কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনা ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম শুরু করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানালেও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কঠোর সমালোচনা করেছেন গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান।
তিনি বলেছেন, আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগের অব্যবস্থাপনার কথা ভেবে আতঙ্কিত হচ্ছি। করোনাকালীন সময়ে স্বাস্থ্য বিভাগে যে ব্যাপক দুর্নীতি এবং সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে যে দুর্বলতা দেখা গেছে তা দেশবাসীকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। তাই এখনই সময় স্বাস্থ্য বিভাগকে একটি শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন নিশ্চিত করা এবং এই বিভাগের দুর্নীতি কঠোর হস্তে দমন করা।
মোকাব্বির বলেন, যে ভ্যাকসিন ভারত কিনেছে মাত্র ২ ডলারে সেই একই ভ্যাকসিন আমাদের কিনতে হচ্ছে একটু চড়া দামে। যা দেশবাসীকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এ বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা আছে কি না, তা সংসদে উত্থাপন করা প্রয়োজন।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনিত ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে মোকাব্বির খান এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, বহুক্ষেত্রেই কিছু সংখ্যক অসৎ আমলা, দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী ও কতিপয় পুলিশ কর্তৃক হেনস্থা এবং সামাজিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। যার কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে। অফিস আদালত সর্বক্ষেত্রই ঘুষ ছাড়া নিয়মতান্ত্রিকভাবে কাজ করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। রাষ্ট্রযন্ত্রের একটি বড় অংশে অসৎ কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের কাছ থেকে উপঢৌকন ছাড়া জনগণ কোনো সেবা পায় না। যোগ্যতা থাকলেও চাকরি পায় না। যা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে।
মোকাব্বির খান বলেন, ধর্ষণ মহামারির আকার ধারণ করেছে। যুবক, বৃদ্ধ, শিশু- কেউ এ থেকে মুক্ত নয়। মাদক চাঁদাবাজি যুব সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। কতিপয় দুর্নীতিবাজ অসৎ ব্যবসায়ীর কারণে প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং হস্তক্ষেপ করেও তা প্রতিরোধ করতে পারছেন না।
তিনি আরও বলেন, অসৎ ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়িয়ে জনজীবনকে বিধ্বস্ত করে তুলছে। প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা ও অসুস্থ রাজনীতি কি এর জন্য দায়ী নয়? আমাদের সমাজে ভয়াবহ অবক্ষয় সব উন্নয়নকে ভঙ্গুর করে তুলছে। দুর্নীতি স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়ে যাচ্ছে। সৎ মানুষেরা সমাজে টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছে।
এ সময় কুষ্টিয়া পৌরসভা নির্বাচনে ম্যাজিস্ট্রেট হয়রানির কথা তুলে ধরে মোকাব্বির খান বলেন, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকালে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মো. মহসীন হাসান কীভাবে কুষ্টিয়ার এসপি এসএম তানভীর আরাফাত কর্তৃক অপমানের শিকার হয়েছেন। পুলিশি নির্যাতনে মেজর সিনহা থেকে একজন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রক্ষা পাচ্ছেন না। সেই জায়গায় সাধারণ মানুষের অবস্থা কী? দেশের জনগণ আজ ভয়ে কথা বলতে চায় না। বিচারের বাণী নিরবে-নিভৃতে কাঁদে। দেশের চুরি-ডাকাতি ধর্ষণসহ মাদক মামলার একটি বড় অংশের মামলা পুলিশ অথবা পুলিশের সহায়তায় কুচক্রীমহল সাধারণ মানুষকে হয়রানি করছে। কোথায় যাবে এ দেশের জনগণ। দেশের মালিক জনগণ আজকে সেই তারাই অসহায়। অথচ আমরা সেই মালিকদের সেবক হয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছি।
তিনি বলেন, গৃহহীনদের ঘরদান কার্যক্রমের মহৎ কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী। অথচ নির্লজ্জ দুর্নীতিবাজরা এখানেও দুর্নীতি করে যাচ্ছে। এটা সঠিক নজরদারিতে না আনলে প্রধানমন্ত্রীর মহৎ উদ্দেশ্য নষ্ট হবে।