উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হোক

30

সরকার প্রতিবছর একটি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করে, সংক্ষেপে যা এডিপি নামে পরিচিত। এডিপির আওতায় বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। এই বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় দেশে যত প্রকল্প চালু থাকবে, সেগুলোতে কোনো অনিয়ম হচ্ছে কি না এসব দেখভালের জন্য আছে সরকারের ‘বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ’। সংক্ষেপে এই বিভাগকে আইএমইডি নামে ডাকা হয়। একজন সচিবের নেতৃত্বে আইএমইডিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি মিলিয়ে ১২০ জন কর্মকর্তা কাজ করছেন। তাঁদের দায়িত্ব হচ্ছে, চলমান প্রকল্পগুলো নিয়মিত পরিদর্শন ও মূল্যায়ন করা। কিন্তু এখানেও রয়েছে অজুহাত। কমসংখ্যক কর্মকর্তা দিয়ে দুই লাখ কোটি টাকার এক হাজার ৬০০টি প্রকল্প পরিদর্শন ও মূল্যায়ন সম্ভব নয়, এই অজুহাতে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। যাকে বলা হয় আউটসোর্সিং। যদিও সরকারের নিয়মে আউটসোর্সিংয়ের কোনো উল্লেখ নেই। একটি পরিপত্র জারি করে আউটসোর্সিং বৈধ করা হয়েছে। আবার এই আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আইএমইডির কর্মকর্তারা নিয়মিত বৈঠক করে সম্মানী ভাতা নিচ্ছেন। নিয়মিত প্রকল্প পরিদর্শন ও মূল্যায়নের সময় না পেলেও নিজেদের অফিসের মধ্যে বসেই মূল্যায়ন বৈঠক করার সময় ঠিকই বের করে নিচ্ছেন কর্মকর্তারা। আর এভাবেই বৈধতার মোড়কে টাকা লুটপাট হচ্ছে আইএমইডিতে। তৃতীয় পক্ষের সঙ্গে চুক্তির সময় আইএমইডি শর্ত হিসেবে উল্লেখ করে প্রকল্পের অনিয়ম ও ত্রুটি তুলে আনতে হবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো প্রকল্পে অনিয়ম ও ত্রুটি খুঁজে পায়নি কোনো আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠান। যদিও এমন অনেক প্রকল্প খুঁজে পাওয়া যাবে, যেগুলো বাস্তবায়নে অনিয়ম ও ত্রুটি হয়েছে। এমন অনেক প্রকল্পের খবর গণমাধ্যমেও এসেছে। আইএমইডির আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠান এসব প্রকল্পের কাজে কোনো ত্রুটি খুঁজে পায়নি। আবার দেখা যাচ্ছে, একই প্রতিষ্ঠান বছরের পর বছর কাজ পাচ্ছে।
প্রতিবছর জাতীয় বাজেটের আকার বাড়ছে। বাড়ছে উন্নয়ন প্রকল্পের সংখ্যা। সে ক্ষেত্রে আইএমইডির বর্তমান লোকবল কম হতেই পারে। এই লোকবল দিয়ে এত বিপুল কর্মযজ্ঞ পরিদর্শন ও মূল্যায়ন সত্যিকার অর্থেই কঠিন হলে আউটসোর্সিং করা যেতেই পারে। কিন্তু তাই বলে কি বৈঠকের নামে বছরের পর বছর এভাবে টাকা নেওয়া সম্ভব? সরকারের টাকা পকেটে ভরতেই কি আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করতে হচ্ছে? এখানেই শেষ নয়। আইএমইডির সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নেওয়া হয়েছে এসএমইসি প্রকল্প। এই প্রকল্পের মেয়াদ বছরের পর বছর বাড়ছে। আবার ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত যে ২৩০টি প্রকল্প বিভিন্ন আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠান মূল্যায়ন করেছে, তার কোনোটিরই সুপারিশ বাস্তবায়ন করেনি কোনো মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। তাহলে এই মূল্যায়নের অর্থ কী?
এসব বিষয় এখন ভেবে দেখার সময়। দেশের উন্নয়নে সরকারের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই। কিন্তু কিছুসংখ্যক কর্মকর্তার পকেট ভারী করার নামে প্রকল্প পরিচালনা দেশের জন্য নিশ্চয়ই কল্যাণকর নয়।