাংলাদেশের ৪৮ বছরের অনেক ইতিহাস বদলে দিয়েছে বিদায়ী বছরটি। সূচনা করেছে জাতীয় জীবনে ও রাজনীতির ইতিহাসে এক অভিনব অধ্যায়ের। ইতিহাসে রেকর্ড চতুর্থবারের মতো গঠিত মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বাদানকারী আওয়ামী লীগ সরকার এক বছর মেয়াদপূর্তির প্রাক্কালে। আর এই এক বছরে উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার মহাসোপানে আজ বাংলাদেশ। আর তাই বিপুল উন্নয়ন আর জনমনে শান্তি-স্বস্তি দিয়েই বিদায় নিল ২০১৯ সাল। অনেক ঘটন, অঘটন, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, চড়াই-উৎরাই, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও আনন্দ-বেদনার সাক্ষী হয়ে কালের গর্ভে আজ হারিয়ে যাচ্ছে এ বছরটি।
যে প্রত্যাশার বিশালতা নিয়ে ২০১৮ সালের যে প্রথম দিনটি বরণ করা হয়েছিল, সেই প্রত্যাশার সব কি পূরণ হয়েছে। হয়নি। কিন্তু যা পাওয়া গেছে তাও কম নয়। নানা চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র শক্তভাবে মোকাবেলা করে সৃষ্টির জাগরণে দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে বর্তমান সরকার। সকল ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের বেড়াজাল ছিন্ন করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের দক্ষ রাষ্ট্র পরিচালনায় আজ সবদিক থেকে সমৃদ্ধির মহাসড়ক দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দুর্নীতি-সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের দেশের কালো তকমা মুছে ফেলে সারাবিশ্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল।
সকল ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে প্রমত্তা পদ্মা সেতুর বুক চিরে নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণযজ্ঞ প্রায় অর্ধেক সম্পূর্ণ হয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর। নির্মাণ কাজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে রাজধানীতে মেট্রোরেল নির্মাণ। দেশের ইতিহাসে জাতীয় প্রবৃদ্ধি অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়ে দারিদ্র্যের হার ২০ ভাগে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে সরকার। সরকারের দক্ষ রাষ্ট্র পরিচালনায় বাংলাদেশ পেয়েছে বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তাই বিদায়ী বছরে কৃষি, অর্থনীতি, শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, রাজনীতিসহ সার্বিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণে বলা যায়, আশা-নিরাশার, আনন্দ-বেদনার দোলাচলে যথেষ্ট বাক্সময় ২০১৯। নতুন বছর ২০২০ সালের অনেক প্রত্যাশার বীজও বনে গেছে বিদায়ী ২০১৯।
দেখতে দেখতে চলে গেল আরেকটি বছর। শেষলগ্নে এসে হাসি-কান্না, পাওয়া-না পাওয়ার হিসাব মেলাতে ব্যস্ত সবাই। রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশে বিদায়ী বছরটি কেমন গেল, দেশের সব মানুষের এক জবাব- ২০১৯ সাল ছিল নিস্তরঙ্গ রাজনীতির বছর। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া কার্যত পুরো বছরটিই কেটেছে শাস্তি, স্বস্তি ও অগ্রগতির মিছিলে। ২০১৫ সালের মতো দেশবাসীকে রাজনীতির নামে নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, অগ্নিসন্ত্রাস আর পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যার নির্মমতা ও নৃশংসতার ঘটনা আর দেখতে হয়নি।
বিদায়ী বছরে সরকারের সাফল্য বা অর্জনের কমতি ছিল না। একের পর এক আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিজয়, সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে সাফল্যে-অর্জনে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, দেশীয় অর্থনীতি মজবুত, উপচেপড়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। পাল্টে যাচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতিও। বিদায়ী বছরে রাজপথে ছিল না সরকারবিরোধী আন্দোলন কিংবা সংঘাত-সাংঘর্ষিক রাজনীতি। রাজনৈতিক প্রধান প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিকভাবে অস্তিত্বের সঙ্কটে ফেলার কৃতিত্বও সরকারের ঝুলিতে। পুরো বছরেই রাজনীতির লাগাম ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে। বিশ্বের বড় বড় দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরাও বাংলাদেশে অভূতপূর্ব উন্নয়নের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন বিদায়ী বছরজুড়েই।
২০১৯ সালটি কেমন গেল তার সার্বিক পর্যালোচনায় এক কথায় বলা যায়, কিছু ঘটনা ছাড়া রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে উন্নয়নের নবযাত্রার এক বছর পূর্ণ হলো। বিদায়ী বছরটা শুরুই হয় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তির মহাবিজয় দিয়েই। সারাদেশেই আওয়ামী লীগসহ মহাজোটের জয়-জয়কার। পোড় খাওয়া ভোটার ছাড়াও তরুণ প্রজন্মের নতুন ভোটাররাও উন্নয়ন, সমৃদ্ধি, অসাম্প্রদায়িক মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার রূপকার আওয়ামী লীগকেই টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠনের জন্য নৌকার পক্ষে ব্যালট বিপ্লব ঘটান। টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করে মেয়াদের এক বছর পূর্তি ঘটা করে পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।
আলোচিত-বাংলাদেশ দেশে-বিদেশে : আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ, রোহিঙ্গা সঙ্কটে মানবতা প্রদর্শনসহ নানা ইস্যুতে সফলতার কারণে বিদায়ী বছরজুড়ে বিশ্বে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে বাংলাদেশ। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার মৌলিক চাহিদার জোগান ঠিক রেখে অব্যাহত আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন, তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ, কৃষি ও বিদ্যুত খাতের উন্নয়ন, রোহিঙ্গা সঙ্কটে মানবতার দৃষ্টান্ত, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান, নিজ দলের মধ্যে শুদ্ধি অভিযান, ক্রিকেটারদের সাফল্যে, পদ্মা সেতুর দৃশ্যমান ব্যাপক অগ্রগতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সততা ও পরিশ্রমের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিসহ নানা কারণে বিদায়ী বছরে বিশ্ব সম্প্রদায়ের নজর কেড়েছে বাংলাদেশ। বিশ্ব গণমাধ্যমেও এসব অর্জনের খবর ফলাও করে প্রচারিত হয়েছে। বছরজুড়েই বিশ্ব অঙ্গনে আলোচিত ছিল বাংলাদেশ।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এখন শুধু গল্প নয়, বাস্তবতা। ১৯৭১ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশের পথ চলা শুরু করে ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আর ৭০ শতাংশ দারিদ্র্যের বোঝা নিয়ে। এমন দৈন্যদশা ঘুচিয়ে এখন প্রবৃদ্ধির চাকা ঘুরছে ৮ শতাংশের ওপর। আর দারিদ্র্যের হার কমে ২০ ভাগে নেমে এসেছে। বাজেটের আকার ৫ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকা অতিক্রম করেছে। রিজার্ভ রয়েছে প্রায় ৩৪ বিলিয়ন ডলার, প্রবৃদ্ধির হার ইতিহাসের রেকর্ড ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। মাথাপিছু আয় ১৯০৯ মার্কিন ডলার। অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বাংলাদেশ প্রায় সব সূচকে এগিয়ে যাচ্ছে। এখন এগিয়ে যাওয়া উন্নত দেশের দিকে।
মাত্র এক দশকেই অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচকে বিশ্বের শীর্ষ ৫টি দেশের একটি আজ বাংলাদেশ। উন্নয়ন-অগ্রগতি সারাবিশ্বের কাছে বিস্ময়ের নাম বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুসারে ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বের ৩০টি দেশের মধ্যে অন্যতম। এইচবিএসসির প্রক্ষেপণ অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৬তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হবে। সারাদেশের এই উন্নয়নযজ্ঞের কারণেই দেশের মানুষ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে সন্ত্রাস, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, যুদ্ধাপরাধী ও একাত্তরের গণহত্যাকারী এবং তাদের মদদদাতা ও পৃষ্ঠপোষকদের। তাই এক অন্যরকম স্বস্তি, শান্তি এবং সমৃদ্ধির নববারতা নিয়েই গোটা জাতি বরণ করতে যাচ্ছে নতুন একটি বছরকে।
বিদায়ী বছরে অনেকেই চিরবিদায় নিয়েছেন। কিন্তু দিয়েছেও কি খুব কম? এ দৃষ্টিকোন থেকে দেখলে ২০১৯ অনেক কারণেই স্মৃতির পাতায় উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। মহাকালের আবর্তে হারিয়ে গেলেও বিদায়ী বছরটি দেশের মানুষের মনে দাগ কেটে থাকবে বহুকাল, বহু বছর। পাল্টে দিয়েছে অনেক ইতিহাসও।
সব মিলিয়ে বিদায়ী বছরটি ছিল বৈচিত্র্যময়। আজকের গোধূলিবেলায় রক্তিম সূর্য অস্ত যাওয়ার মধ্য দিয়ে হারিয়ে যাবে ঘটনাবহুল এ বছরটি।
এখন নতুন বছর আর নতুন সূর্যের অপেক্ষায় দেশবাসী। অপেক্ষা কেবল মানুষের নিরাপত্তা, শান্তি, স্বস্তি, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসমুক্ত অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বিনির্মাণ এবং সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির দেশ গড়ার। টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের কাছে এ প্রত্যাশা রেখেই আগামীকাল বুধবার থেকে নতুন বছরে, নতুন জীবনে যাত্রা করবে এ দেশের মানুষ। কাল শুরু হবে আরও একটি নতুন বছর ২০২০। বিদায় ২০১৯। বিদায় এক দশক।